• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

গ্রামে খাদ্যপণ্যের দাম বেশি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ জুলাই ২০২১

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, জুন মাসে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এই মাসে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হ্রাস-বৃদ্ধি পর্যালোচনায় বিবিএস বলেছে, মে মাসের তুলনায় জুনে চাল, ব্রয়লার মুরগি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনির দাম বেড়েছে। শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কেন বেশি হয়েছে, এ প্রশ্নের উত্তরে পরিসংখ্যান ব্যুরো মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, আসলে চাল, ভোজ্যতেলসহ আরো কয়েকটি পণ্যের দাম বেশি হওয়ার কারণে জুন মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। তবে, শহরের চেয়ে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কেন বেশি হয়েছে, সেটা আমাকে ভালোভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করে বলতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে বিবিএসের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং ইউং বিভাগের (মূল্য ও মজুরি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করতে বিবিএসের মহাপরিচালক অনুরোধ করেন। এরপর সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তাকে ফোন করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমরা আসলে যখন, যে তথ্য পাই সেটাই প্রকাশ করি। কেন, কখন কোনটা বেড়েছে-কমেছে, সেটা গবেষণা করার কাজ আমাদের নয়। আমরা যেটা পেয়েছি, সেটাই প্রকাশ করেছি। তিনি বলেন, শহরের চেয়ে গ্রামে খাদ্যের দাম কেন বেশি, সেটা এখন সরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসসহ অন্য গবেষকেরা গবেষণা করে বের করতে পারেন। আপনারা সাংবাদিকরাও বের করতে পারেন।

এ ব্যাপারে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইস মনসুর বলেন, শহরের চেয়ে গ্রামে খাদ্যের দাম বেশি, তথ্যটি আসলেই বিস্ময়কর। গ্রামে যে পণ্যটি উৎপন্ন হয়, সেটার দাম ওখানে বেশি, শহরে কম। পরিবহন খরচ লাগে না। তারপরও কেন বেশি হবে বুঝতে পারছি না। এমন হতে পারে, গ্রামের সব পণ্য শহরে চলে আসার কারণে শহর #বাংলাদেশের খবর এলাকায় পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে যায়। অন্যদিকে গ্রামে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় দাম বাড়ে। সে কারণেই শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়ে থাকতে পারে।

করোনাভাইরাস মহামারিতে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ে শেষ হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছর। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর অর্থ হলো, ২০২০ সালের জুন মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২১ সালের জুনে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৫ টাকা ৬৪ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। অর্থবছর শেষ হওয়ার আগের মাস মে-তে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ; এপ্রিলে ছিল ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জুন মাসে মূল্যস্ফীতি শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি হয়েছে। জুনে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর শহরে হয়েছে ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। দেখা গেছে, যেসব খাদ্যপণ্য গ্রামে উৎপাদন হয় তার দাম গ্রামেই বেশি, শহরে কম। সবমিলিয়ে ১২ মাসের গড় হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে খানিকটা বেশি। বাজেটে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচকটি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ছিল সরকারের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গতকাল রোববার মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করে। #বাংলাদেশের খবর বিবিএস সাধারণত মাসের প্রথম সপ্তাহে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করে। লকডাউনের কারণে গত সপ্তাহে অফিস বন্ধ থাকায় এবার সেটি একটু দেরিতে প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

বছরজুড়ে প্রধান খাদ্যপণ্য চালের চড়া দামের কারণে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে বলে অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন। বিবিএসের মহাপরিচালকও একই কারণ বলেছেন।

বিবিএস বলছে, চাল, ভোজ্যতেল, চিনিসহ আরো কয়েকটি পণ্যের চড়া দামের কারণে গত অর্থবছরে দেশের মানুষকে এই বাড়তি খরচ করতে হয়েছে।

সাত বছর পর ২০২০ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ঘর অতিক্রম করে ৬ দশমিক ০২ শতাংশে উঠেছিল। নভেম্বরে অবশ্য সামান্য কমে তা ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশে নেমে আসে। পরের মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচেই ছিল।

জুন মাসে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত দুই খাতেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

মে মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ; এপ্রিলে যা ছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

অন্যদিকে খাদ্যবর্হিভূত খাতে মূল্যস্ফীতি এপ্রিলে ছিল ৫ দশমিক ২২ শতাংশ; মে মাসে হয়েছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

জুন মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। মে মাসে এই হার ছিল ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। জুনে শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। মে মাসে হয়েছিল ৫ দশমিক ২৪ ভাগ।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি সরু চাল (নাজিরশাইল ও মিনিকেট) ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের চাল (পাইজাম) বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকায়। আর মোটা চাল (স্বর্ণা) বিক্রি হয়েছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়।

টিসিবির তথ্যই বলছে, ২০২০ সালের ১৮ জুলাই রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি সরু চাল ৫২ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের চালের কেজি ছিল ৪৪ থেকে ৫২ টাকা। মোটা চালের কেজি ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে থমকে যাওয়া অর্থনীতি সচল #বাংলাদেশের খবর করতে বাজারে বাড়তি মুদ্রাপ্রবাহের কারণে ঝুঁকি থাকলেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads