• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
কোন পথে দ্বন্দ্বের সমাধান

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

মাঠ প্রশাসনে ক্ষমতার লড়াই

কোন পথে দ্বন্দ্বের সমাধান

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ২৩ আগস্ট ২০২১

বেশ কিছুদিন ধরে চলছে জনপ্রতিনিধিদের সাথে আমলাদের দ্বন্দ্ব। সম্প্রতি এমন কয়েকটি দ্বন্দ্ব নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। আমলা এবং রাজনীতিকদের দ্বন্দ্ব নিয়ে বিতর্ক হয়েছে খোদ জাতীয় সংসদেও। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও আমলা উভয়ই আইনসভার সদস্য। কিন্তু যখন ক্ষমতা ও মর্যাদার প্রশ্ন আসে, তখনই কে বড়, কেন বড়, তা নিয়ে শুরু হয়, মর্যাদা ও ক্ষমতার লড়াই। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে দ্রুত এ ধরনের দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান বিশ্লেষকদের।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমলাতন্ত্র এবং রাজনৈতিক দল আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার দুই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। উভয়ই সরকারের নির্বাহী কর্তৃত্বের মালিক-মোক্তার। তবে একটি স্থায়ী, অপরটি অস্থায়ী। আমলাতন্ত্র মেধা-মননের পরীক্ষা দিয়ে রাষ্ট্রের সেবায় নিয়োজিত হয়। আর রাজনৈতিক দল নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে শাসনের জন্য নির্বাচিত হয়। সুতরাং আমলা এবং রাজনীতিকরা কার্যপরম্পরায় রাষ্ট্রব্যবস্থায় একত্রিত, সমন্বিত এবং স্থিত হন। স্বার্থ ও কার্যক্রমের নিকট অবস্থান সত্ত্বেও কখনো কখনো একে অন্যের বৈরী হয়ে দাঁড়ান। তবে এই বৈপরীত্য সত্ত্বেও তারা রাষ্ট্রব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। তাদের পারস্পরিক সম্পর্কে বিন্যস্ত হয় রাষ্ট্রের কার্যক্রম। সেভাবেই নির্ণীত হয় সাফল্য-ব্যর্থতার দায়ভার। ফলে জনপ্রতিনিধি ও আমলা দ্বন্দ্বের জের ধরে মাঠ প্রশাসনে যে গতিতে কাজ হওয়ার কথা, তাতে বাধা সৃষ্টি হয়।

সমপ্রতি বরিশাল সদর উপজেলা ইউএনও মুনিবুর রহমানের বাসভবনে সিটি মেয়র সেরিনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থকদের হামলার ঘটনা সারা দেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে ওই ঘটনার সূচনা হয় ইউএনওর কার্যালয়ের দেয়ালে ব্যানার ফেস্টুন অপসারণকে কেন্দ্র করে। বুধবার রাতে মেয়রসমর্থক ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সদর উপজেলা কমপ্লেক্সের মধ্যে ময়লাবর্জ্য রাখার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পরের দিন (১৯ আগস্ট) পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। একটির বাদী হন ইউএনও নিজে। অন্যদিকে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বরিশাল কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জামাল বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করে। পুলিশের দায়ের করা মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের আরো ৯৪ নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল রোববার এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরিশালের ইউএনও মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

বরিশাল জেলার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে গতকাল এ আবেদন করেন বরিশালের প্যানেল মেয়র-২ রফিকুল ইসলাম খোকন ও সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার। প্যানেল মেয়র র‌ফিকুল ইসলামের করা মামলার আবেদনে ইউএনও মু‌নিবুর রহমান, কোতোয়ালি মডেল থানার ও‌সি নুরুল ইসলাম, এসআই শাহজালাল ম‌ল্লিক ও ইউএনওর বাসভবনে দা‌য়িত্বরত আনসার সদস্যদের বিবাদী করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী প্রকাশ্য সভায় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসককে হুমকি দিয়ে ছিলেন। তা নিয়ে সোস্যাল মিডিয়াসহ সারা দেশে বেশ আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। নিক্সন চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ওই জেলা প্রশাসক শেখ হাসিনার চোখ ফাঁকি দিয়ে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে নৌকার কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছেন, পিটিয়েছেন। ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিক্সন চড়াও হন স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার ওপর। নিক্সন চৌধুরী ও চরভদ্রাসনের ইউএনও জেসমিন সুলতানার মোবাইলে কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হয়।

অডিওতে নিক্সন অশ্রাব্য ভাষায় ইউএনওর সঙ্গে কথা বলেন। নিক্সন চৌধুরী ইউএনওকে বলেন, ‘আপনার এসি ল্যান্ড আমার লোককে গাড়িতে তুলে নিয়েছে। ওরে দালালি করতে মানা করেন। সিগারেট খাওয়ার জন্য ওকে ধরছে, আপনি ওকে ছাড়তে বলেন। আমি আসতাছি চরভদ্রাসন, পাঁচ মিনিট সময় দিলাম। এর মধ্যে ছেড়ে না দিলে উপজেলা ঘেরাও করব।’ 

সম্প্রতি সিলেট বিভাগের একটি জেলায় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সেখানকার একজন সংসদ সদস্য মাঝখানের চেয়ারে বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক ওই সভার সভাপতি থাকায় তিনিই মাঝখানের চেয়ারে বসেন। সঙ্গত কারণেই সংসদ সদস্যকে পাশের চেয়ারে বসতে হয়েছিল। এর জের ধরে ওই জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সংসদ সদস্যদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যার প্রভাব এলাকার উন্নয়নের সব কাজের ক্ষেত্রেই পড়তে থাকে।

অন্যদিকে আমলা এবং রাজনীতিকদের এ দ্বন্দ্ব নিয়ে গত ২৮ জুন সংসদ অধিবেশনেও বেশ বিতর্ক হয়েছে। ওই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা বলেছেন, দেশে এখন রাজনীতি নেই। দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। সংসদ সদস্যদের অভিযোগ, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে সরকার আমলাদের গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি।

সংসদীয় ওই আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রবীণ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মাফ করবেন, কথা বলাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত হবে জানি না, এখন আমাদের জেলায় জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মানুষ মনে করে-আমরা যা দিই, এটি প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই দেন। অথচ তারা কর্মকর্তা, তারা কিন্তু যানই না। যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে (তার এলাকায়) তিনি এখন পর্যন্ত যাননি। এটি একটি রাজনৈতিক সরকার এবং রাজনীতিবিদদের যে কর্তৃত্ব কাজে সেটা কিন্তু ম্লান হয়ে যায়।

বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, আইন মেনে কাজ করলে তাদের মার খেতে হবে। এজন্য নির্ধারিত কাজকে পাশ কাটিয়ে উপজেলা ও জেলায় কর্মকর্তারা সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও মানবসেবার কাজে বেশি করে নজর দেন। এর বিপরীতে রাজনীতিকরা ভাবছেন, কর্মকর্তারা যদি সরকারি কাজ বাদ দিয়ে সরাসরি জনসেবা করেন তাহলে দেশে আর রাজনীতিবিদের দরকার নেই। কারণ জনপ্রতিনিধিদের অনেক কিছু ছাড় দিয়েই জনসেবা করতে হয়। কিন্তু আমলার এ ধরনের কোনো ছাড় দিতে চায় না।

সম্প্রতি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য জাকির আল ফারুকী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এই গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেন। তার অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল-‘নেক্সাস বিটুইন পলিটিক্যাল পার্টি অ্যান্ড ব্যুরোক্র্যাসি ইন বাংলাদেশ : এ পলিটিক্যাল স্টাডি’। গবেষক সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে বিষয়টি উপস্থাপন করেন। আমার তত্ত্বাবধানে কাজটি সম্পন্ন হয়। গণমাধ্যমের আলোচনার সূত্রে বিষয়টির প্রাসঙ্গিকতা অনুভূত হয়।

গবেষক এক্ষেত্রে তিনটি হাইপোথিসিস বা প্রকল্প অনুমান নির্ধারণ করেন। এগুলো হলো- ক. বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে বিরাজিত আমলা-রাজনীতিক সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ; খ. আমলা-রাজনীতিক সম্পর্কের প্রভাবকগুলো নির্ধারণ করা; গ. উভয়পক্ষের অনুঘটকদের মতামতের বাস্তবতা অনুসন্ধান।

গবেষক বিভিন্ন তত্ত্ব, তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, সবসময়ের ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদরা আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেন। সবসময়ে সরকারি দল আমলাদের বাছাই বা নির্বাচন, পদোন্নতি ও পদায়নে প্রভাব রাখেন। তাদের আনুগত্য ষোলআনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য শিক্ষাজীবনের রাজনৈতিক পরিচয় বা অংশগ্রহণের খোঁজ নেন।

এছাড়া পারিবারিক পরিচয়, বৈবাহিক অবস্থান, আত্মীয়তা, সামাজিক সম্পর্ক ও জীবনপদ্ধতির খোঁজ নেওয়া হয়। এর বিপরীতে আমলারা বা হবু আমলারা অনুকূল রাজনৈতিক দলের নৈকট্য অর্জনে সচেষ্ট হন। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের শরণাপন্ন হন। এভাবে তারা তাদের সার্ভিস লাইফ নিশ্চিত, নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করার চেষ্টা করেন। যেহেতু ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক পরিচয়কে মুখ্য করে তোলেন, তাই আমলারা অতীতে যাই করুন না কেন ক্ষমতাসীনদের সাথে আরো নৈকট্য হাসিলের চেষ্টায় লালায়িত থাকেন। তারা তাদের মতো করে কথা বলেন। এই গবেষণার সমর্থনে কয়েক মাস আগে কুষ্টিয়ার এক এসপির বক্তব্য উদাহরণ হিসেবে টানা যায়।

গবেষণায় জাকির আল ফারুকী আরো বলেন, অনেক সময় শীর্ষস্থানীয় আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনীতির ভাষায় কথা বলেন। কর্মকর্তারা বিভিন্ন কৌশল ও কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে ধারণ করে আনুগত্যের প্রমাণ দিতে চান। তারা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পেশাগত উৎকর্ষতার বদলে দলীয় পরিচয়কে প্রাধান্য দেন। এভাবে আমলারা পেয়ে যান অবাঞ্ছিত সুযোগ। একইভাবে নিরপেক্ষতা, সততা ও সাহসিকতার জন্য বিরোধী কর্মকর্তারা পুরস্কৃত না হয়ে বরং তিরস্কৃত হন। চাকরিচ্যুতি, ওএসডি, হয়রানি ও মর্যাদাহীন পদায়ন করে তাদের অপমান ও অবমূল্যায়ন করা হয়। অনেকে পদত্যাগ করে আত্মসম্মান রক্ষার চেষ্টা করেন। এ ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে পেশাগতভাবে আমলাতন্ত্রের দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সম্মাননার অবসান ঘটে। এসব কারণে আমলাতন্ত্রে অসন্তোষ, ক্ষোভ ও হতাশার প্রসার ঘটে। ফলে সার্বিকভাবে জনপ্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, আমলা এবং রাজনীতিকরা কার্যপরম্পরায় রাষ্ট্রব্যবস্থায় একত্রিত, সমন্বিত এবং স্থিত হন। স্বার্থ ও কার্যক্রমের নিকট অবস্থান সত্ত্বেও কখনো কখনো একে অন্যের বৈরী হয়ে দাঁড়ান। তবে এই বৈপরীত্য সত্ত্বেও তারা রাষ্ট্রব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। তাদের পারস্পরিক সম্পর্কে বিন্যস্ত হয় রাষ্ট্রের কার্যক্রম।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই এ দেশে আমলাতন্ত্রের দলীয়করণে প্রবৃত্ত হয়। এখন আমলাদের ক্ষমতার দাপটে প্রশাসন স্থবির হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্র, সরকার ও দলের চিরায়ত সীমারেখার অবসান ঘটেছে। স্থায়ী নির্বাহী বিভাগের অধীন হয়ে পড়েছে অস্থায়ী নির্বাহী কর্তৃত্ব। বিচার বিভাগের নীতিগত বিভাজন যা হয়েছিল সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে, তার ছিটেফোঁটাও এখন আর অবশিষ্ট নেই। ফলে যা হাবার তাই হচ্ছে।

বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের (বিএএসএ) সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, মাঠ প্রশাসনের সব জায়গায় স্থানীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির খবরটি সঠিক নয়। কিছু কিছু জায়গায় হয়ত কোনো ঘটনা ঘটে। তবে তা সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করা হয়। পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও রাজনীতিকদের সঙ্গে মিলেমিশেই প্রশাসন চালানো হয়। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads