• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ঢাকায় ঢিলেঢালা তল্লাশি, অকার্যকর লকডাউন!

চলমান লকডাউনের পঞ্চম দিনে সোমবার যাত্রাবাড়ি এলাকার যানজট

ছবি: স্টার মেইল

জাতীয়

ঢাকায় ঢিলেঢালা তল্লাশি, অকার্যকর লকডাউন!

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৬ জুলাই ২০২১

দেশে চলমান সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের পঞ্চম দিনে সড়কে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বেড়েছে যানবাহন ও রিকশার সংখ্যা। সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও অধিকাংশ অফিসই খোলা থাকায় দিন যত যাচ্ছে সড়কে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এবারের লকডাউনের প্রথম দিন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল বেশ কঠোর অবস্থানে। কিন্তু ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে পড়ায় অকার্যকর হয়ে পড়ছে কঠোর লকডাউন। 

গতকাল রাজধানীর প্রগতি সরণি, রামপুরা, মালিবাগ, গুলশান, বাড্ডা, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, আগের চারদিনের তুলনায় সড়কে মানুষ, রিকশা, যানবহন অনেক বেড়েছে। শুধু চলছে না গণপরিবহন। এছাড়া সবকিছুই চলছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম। 

গুলশান বাড্ডা লিংক রোডে থেকে গুলিস্তান যাওয়ার জন্য সড়কে অপেক্ষা করছিলেন রাশেদ আহমেদ নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, গত চার দিনের তুলনায় আজ মানুষ, যানবাহন, রিকশার সংখ্যা সড়কে অনেক বেশি। প্রথম তিন দিন ভালোভাবে লকডাউন পালিত হয়েছে, কিন্তু গতকাল থেকে এ সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। আজ থেকে যেহেতু ব্যাংক খুলেছে তাই মানুষের সংখ্যা আরো বাড়বে। এছাড়া আমাদের মতো জরুরি সেবা প্রদানের অফিসগুলো খোলা আছে আগে থেকেই। এসব অফিসগামী মানুষ সকাল সকাল সড়কে ভিড় করেছেন। রামপুরা ব্রিজে অপেক্ষা করছিলেন আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, বিগত চার দিনের তুলনায় আজ মানুষের, যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে।

লকডাউনে মানুষ আর কয়দিন ঘরে থাকবে। তবে অন্যবারের তুলনায় এবারের লকডাউন ভালোভাবে পালিত হচ্ছে। এটা বলতে হবে। এবারের লকডাউনে অন্য যে-কোনোবারের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম মানুষ বাইরে বের হয়েছে। এই জনবহুল শহরে এটাও কিন্তু কম পাওয়া না। যেহেতু গণপরিবহন বন্ধ, আর সব অফিসের নিজস্ব পরিবহনও নেই, তাই মানুষের খুব ভোগান্তিও হচ্ছে। একমাত্র রিকশা ছাড়া অন্য কিছু নেই গণপরিবহন হিসেবে। তবে কর্মজীবী, শ্রমজীবী মানুষ কয়দিন ঘরে বন্দি থাকবে? খাবারের জন্য, জীবিকার জন্য তাদের তো বের হতে হবেই। দিন যত যাচ্ছে সড়কে মানুষ, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে।

একজন রিকশাচালকের চোখে লকডাউন কেমন চলছে, জানতে চাইলে নতুন বাজার এলাকায় রিকশাচালক আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, রাস্তায় মানুষ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যাও। ট্রিপ না পাওয়ায় রিকশাও কম চলত এই কয়দিন। কিন্তু গত দুদিন সড়কে রিকশা অনেক বেড়েছে।

এদিকে রাজধানীর রাসেল স্কয়ার থেকে গাবতলী ব্রিজ পর্যন্ত যেতে পুলিশের মোট পাঁচটি চেকপোস্ট চোখে পড়ে। কোনো চেকপোস্টে পুলিশের ২/১ জন সদস্য ছাতা মাথায় নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন। আবার কোনোটিতে কেউই নেই। কোথাও কোথাও আবার কিছুটা চেকিং।

সকাল ১০টায় রাজধানীর মিরপুর রোড ধরে রাসেল স্কয়ার থেকে গাবতলী ব্রিজ পর্যন্ত এমন চিত্রই দেখা গেছে। অন্যগুলোতে ঢিলেঢালা ভাব থাকলেও কিছুটা কঠোর অবস্থানে গাবতলী পুলিশ চেকপোস্ট। আর রাসেল স্কয়ার চেকপোস্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের যৌথ কার্যক্রম লক্ষ করা গেছে।

গতকাল সোমবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুলেছে। যার ফলে মানুষের চাপ বেড়েছ রাজধানীর সড়কে। গতকাল যে চেকপোস্টে গাড়ির জটলা বেঁধেছিল, এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো দিয়ে গাড়িগুলো শাঁই শাঁই করে বেরিয়ে যাচ্ছে। তবে সড়কে দায়িত্বে থাকা কয়েকটি চেকপোস্টের পুলিশ সদস্যরা বলছেন, কল্যাণপুর-গাবতলীর দিকে সকালের পর হঠাৎ গাড়ির চাপ কমে গেছে। তাই মনে হতে পারে রাস্তায় পুলিশ শিথিলতা দেখাচ্ছে।

মিরপুর সড়ক ঘুরে দেখা যায়, কল্যাণপুর ফুটওভার ব্রিজের নিচের চেকপোস্টে তিন থেকে চারজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। টেকনিক্যাল মোড়ে থাকা চেকপোস্ট আছেন দু-তিনজন সদস্য। এই দুটি চেকপোস্টে কোনো গাড়িকে দাঁড় করিয়ে চেক করতে দেখা যায়নি।

টেকনিক্যাল মোড় পার হয়ে গাবতলীর দিকে যেতে আরো দুটি চেকপোস্ট রয়েছে। তবে সেখানে কোনো পুলিশ সদস্যের দেখা পাওয়া যায়নি। এই সড়কের সর্বশেষ গাবতলী পুলিশ চেকপোস্ট। সেখানে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

গাবতলী থেকে ফেরার পথে মাজার রোড মোড়, টেকনিক্যাল মোড় পুলিশ চেকপোস্টে কোনো চেকিং তৎপরতা নেই। তবে কিছুটা শক্ত অবস্থানে দেখা গেছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে থাকা শেরে বাংলানগর থানার বসানো চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের। আর এরপর রাসেল স্কয়ার মোড়ে দেখা মিলেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ কর্মকাণ্ড। সেখানে বেশিরভাগ গাড়িই চেক করার পর ছাড়া হচ্ছে।

লকডাউনের গতকাল সোমবার পঞ্চম দিনে সড়কে মানুষের উপস্থিতি অনেকটা বেশি। কমবেশি তাদের সবাইকে ম্যাজিস্ট্রেটের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রয়োজনের পাশাপাশি অজুহাতের কমতি ছিল না। ডাক্তার দেখানো, ওষুধ আনতে যাওয়া, রোগী দেখতে যাওয়া, ব্যাংকে টাকা জমা ও তুলতে যাওয়া, দোকানে যাওয়াসহ নানান কারণ নিয়ে বের হচ্ছেন মানুষ। কারণ যৌক্তিক হলে যেতে পারছেন, অন্যথায় গুনতে হচ্ছে জরিমানা।

সড়কে পুলিশ শিথিলতা দেখাচ্ছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধানমন্ডি ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদ আহসান বলেন, ‘পুলিশ কোনোভাবেই শিথিলতা দেখাচ্ছে না। বরং কঠোর অবস্থানে আছে। ব্যাংকগুলো খোলা তাই রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। আমরা দেখেছি ব্যাংকের প্রায় বেশিরভাগ কর্মকর্তারই নিজস্ব গাড়ি রয়েছে। সেগুলো তো আটকে রাখা সম্ভব সম্ভব না। তাই তাদের যেতে দিচ্ছি। না হলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে, আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন না।’

একই প্রশ্নের জবাবে দারুসসালাম ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইত্তেখায়রুল ইসলাম বলেন, ‘সকালের দিকে গাড়ির চাপ কিছুটা বেড়েছিল, দুপুরের দিকে কমেছে। কারণ, আমাদের এই দিকে যাতায়াতটা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেইজড। গাবতলীর পথ দিয়ে যারা যাতায়াত করেন তাদের বেশিরভাগই সাভার-আশুলিয়ার যান। গাড়ির চাপ কম থাকায় বিষয়টি শিথিল হয়েছে মনে হত পারে। তবে আমরা শিথিলতা দেখাচ্ছি না।’

রাসেল স্কয়ার মোড়ে দায়িত্ব পালন করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিদ ফরহাদ শামীম বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলায় আজ সড়কে চাপ বেড়েছে। এদিকে কয়েকটি হাসপাতাল থাকায়, সবাই হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে। এছাড়া ব্যাংকে লেনদেন করতে যাওয়ার কথাও বলে মানুষ। তাদের তো আটকানো যায় না। অন্যদিকে অনেকে ফার্মাসিটিক্যাল ও প্রেসের স্টিকার ব্যবহার করছেন। এসব যানবাহনে যাদের সন্দেহ হচ্ছে, তাদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads