• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

করোনার মধ্যে নতুন আতঙ্ক ডেঙ্গু

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ২৫ জুলাই ২০২১

কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে ডেঙ্গুর মৌসুম। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। অন্য বছরগুলোর চেয়ে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখন থেকেই পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

বাংলাদেশের তাপমাত্রা সারা বছর অ্যাডিস মশা (ডেঙ্গু) জন্মানোর উপযোগী। তবে বৃষ্টিপাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডিস মশার ঘনত্ব বেড়ে যায়। শীতকালে যখন বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত হয় না, তখনো ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। তবে সংখ্যা কম। মূলত আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হয়। তবে জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এই চারটি মাসকে ডেঙ্গুর মূল মৌসুম বলা হয়। সেই অনুযায়ী এই ডেঙ্গুর মৌসুমে করোনার মধ্যে প্রতিদিনই হাসপাতালে রোগী বাড়ায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নিয়ে চিন্তায় আছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যদিও ঢাকায় ডেঙ্গু সামাল দিতে প্রচার প্রচারণা কিছুটা চোখে পড়ে। কিন্তু ঢাকার বাইরে বিশেষ করে মফস্বল এলাকাগুলোতে এ নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে আসছে। এর মধ্যে ধানমন্ডি, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, মহাখালী ডিএইচওএস, গুলশান, বনানী ও উত্তরা এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছেন। এ অবস্থায় ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দিলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এদিকে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১০৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তির রেকর্ড বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, চলতি বছর এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫৭৪ জন রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪৪ জন ঢাকার বাইরের জেলার বাসিন্দা। মোট শনাক্ত রোগীর মধ্যে এক হাজার ২০২ জনকে চলতি মাসে শনাক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ হলো দ্রুত ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটছে।

গত মাসে ২৭২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছিল। আর মে মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ছিল ৪৩ জন। তবে হাসপাতালে ভর্তি অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন। ৪২২ জন এখনো ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনজন ঢাকার বাইরের হাসপাতালে এখনো ভর্তি আছেন। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। ঢাকার ৪১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং বিভিন্ন বাংলাদেশের খবর জেলা থেকে পাঠানো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এসব তথ্য দিয়েছে। অন্যদিকে কঠোর লকডাউনের অজুহাতে আগামী দুই সপ্তাহ খোলা জায়গা ও নির্মাণাধীন স্থাপনায় কীটনাশক ছিটানো বন্ধ রাখলে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।

তিনি বলেন, জুনের শুরুতে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি দেখেছি। সেই অনুযায়ী জুলাই মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ার কথা বলা হয়েছিল, বেড়েছে। এ সংখ্যা আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে আরো বাড়বে। এছাড়া, লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বাংলাদেশের খবর স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ না হওয়ায় সেগুলো মশার প্রজননস্থল হিসেবে কাজ করবে। ফলে আগামী মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আরো বাড়বে। এ অবস্থায় খোলা জায়গা, বাসার ছাদ ও নির্মাণাধীন স্থাপনায় কীটনাশক ছেটানো ও জরুরি পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গু রোগী নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

জিওলজিকাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি কীটতত্ত্ববিদ ডা. মনজুর চৌধুরী বলেন, মূলত অ্যাডিস ইজিপ্টি ও অ্যাডিস এলবোপিকটাস ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটায়। অ্যাডিস ইজিপ্টিকে গৃহপালিত ও নগরের মশা বলা হয়। এটি মানুষের বাড়ি এবং বাড়ির আশপাশে জন্মাতে এবং থাকতে পছন্দ করে। অ্যাডিস ইজিপ্টি ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ডেঙ্গু বিস্তারে ভূমিকা রাখে। অ্যাডিস এলবোপিকটাস ডেঙ্গু বিস্তারে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভূমিকা রাখে। রাজধানীর গাছপালা কমে যাওয়ায় অ্যাডিস এলবোপিকটাস মশা কমে গেছে এবং অ্যাডিস ইজিপ্টি বেড়ে গেছে। 

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এখনই মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয় তাহলে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে। এডিস মশার বিস্তারের মাত্রা এখনো কম বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার এটাই সঠিক সময়। বর্ষায় এটি আরো ছড়িয়ে পড়লে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে উঠবে বলে তিনি সতর্ক করেন।

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, সারা দেশে এবারের ঈদের আগে-পরে প্রায় কোটি মানুষ স্থান পরিবর্তন করছেন। এটা ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার জন্য বেশি দায়ী হতে পারে। ঢাকা থেকে যারা গ্রামে যাচ্ছেন তাদের একটি অংশ ডেঙ্গুর ভাইরাস নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন। শতকরা ৫০ ভাগ ডেঙ্গু আক্রান্তের তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। আর যারা আক্রান্ত হন তাদের মধ্যে দুই থেকে পাঁচ ভাগ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এখন এই উপসর্গবিহীন ডেঙ্গু আক্রান্তরা ঢাকা থেকে গ্রামে গেলে তাদের যদি স্থানীয় এডিস মশা কামড়ায় তাহলে ওই ভাইরাস অন্যের শরীরেও ছড়িয়ে পড়বে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার যা অবস্থা তাতে স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লে তা জটিল আকার ধারণ করবে। আমরা ঢাকার বাইরে থেকে এখন অনেক রোগী পাচ্ছি যারা আইসিইউ সাপোর্টের অভাবে ঢাকায় এসেছেন। আবার রোগীদের প্লাটিলেট দেওয়ার ব্যবস্থায় জেলা পর্যায়ে নেই বললেই চলে। ফলে আমরা আশঙ্কার করছি ঈদ পরবর্তী বাংলাদেশের খবর পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্তৃপক্ষ জানায়, ডেঙ্গুর জন্য তারা আলাদা করে কোনো কর্মসূচি নিচ্ছে না। এই সময়টাই ডেঙ্গুর মৌসুম। যার কারণে তারা আগে থেকেই বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে গত বছর যাদের বাসা-বাড়িতে অ্যাডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে ডাটাবেজ অনুযায়ী তাদের সতর্ক করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি যেন কোনোভাবে জমে না থাকে এ জন্য তাদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন স্প্রে চলমান রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads