• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

অভিযান চলবে কারখানায়

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ জুলাই ২০২১

দুর্ঘটনারোধ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের সংস্কার অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। তিন ধাপে এই সংস্কার কাজ শুরু হবে। প্রয়োজনে আইন সংস্কার করা হবে।

এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে সভাপতি করে ২৪ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগির সব শিল্প-কলকারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনে যাবে ওই কমিটির সদস্যরা। পরিদর্শন শেষে সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় গঠিত বহুপক্ষীয় জাতীয় কমিটির সভাপতি সালমান এফ রহমান।

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর ‘বিশেষ ইচ্ছায়’ এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে গুরুতর সমস্যা হিসেবে নিয়েছেন। দ্রুত আমরা কারখানা পরিদর্শন শেষে সংস্কারের রিকমেন্ডেশনগুলো তৈরি করে ফেলব। এরপর স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আলোকে সংস্কার কাজ শুরু হবে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ আগুন লেগেছিলো। এই অগ্নিকাণ্ডে ৫২ শ্রমিকের প্রাণহানি হয়। এ ঘটনার পর বেরিয়ে আসে কারখানাটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য। এর মধ্যে ভবনের নকশা ছিল অনুমোদনহীন। মানা হয়নি ইমারত নির্মাণবিষয়ক বিধি। অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও ছিল চরম অবহেলা। এই ভয়াবহ আগুনের পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি সংস্থা একে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছে। কারখানার নিরাপত্তামান তদারকির দায়িত্বে থাকা এসব সংস্থা বলছে, তাদের কর্মকর্তারা নিয়মিত হাসেম ফুড কারখানাটি পরিদর্শন করেছেন। অথচ এরপরেও সেখানে আগুন নেভানোর সরঞ্জামের অভাবসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা কেন ছিল, সে বিষয়ে কারও পরিষ্কার ব্যাখ্যা নেই। অথচ বিষয়গুলো দেখভাল করার কথা শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বা ডাইফির। তাদের ব্যর্থতার বিষয়গুলোও এখন আলোচনায় আসছে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সিস্টেমে কী কী শর্টফল আছে আমরা এগুলো আগে চিহ্নিত করব। কারণ নতুন করে কাজ করতে হলে অতীতের ভুল ত্রুটি অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে। অনেকগুলোর সরকারি এজেন্সি জড়িত থাকায় পরস্পরের ওপর দায় চাপানোর সুযোগ থাকে। এফবিসিসিআই সভাপতি ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের পরামর্শের আলোকে প্রয়োজনে সব এজেন্সিকে একত্র করে নিরাপত্তা বিষয়ক একটা সিঙ্গেল এজেন্সি করা যায় কিনা সেটাও ভাবা হচ্ছে।

সালমান এফ রহমান বলেন, অতীতের সমস্যাগুলো পর্যালোচনা করেই তারা সামনের দিকে অগ্রসর হতে চান। ডাইফির সমস্যাগুলো পরীক্ষা করা হবে। প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে নতুন আইন নিয়ে আসা হবে। সে ধরনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। হাসেম ফুডসের অগ্নিকাণ্ড দেশের ভাবমূর্তিতে সরাসরি প্রভাব না ফেললেও পরোক্ষভাবে ঠিকই প্রভাব ফেলবে মন্তব্য করে সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা এখন নির্দিষ্ট সময় ধরে এগোব। ফায়ার, স্ট্রাকচার ও এনভায়রনমেন্ট হলো আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়। এর বাইরে শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোও আমরা দেখব।

সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডাকে এই সংস্কার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রাখা হয়েছে।

বিডা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগামী ১৯ জুলাই সরকারি বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তারা। সেখানে এসওপি বা কর্মপন্থা ঠিক করা হবে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এগিয়ে যাব। প্রয়োজনে ডিজিটাল প্ল্যাটফরম তৈরি করে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হবে।

২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসের প্রেক্ষাপটে কারখানা পরিদর্শনে গঠিত হয় বিদেশি ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স। পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় রিমেডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল (আরসিসি) গঠন করে সরকার।

এরপর পোশাক শিল্পে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার কাজ শুরু হয়। ফলে বিশ্বে কারখানার নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশের সুনাম বেড়েছে। কিন্তু পোশাক খাতের এই পরিবর্তনের হাওয়া যে দেশের অন্যান্য শিল্পে পৌঁছায়নি, তার প্রমাণ মেলে হাসেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনায়।

এ প্রসঙ্গ ধরে শ্রম সচিব কেএম আব্দুস সালাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পোশাক শিল্পের দিকে নজর দিতে গিয়ে এর বাইরের কলকারখানার দিকে নজর দেওয়া যায়নি। নারায়ণগঞ্জের এই দুর্ঘটনা নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে নাড়া দিয়েছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, নারায়ণগঞ্জে হাসেম ফুডস ফ্যাক্টরিতে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানি দুর্ভাগ্যজনক। এটি আমাদের দেশীয় ভাবমূর্তির বিশাল ক্ষতি করেছে। আমাদের ব্যবসা যেভাবে বেড়েছে, অর্থনীতি যেভাবে বড় হয়েছে, সেই তুলনায় সরকারি তদারক সংস্থার সক্ষমতা বাড়েনি। এখন এই দিকে নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, অ্যাকর্ড ও অ্যালয়েন্সের অভিজ্ঞতা ও জনবলকে দেশীয় বাজারভিত্তিক শিল্পের সংস্কার উদ্যোগে কাজে লাগানো যেতে পারে। বেসরকারি আরও পরিদর্শন প্রতিষ্ঠানকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) এক প্রজ্ঞাপনে উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

পিএমও জানায়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে শিগগিরই সব শিল্প-কলকারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন করা হবে।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক প্রজ্ঞাপনে উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি গঠনের কথা জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে সব শিল্প কলকারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়।

২৪ সদস্যের এই কমিটিতে সদস্য সচিব করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে।  সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী/ প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকার সংসদ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন/ পৌরসভার মেয়র, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, বাণিজ্য সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, শিল্প সচিব, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের চেয়ারম্যান, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন), গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, এফবিসিসিআই সভাপতি ও বিজিএমইএর সভাপতি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads