• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

কাল থেকে খুলছে শিল্পকারখানা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ জুলাই ২০২১

দেশে করোনাভাইরসের সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে আগামীকাল রোববার থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খোলা রাখার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। যদিও পরিস্থিতি বিবেচনায় বিধিনিষেধের মেয়াদ আরো বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বিধিনিষেধ ঘোষণার পর থেকে তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের শিল্প-কারখানা খুলে দিতে সরকারের উচ্চ মহলে বারবার অনুরোধ করছিলেন শিল্পমালিকরা। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে রপ্তানিমুখী কারখানাকে আগামীকাল সকাল ৬টা থেকে বিধিনিষেধের আওতাবর্হিভূত রাখার সিদ্ধান্ত জানায়।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সুপারিশ করলেও সরকারের তরফে এখনই এই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এখনো হাতে সময় আছে। সরকার এ বিষয়ে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে পারে।

এর আগে গত ১৫ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান ব্যবসায়ীরা। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে চিঠিও দেন তারা।  চিঠিতে পোশাকশিল্প মালিকরা বলেছেন, ‘ঈদের ছুটি সংক্ষিপ্ত করে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো যত দ্রুত সম্ভব ঈদের পরে খুলে দিলে দেশের রপ্তানি খাত বহুমুখী বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকে রক্ষা পাবে।’ কিন্তু করোনার তীব্র সংক্রমণের মধ্যে তাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি সরকার। তার দুইদিন পর গত বৃহস্পতিবার আবারো গার্মেন্টসসহ সব ধরনের শিল্প-কারখানা খুলে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানায় ব্যবসায়ী নেতারা।  এরপর গতকাল সন্ধ্যায় উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে রপ্তানিমুখী সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রোববার অর্থাৎ ১ আগস্ট ভোর ৬টা থেকে রপ্তানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা আরোপিত বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত রাখা হলো। ঈদের আগে অপর এক প্রজ্ঞাপনে খাদ্য, চামড়া ও ওষুধশিল্পকে বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত রাখার কথা জানায় সরকার।

এদিকে, সেনা টহল ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাবাহিনীর তৎপরতার পরও বাইরে বের হচ্ছে মানুষ। লকডাউন ভেঙে দেশের বিভিন্ন জেলায় হাঁটবাজারে ভিড় করছে তারা। ফলে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মানায় এখনো রয়ে গেছে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি। এর মধ্যে চলছে সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচির জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ। 

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর বাংলাদেশে গত ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন এলাকায় বিধিনিষেধও আরোপ করে। এরপরও সংক্রমণের মাত্রা না কমায় সরকারের তরফে সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। গত ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। তবে ঈদুল আজহার কারণে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। এরপর গত শুক্রবার ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোরতম বিধিনিষেধ আবার জারি করে সরকার। এ লকডাউন চলবে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত। এই বিধিনিষেধের আওতায় সরকারি, বেসরকারি অফিস, শিল্প-কলকারখানা গণপরিবহন, দোকানপাট, শপিংমল যেমন বন্ধ রয়েছে, তেমনি সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধ আছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। এদিকে আগামী ৫ আগস্টের পরও চলমান লকডাউন বহাল চায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সমপ্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ সুপারিশ করেছে তারা।  গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, লকডাউনের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কথা বলছে। তবে আমরা লকডাউন বজায় রাখতে বলেছি। লকডাউনে আমাদের টিকাদানে কোনো সমস্যা হবেনা। সব খুলে দিলে সংক্রমণ আরো বাড়বে। সংক্রমণ বাড়লে তো আমরা রোগীদের হাসপাতালে জায়গা দিতে পারবো না। 

তিনি বলেন, মাসে এক কোটি টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। টিকার প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রতি মুহূর্তে পরিকল্পনাটি পরিবর্তন করা লাগতে পারে। আমাদের লক্ষ্য অধিক টিকা দেওয়া। এখন ক্যাম্পেইনে টিকাদানের বিষয়ে প্রস্তুতির প্রশিক্ষণ চলছে। সারা দেশে বিভিন্ন ব্লক করে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে অনলাইনে প্রশিক্ষণ চলছে। আগামী ৬ তারিখ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ চলবে। ৬ তারিখ স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত আলোচনা করবেন গণটিকাদান ক্যাম্পেইন নিয়ে।   

গ্রাম পর্যায়ে এনআইডি দিয়ে টিকাদানে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হতে পারে উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, বিশৃঙ্খলা কিছুটা হতেই পারে। আমরা সেজন্য স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চেয়েছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে এ বিষয়ে অনলাইনে মিটিং করবেন।

অন্যদিকে, লকডাউনের মধ্যে বিভিন্ন বন্ধ মার্কেট ও দোকানে চলছে ‘বিকল্প’ লেনদেন। রাজধানীতে মোবাইল ফোন বিক্রি ও মেরামতের অন্যতম বড় মার্কেট মোতালেব প্লাজা। চলমান লকডাউনে বন্ধ থাকলেও সকাল ১০টার পর থেকেই এই মার্কেটের সামনে দোকানের কর্মচারীদের আনাগোনা দেখা যায়। নতুন মোবাইল ক্রয়-বিক্রয় কিংবা মোবাইল সার্ভিসিং চলছে এখানে। 

আবার আবাসিক এলাকা কিংবা পুরান ঢাকার সারি সারি দোকানে নেওয়া হয়েছে আরেক কৌশল। শংকর, মোহাম্মদপুর, মিরপুরের নানা এলাকা ঘুরে দেখা যায় দোকানের শাটার অর্ধেক খোলা থাকে। কোনোটা পুরো বন্ধ। কিন্তু দোকানের সামনে বা আশপাশে রয়েছেন দোকানি। ক্রেতা দেখলে প্রয়োজন জেনে নিয়ে টুপ করে দোকানের ভেতর থেকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন সদাই। একদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ, আরেকদিকে জীবিকার তাগিদে মানুষের এই চোর-পুলিশ খেলা।

এদিকে বৈরী আবহাওয়ায়ও বিধিনিষেধ তোয়াক্কা না করে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন শত শত মানুষ। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে ফেরিতে জরুরি যানবাহন ছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়ি ও মানুষ উঠতে দেখা গেছে। ঘাটে বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়াঘাটে আসা ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ রয়েছে। ঘাট এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও যাত্রীরা নানা অজুহাত দেখিয়ে ঢাকায় রওনা হচ্ছেন। তবে ঘাট ও ফেরিতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি কাউকে। ফেরি থেকে নেমে ছোট-বড় যানবাহনে ভেঙে ভেঙে যাত্রীরা রওনা হচ্ছেন গন্তব্যে। এতে তাদের গুনতে হচ্ছে দুই তিনগুণ বেশি ভাড়া।

এছাড়া গতকাল সকালে গাবতলী ও আমিনবাজার ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি এড়িয়ে পায়ে হেঁটে, রিকশা, ভ্যানে করে ঢুকছে মানুষ। এ অবস্থায় সংক্রমণ আসলে কমবে না বলে শঙ্কা জনস্বাস্থ্যবিদদের। তারা বলছেন, যাদের জন্য এতো বিধিনিষেধ তারাই যদি বিষয়ের গুরুত্ব না বুঝতে চান তাহলে সবাই মিলেই বিপদে পড়তে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads