• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে ২১ বছর আত্মগাপনে

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

নাম-পরিচয় পাল্টে ফেলেই র‍্যাবের হাতে ধরা রওশন

মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে ২১ বছর আত্মগাপনে

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ২০ আগস্ট ২০২১

বহুল আলোচিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ হত্যাসহ একাধিক হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রওশন ওরফে আলী ওরফে উদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। পরিচয় গোপন করে ২১ বছর এই আসামি পালিয়ে ছিল রাজশাহীতে।

১৯৯৯ সালে এই হত্যাকাণ্ডের পরে সে রাজশাহীতে গিয়ে নিজের নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে গাজীপুরের ঠিকানায় উদয় মণ্ডল নামে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। রাজশাহীতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসের জন্য সে গরুর খামার তৈরি করে। র্যাব দাবি করছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রওশন ছিল একজন সিরিয়াল কিলার। কাজী আরেফ ছাড়াও স্থানীয় চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আরো কয়েকজনের হত্যায় অংশগ্রহণ ও পরিকল্পনার সঙ্গেও তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এলিট ফোর্সটির লিগ্যাল আ্য্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে, বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানাধীন ভারালীপাড়া এলাকা থেকে মো. রওশন ওরফে আলী ওরফে উদয় মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলায় একটি সভা চলাকালে প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তদের অতর্কিত গুলি বর্ষণে কাজী আরেফসহ পাঁচজন নিহত হন। ওই ঘটনায় দৌলতপুর থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় ২৯ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা দায়রা জজ আদালত ১০ জন আসামিকে মৃত্যুদ্ল এবং ১২ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন।

আসামিরা নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে। ২০০৮ সালের ৫ আগস্ট উচ্চ আদালত ৯ জন আসামির ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে বাকি ১৩ জনকে খালাস দেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি তিনজন আসামির ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়। এছাড়া একজন আসামি কারাগারে মারা যান। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অপর ৫ আসামি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে র্যাব উদ্যোগী হয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে।

গ্রেপ্তারকৃত রওশনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। এছাড়া সে আরো কয়েকটি হত্যাকান্ড, সহিংসতা ও ডাকাতির সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে।

রওশন স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা শুরু করে রাজবাড়ীস্থ একটি কলেজ থেকে বিএ পাস করে। এরপর ১৯৯২ সাল থেকে সীমান্তবর্তী চোরাচালান, হাট ইজারাসহ বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজে সম্পৃক্ত হয়। এসব কাজে সে এলাকায় সন্ত্রাসী চক্র গড়ে তোলে। যাদের সহযোগিতায় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করত। তার সাথে চরমপন্থি দলের সখ্যও তৈরি হয়। ১৯৯৮ সাল পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়। এ সময় মাঝে মধ্যে গা ঢাকা দিতে রাজশাহীতে অস্থায়ীভাবে অবস্থান শুরু করে।

রাজশাহীতে পরিচয় গোপন করতে ‘আলী’ নামে পরিচয় দিত। এছাড়া রাজশাহীতে তার আদি নিবাস গাজীপুর বলে সবাইকে জানাতেন। প্রাথমিক পর্যায়ে সেখানে একটি গরুর খামার স্থাপন করে। পরবর্তীতে জমি কেনা-বেচার ব্যবসায় যুক্ত হয়। এভাবে ধীরে ধীরে রাজশাহীতে স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলে। রাজশাহীতে অবস্থানকালে ‘উদয় মণ্ডল’ নামে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। তবে নিজ এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। প্রভাব বিস্তার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে মাঝেমধ্যেই নিজ এলাকায় যেত।

কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সে জানায়, ওই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ছাড়াও সমন্বয় এবং পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। এছাড়া চেয়ারম্যান বাকী ও স্থানীয় আমজাদ হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও পরিকল্পনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। তার নামে ২০০৫ সালে গাংনীতে একটি ডাকাতি মামলাও রয়েছে।

র্যাব জানায়, ১৯৯৯ সালের ১৩ এপ্রিল চেয়ারম্যান আব্দুল বাকীকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের তেরাইল কলেজ সংলগ্ন এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে রওশন। চেয়ারম্যান বাকী তার ছেলে আবদুল্লাহ বাশারকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে যাওয়ার পথে রওশন ও তার সহযোগী অন্য একটি মোটরসাইকেলযোগে তাদের পথরোধ করে। এরপর আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে প্রথমে চেয়ারম্যান বাকীকে এবং পরে চেয়ারম্যানের ছেলে আবদুল্লাহ বাশারকে গুলি করে। ঘটনাস্থলে চেয়ারম্যান বাকী নিহত হন। তার ছেলে আবদুল্লাহ গুরুতর আহত হন। এ হত্যাকাণ্ডে বিচারকার্য শেষে রওশন আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

রওশন আলী ২০০০ সালের ২১ জুন স্কুলশিক্ষক আমজাদ হত্যা মামলার ১ নম্বর চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি। এ হত্যাকাণ্ডেও সে তার সহযোগীসহ পথিমধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। প্রকাশ্যে স্কুলশিক্ষককে গুলি করে হত্যা করে।

র্যাব জানিয়েছে, রওশন বিভিন্ন মামলার মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত একজন দাগী ও কুখ্যাত পলাতক আসামি। সে আত্মগোপন ও গা ঢাকা দেওয়ার কৌশলে হত্যাকা্লসহ ডাকাতি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত। সে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা, অর্থ, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ ও এলাকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ রাখা ইত্যাদি অপরাধগুলো সংঘটিত করেছে বলে জানায়। কাজী আরেফ, চেয়ারম্যান বাকী, স্কুলশিক্ষক আমজাদ ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads