• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

জরিপ শেষ হয়নি চার বছরে

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৯ আগস্ট ২০২১

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) যুক্ত হয়েছে নতুন ৬৮ হাজার ৮৯টি হোল্ডিং নম্বর। এতে ডিএসসিসিতে বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ। তবে এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। দীর্ঘ চার বছরেও তারা শেষ করতে পারেনি নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের হোল্ডিং জরিপের কাজ।

২০১৬ সালে ঢাকার পার্শ্ববর্তী বেশ কিছু ইউনিয়নকে দুই সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্তির পর বৃদ্ধি পায় দুই সিটি করপোরেশনের এলাকা। এতে রাজধানীর আয়তন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যায়। বর্তমানে ঢাকা শহরের আয়তন ২৭০ বর্গকিলোমিটার। আগে ছিল ১২৯ বর্গকিলোমিটার।

২০১৬ সালের জুনে ঢাকা মহানগরের চারপাশের ১৬টি ইউনিয়নকে ৩৬টি ওয়ার্ডে ভাগ করে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এরমধ্যে ডিএসসিসিতে শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও এবং নাসিরাবাদ ইউনিয়নকে পৃথক ১৮টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়। অন্যদিকে বেরাইদ, বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও ডুমনী ইউনিয়নের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে ডিএনসিসির ১৮টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়। এই ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে নতুন পাঁচটি অঞ্চলও করা হয়েছে।

ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ার দুই বছর পর হোল্ডিং সংখ্যা নির্ধারণে জরিপ শুরু করে ডিএসসিসি। এই জরিপে ৬৮ হাজার ৮৯টি হোল্ডিং পাওয়া যায়। এর মধ্যে অঞ্চল-৬ এর ৭০, ৭৪ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে হোল্ডিং সংখ্যা ১০ হাজার ৭৬০টি, অঞ্চল-৭ এর ৭১, ৭২, ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাত হাজার ৬৮টি, অঞ্চল-৮ এর ৬৬, ৬৭, ৬৮ ও ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩ হাজার ৯০টি, অঞ্চল-৯ এর ৬২, ৬৩, ৬৪ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ হাজার ৭৭২টি, অঞ্চল-১০ এর ৫৮, ৫৯, ৬০ ও ৬১ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬ হাজার ৩৯৯টি হোল্ডিং রয়েছে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে এসব ওয়ার্ডের বাণিজ্যিক হোল্ডিং থেকে নির্ধারিত কর আদায় শুরু করে ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ। এর এক বছর পর আবাসিক হোল্ডিং থেকে কর আদায় শুরু হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছু ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন ডিএসসিসিতে মোট ১০টি অঞ্চলের অধীনে ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। আগের পাঁচটি অঞ্চলে রয়েছে ৫৭টি ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ডে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক হোল্ডিং সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৮৪ হাজার। নতুন হোল্ডিংগুলো মিলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লাখ ৫২ হাজারে।

তিনি বলেন, এখন আবাসিক এবং বাণিজ্যিক হোল্ডিং কর বকেয়া নেই। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ওই ৭৫টি ওয়ার্ড থেকে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা কর আদায় করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে এই খাত থেকে ৩৭৫ কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে। তবে কিছু আবাসিক হোল্ডিংয়ের মালিক হোল্ডিং নির্ধারণ নিয়ে ডিএসসিসিতে আপিল করেছেন। তাদের আপিল নিষ্পত্তি হলে বাকি করও আদায় হয়ে যাবে।

ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, সরকারের নির্দেশনার পরপরই আবাসিক এবং বাণিজ্যিক হোল্ডিং নির্ধারণ এবং কর আদায় শুরু করে ডিএসসিসি। ডিএসসিসি রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথাসময়ে কাজটি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের অনেক এলাকা এখনো ফাঁকা (খালি জমি)। এসব এলাকায় ঘরবাড়ি করা হলে ক্রমান্বয়ে সেগুলোতে হোল্ডিং নম্বর দেওয়া হবে। তবে জরিপে পিছিয়ে রয়েছে ডিএনসিসি। ডিএনসিসিতিতে আগে ৩৬টি ওয়ার্ড ছিল। পরে এর সঙ্গে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড যোগ হয়। এখনো এসব ওয়ার্ডে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক হোল্ডিংই নির্ধারণ করতে পারেনি সংস্থাটি। ফলে নতুন এলাকাগুলোতে কত সংখ্যক হোল্ডিং রয়েছে তা নির্ধারণ হয়নি। এতে সংস্থাটির রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। ডিএনসিসি সংশ্লিষ্টদের দাবি, তাদের জরিপ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নাগরিকদের হোল্ডিং নম্বর দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন ওয়ার্ডগুলো যুক্ত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে বাণিজ্যিক এবং ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে আবাসিক হোল্ডিং থেকে কর আদায়ে নির্দেশনা দেয় সরকার। সে অনুযায়ী হোল্ডিং নির্ধারণে স্ব স্ব আঞ্চিলক কার্যালয় থেকে জরিপ শুরু হয়। কিন্তু করোনাসহ বিভিন্ন অজুহাতে এখনো এই জরিপ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। ফলে করও আদায় করতে পারেনি ডিএনসিসি। এতে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, সিটি করপোরেশনের অঞ্চিলক দপ্তরগুলো থেকে হোল্ডিং নির্ধারণের কাজ চলছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কর আদায়ও শুরু হয়েছে। তবে নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে কত সংখ্যক হোল্ডিং রয়েছে, তার সমন্বিত হিসাব এখনো হাতে পাইনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads