• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সংবাদ সম্মেলন

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন চেষ্টা করছে বিভেদের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ আগস্ট ২০২১

হাজার বছরের ঐক্য ও ঐতিহ্য বিলীনের অপচেষ্টা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের অভিযোগ, সংগঠনটির কর্ণধার শাহীন আনাম এবং তার স্বামী ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের নেতৃত্বে এই চক্রান্ত চলছে। গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু ধর্মীয় আইন পরিবর্তন প্রচেষ্টার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছে।

হিন্দু মহাজোট নেতারা বলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ কয়েকটি এনজিও হাজার বছর ধরে চলে আসা সুসংহত হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে অশান্তির বীজ বপন করছে। ১০ হাজার বছরের পুরোনো হিন্দু পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করে বাংলাদেশকে হিন্দুশূন্য করার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে চক্রটি। তাদের দুরভিসন্ধি হাসিলে হিন্দু আইন সংস্কারের জন্য আইন কমিশনে একটি প্রস্তাবও জমা দিয়েছে।

তারা অভিযোগ করেন, আইন পরিবর্তনের নামে হিন্দু মা-বোনদের বলির পাঁঠা বানাচ্ছে ওই সংঘবদ্ধ চক্র। এর নেতৃত্বে রয়েছেন মাহফুজ আনাম, শাহীন আনাম এবং ‘বাঁচতে শেখা’র পরিচালক এঞ্জেলা গোমেজ। তারা প্রতিনিয়ত হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করছে। আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনিও বলেছেন যেখানে হিন্দুরাই চায় না আইন পরিবর্তন হোক, সেখানে অন্যদের দাবির যৌক্তিকতা নেই।

নেতারা বলেন, সম্পদ নিয়ে তারা সাধারণ মানুষকে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। হিন্দু ধর্মে নারীদের সম্পদ দেওয়া হয় না, এ কথা সত্য নয়। এসব শুনে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আমরা এসব বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান জানাই। চক্রটি সরকার এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সভা-সেমিনার করে হিন্দু বিধিবিধান সম্পর্কে মিথ্যা ও বিদ্বেষমূলক তথ্যও প্রচার করছে। সারা দেশের হিন্দু সমাজের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট বিধান বিহারী গোস্বামী বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে হিন্দু আইন নিয়ে বড় চক্রান্ত চলছে। এই চক্রান্ত সুদূরপ্রসারী। এই আইনটির পরিবর্তন সরকারও চাচ্ছে না। অথচ কিছু এনজিও চাচ্ছে তাদের প্রয়োজনে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার এবং ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাহফুজ আনামদের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করবো।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট লাকী বাছাড় বলেন, শাহীন আনামসহ এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে হিন্দুদের আইন পরিবর্তনের নামে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এটি মূলত হিন্দুদের ঘরে ঘরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র। মাহফুজ আনাম, শাহীন আনাম, গোমেজের নেতৃত্বে চক্রটি ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে।

হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, মাহফুজ আনাম এবং শাহীন আনাম হিন্দু ধর্ম আইনের সংস্কার চেয়ে যে প্রচারণা চালাচ্ছেন সেটি সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্র। শাহীন আনাম এনজিওর এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাহফুজ আনাম সম্পাদিত ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারকে কাজে লাগিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

প্রণব মঠ ঢাকার অধ্যক্ষ স্বামী সঙ্গীতানন্দ মহারাজ বলেন, আইন সংস্কারের নামে মন্দির ভেঙে ও  হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানোর ষড়যন্ত্রে নেমেছেন মাহফুজ আনাম ও শাহীন আনাম। এজন্য তারা আইন সংস্কারের নামে চক্রান্তে নেমেছে। এদেশে মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না।

ইসকনের ফুড ফর লাইফ-এর পরিচালক রুপানুগ গৌরদাস ব্রহ্মচারী হিন্দু আইন সংস্কারের অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, হিন্দু আইন নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী মাহফুজ আনাম ও তার স্ত্রী শাহীন আনাম যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা প্রত্যাহার না করলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মা-বোনেরা ঝাড়ু হাতে নিয়ে ডেইলি স্টার অফিস ঘেরাও করবে। অবিলম্বে হিন্দু আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রত্যাহার না হলে জোরদার আন্দোলন শুরু হবে।

বৈদিক কৃষ্টি সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার প্রধান আচার্য রবীন্দ্রনাথ দেবনাথ প্রশ্ন করে বলেন, যারা হিন্দু আইন পরিবর্তন করতে চান তারা কারা। আসলে হাজার বছরের সনাতন ধর্ম সংস্কার করে তারা আমাদের মেরে ফেলতে চায়। হিন্দু মহাজোটের বরিষ্ট সহ-সভাপতি প্রদীপ কুমার পাল বলেন, মতিউর রহমান, মাহফুজ আনাম সব সময় দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকেছেন। বাংলাদেশ ব্রাহ্মণ সংসদের সভাপতি কর্নেল (অব.) নিরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, হিন্দুধর্মে মত-পথ রয়েছে, তবে বেদ সার্বভৌম। এর সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই। গুটিকয়েক এনজিও হিন্দু ধর্ম নিয়ে চক্রান্ত করছে। ওইসব এনজিও কর্মীর বিচার চাই।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী প্রতিভা বাগচী। অবিলম্বে ওই চক্রটিকে প্রস্তাব থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে হিন্দু নেতারা চার দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো—হিন্দু আইনের কোনো ধরনের সংস্কার, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করা হবে না, হিন্দু আইনে কোনো ধরনের হাত দেওয়া হবে না মর্মে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে সরকারকে স্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। অবিলম্বে শাহীন আনামসহ যেসব এনজিও হিন্দু পরিবার, সমাজ ও ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে হিন্দু সমাজ ও পরিবারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। শাহীন আনাম গংদের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিকট শর্তহীন ক্ষমা চাইতে হবে। আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে সরকার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হলে সারাদেশে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads