• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ভ্যাকসিন নিয়ে জটিল সমীকরণ

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ২৬ জুলাই ২০২১

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বর্তমানে যেসব ভ্যাকসিন বিশ্বে তৈরি হচ্ছে তার কার্যকারিতা সর্বোচ্চ এক বছর। তাই প্রতি বছর গ্রহণ করতে হবে ভ্যাকসিন। এখন বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে সরকার যেভাবে দেশের নাগরিকদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিচ্ছে প্রতি বছর তা সম্ভব হবে না। এমন মত দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, সরকার প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা এবং প্রতি মাসে এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে ১৪ কোটি মানুষকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় দেড় বছর। আর এ বছর যারা টিকা গ্রহণ করবেন তাদের এক বছর পর নতুন করে টিকা গ্রহণ করতে হবে। এদিকে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও আক্রান্তের পাশাপাশি দু-একজনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন গ্রহীতারা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন। ফলে তারা নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। সব মিলিয়ে ভ্যাকসিন নিয়ে নানা জটিল সমীকরণ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জোট ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস্ অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন-গ্যাভি’র সদস্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজামউদ্দিনের মতে, যদি ১২ মাসের মধ্যে সবাইকে টিকা দেওয়া না যায়, তাহলে যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন, তারা পরবর্তী বছরে নতুন করে ঝুঁকিতে পড়বেন।

তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এখন যারা টিকা নিয়েছেন, এক বছর পর তাদের টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকবে না। এর ফলে তাদের নতুন করে টিকা গ্রহণ করতে হবে, যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়টির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সুতরাং সরকারকে ভ্যাকসিন প্রাপ্যতা আরো দ্রুত নিশ্চিত করা দরকার। কারণ এখন বিশ্বে যেসব ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর মেয়াদ আগামী ১ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তবে নতুন ভ্যাকসিনের উৎপাদনও শুরু হয়েছে। সেগুলোও হয়তো পাওয়া যাবে।’

ডা. নিজামউদ্দিন মনে করেন, সরকারের পক্ষে দেশের সব মানুষকে প্রতি বছর বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। কারণ এতে প্রতি বছর বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হবে। তাই সরকারকে দেশেই দ্রুত ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে ১০ বছর যদি ধরা হয় এবং এই ১০ বছরে প্রতি বছর যদি ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনতে হয় এতে সরকারকে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে ভ্যাকসিনের পেছনে। কিন্তু সরকার এভাবে ভ্যাকসিন কিনে সামলাতে পারবে না। তাই এখন থেকেই সরকারকে ভ্যাকসিন উৎপাদন নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। বাংলাদেশে এই কাজটা করতে সময় লাগবে না। ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব।’

সরকার গত জানুয়ারিতে তিন পর্যায়ে মোট ৫ ধাপে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে। সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকাদের অগ্রাধিকার দিয়ে প্রথম পর্যায়ে  স্বাস্থ্যকর্মী এবং সম্মুখ সারিতে থাকা কর্মী এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল যেসব রোগীকে তাদের টিকা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে থাকবে বয়স্ক, স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে এমন বয়স্ক মানুষ, শিক্ষাকর্মী, জনপরিবহনের কর্মীরা।

যার মধ্যে প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে ৩ শতাংশ বা ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনকে টিকা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে ৭ শতাংশ বা এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জনকে টিকা দেওয়া হবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি ধাপে ১১-২০শতাংশ বা এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ ভ্যাকসনি পাবেন। তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ে মোট দুটি ধাপে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১-৪০ শতাংশ বা ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজারের বেশি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৪১-৮০ শতাংশ বা ৬ কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে।

সব মিলিয়ে ৮০ শতাংশ জনগণকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে ১৯২ দিন সময় লাগবে বলে পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে টিকা পাওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরির প্রেক্ষাপটে সরকারের পরিকল্পনা ব্যাহত হয়।

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রতি মাসে এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া সরকার এ পর্যন্ত ২১ কোটি ডোজ টিকার ব্যবস্থা করতে পেরেছে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কনভেনশন সেন্টারে নির্মাণাধীন ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান।

ভ্যাকসিনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি বৈঠক হয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যাচাই করেছি আগামী দিনগুলোতে কোন দেশ থেকে কত ভ্যাকসিন পাব। সব মিলিয়ে আমাদের হিসাবে ২১ কোটির মতো ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা আছে। এই ২১ কোটি ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা, রাখার ব্যবস্থা এবং জনবলের যে ব্যবস্থা সেই পরিকল্পনা আমরা করেছি।’

এছাড়া দেশে সবমিলিয়ে ৮ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাপমাত্রা সেনসিটিভ ভ্যাকসিনও প্রায় ৩০ লাখ সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। আরো কিছু ফ্রিজের অর্ডার করা হয়েছে। সেগুলো আসলে এই তাপমাত্রা সেনসেটিভ ভ্যাকসিন সংরক্ষণের ব্যবস্থাও সব মিলিয়ে কোটির কাছে চলে যাবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্যাকসিন নিয়ে আরো বেশি তৎপর হওয়া প্রয়োজন। নইলে বিরূপ প্রভাব দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়বে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads