• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

সামনে আসছে আরো কঠিন চ্যালেঞ্জ!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০২১

সারা দেশে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের সপ্তম দিন সড়কে যানবাহনের পাশাপশি লোকসমাগমও ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। নানা অজুহাতে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে রাস্তায় বেরিয়েছেন অনেকেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঢিলেঢালা নজরদারি এড়িয়ে অলিগলির চায়ের দোকানে ছিল জমজমাট আড্ডা। একদিকে করোনা পরিস্থিতি দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, অন্যদিকে বিধিনিষেধ অমান্য করার প্রবণতাও বাড়ছে। এ অবস্থায় রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন চায়ের দোকানে মানুষের ভিড়। কারো মাস্ক নেই। টহল পুলিশের গাড়ি দেখলে দোকান বন্ধ হচ্ছে। ক্রেতারা আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাচ্ছে, কাজের ভান করছে। পুলিশের গাড়ি চলে যাওয়ার পরে আবারো আগের পরিস্থিতি।

কামরাঙ্গীর চরের বিভিন্ন অলিগলিতে দেখা যায় এলোমেলো আড্ডা। চায়ের দোকানগুলোতেও ভিড়।  কোথাও কোথাও গাদাগাদি করে কয়েকজন মিলে গেমস খেলছেন। মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতারা যে যার মতো করে কেনাকাটা করছেন। মুখে নেই মাস্ক। নেই সামাজিক দূরত্বও। পুলিশের গাড়ি এলেই দেওয়া হচ্ছে সিগন্যাল। সাথে সাথে বন্ধ হচ্ছে দোকানপাট। এরপর আবার সবকিছু আগের মতো।

শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদের সড়কে রিকশা-ভ্যানের চাপে যানজট লক্ষ করা গেছে। যাত্রাবাড়ী সড়কে গাড়ি চলাচল বেশি থাকলেও বিজিবি ও পুলিশের তল্লাশি দেখা গেছে। বাইকগুলো যাত্রী পরিবহন করলে মামলার মুখে পড়ছে। আর রিকশায় চলাচলকারী যাত্রীদেরও পড়তে হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে।

দেশের চলমান কঠোর বিধিনিষেধ অমান্য করার ফলে রোগীর সংখ্যা যদি অস্বাভাবিক বেড়ে যায় তাহলে আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এমনকি অক্সিজেন সরবরাহেও চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।

জানুয়ারিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৬২৯ জন। এপ্রিলে সেটি লাখ ছাড়িয়েছিল। জুন মাসে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জনে থেমে ছিল, আর জুলাইয়ের মাত্র সাত দিন অতিক্রান্ত হচ্ছে। সাত দিনের মধ্যে ছয় দিনে ৫৩ হাজার ১৪৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

নাজমুল ইসলাম বলেন, সংক্রমণের উচ্চমুখী এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, জুলাইয়ে রোগী সংখ্যা এপ্রিল ও জুন মাসকে ছাড়িয়ে যাবে। লকডাউন বা বিধিনিষেধ অমান্য করার কারণে রোগীর সংখ্যা যদি অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, তাহলে আমরা আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাব।

তিনি আরো বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে মৃতের সংখ্যা ১০০ এর ওপরে রয়েছে। গত এক সপ্তাহের চিত্র যদি আমরা দেখি, ৩০ জুন ১১৫ জন মারা গিয়েছিলেন, ১ জুলাই ১৪৩ জন, ২ জুলাই ১৩২ জন, ৩ জুলাই ১৩৪ জন, ৪ জুলাই ১৫৩ জন, ৫ জুলাই ১৬৪ জন, ৬ জুলাই ১৬৩ জন এবং গতকাল ৭ জুলাই ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পঞ্চাশোর্ধদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি। এর আগে ঢাকা বিভাগের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি থাকতো। কিন্তু গত কিছু দিন ধরে দেখেছি রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে মৃত্যুর হার স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেছে।

চলমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত পাবলিক হেলথ কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, একদিকে দোকান মালিকরা বলছেন দোকান খুলে দিন। ব্যবসায়ীরা নানা শর্ত নিয়ে হাজির হচ্ছে। এই যদি হয় পরিস্থিতি সবকিছু খুলে দেওয়া হোক, আর কিছু বলার নেই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেনিন চৌধুরী বলেন, এই যে পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে হলেও বাইরে অপ্রয়োজনে বের হওয়া এই ফাঁকি কি মানুষ পুলিশকে দিচ্ছে? তাকে বুঝতে হবে আক্রান্ত হলে সে এবং তার পরিবার সদস্যরা হবে। তাহলে কি এই ফাঁকি নিজেকে দেওয়া হলো না? লকডাউনের কথা উঠলেই জীবন জীবিকার কথা উঠে আসে। সেটি খুবই যৌক্তিক। কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জন্য অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি, কিংবা পারিবারিক কোনো উৎসব-আয়োজন মহামারিকালে আসলে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ছাড়া আর কিছুই না।

গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। সরকারি, বেসরকারি, আধা-সরকারি অফিসের পাশাপাশি শপিং মলসহ বিভিন্ন মার্কেট ও দোকান বন্ধ রয়েছে। কেবল সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার খোলা রাখা হয়েছে। খোলা আছে ওষুধের দোকান। খাবারের দোকান খোলা থাকলেও অনলাইনে অর্ডার করে নিয়ে আসা যাবে। করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা রোধ করতে মানুষ যেন ঘর থেকে না বের হয় সেজন্য নেওয়া হয়েছে এসব উদ্যোগ। তারপরও মানুষকে আটকে রাখা যাচ্ছে না। নানা অজুহাতে ঘরের থেকে বের হতে দেখা যাচ্ছে দিনে-রাতে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads