• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

বন্যা অবনতির শঙ্কা ৯ জেলায়

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ আগস্ট ২০২১

আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে দেশের নয় জেলায় নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের।

গতকাল শনিবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুরে নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। এছাড়া, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও যমুনায় পানি সমতল বাড়ছে। আগামী আরো ৪৮ ঘণ্টা এই অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা এবং সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া, আরো কিছু নদ-নদীর পানির সমতল বাড়ছে। অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। গতকাল ধরলার পানি বিপৎসীমার ৩১ সে. মি. ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ১৮ সে. মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা, দুধকুমোর ও নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার সমান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি ২৬.৮১ সে. মি. ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ২৩.৮৮ সে. মি. তিস্তা নদীর পানি ২৯.১০ সেন্টিমিটার, আর ব্রহ্মপুত্র নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৬.১০ সে.মি. দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইলে যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনার পানি বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ঝিনাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার সেমি ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়েছে শত শত পরিবার। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, জেলায় যমুনা নদীসহ বিভিন্ন নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পানি আরো বৃদ্ধি পাবে।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার নদী তীরবর্তী আরো কিছু নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি উঠে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্যাদুর্গতরা। বন্যাকবলিত এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন ক্ষেত, বীজতলা, আখ, পাট, তিল ও সবজিবাগানসহ বিভিন্ন ফসল।

সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, যমুনায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বন্যা পূর্ভাবাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে যমুনা নদীর পানি আরো বাড়তে পারে। তবে পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত বন্যার তেমন কোনো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

ফরিদপুরে পদ্মানদীর পানি বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ভাঙন, দুর্ভোগে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সদর উপজেলার ডিক্রিরচর, নর্থ চ্যানেল, চরমাধবদিয়া ও আলিয়াবাদের নিম্নাঞ্চলের বেশিরভাগ গ্রাম প্লাবিত রয়েছে। এছাড়া সদরপুরের চর নাসিরপুর, ঢেউখালী, চর মানাইর, আকটেরচর ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম ও চরভদ্রাসন উপজেলার চরঝাউকান্দা, চরভদ্রাসন সদর, চরহরিরামপুরের শতাধিক গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ জানান, ফরিদপুর সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নে পদ্মার, সদরপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়নে আড়িয়াল খাঁ ও মধুখালী, আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মধুমতী নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে নদীতে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অপার মেঘনা অববাহিকার কুশিয়ারা ছাড়া প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে। পানি কমার এ ধারা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, শরৎকাল শুরু হলেও আবহওয়ার হিসেবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার মাস বর্ষাকাল। সে হিসেবে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হবে, টানা বৃষ্টি হবে না। সকালে সূর্য উঠার পরই তাপমাত্রা বেড়ে যায়। জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। এখন সেই পরিমাণ বৃষ্টিও হচ্ছে না। যে কারণে প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি হলেও গরম কমছে না। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এ সময় ভারত অংশে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। যার প্রভাবে বাংলাদেশের নদ-নদীতে পানি বেড়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads