• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

অল্প ভাড়ায় মিলবে সেবা

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

তুলনামূলক কম ভাড়ায় যাত্রী সেবা দেবে মেট্রোরেল। সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতে আধুনিক এ গণপরিবহনে যাতায়াত করতে পারে তা নিয়ে কাজ করছে একটি কমিটি। এরই মধ্যে ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। তৈরি হয়েছে একটি খসড়া ভাড়া তালিকাও। মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি এখন খসড়া প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে দেখছে। এ প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ভাড়ার হার চূড়ান্ত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

রাজধানীর যানজটের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে উত্তরার দিয়াবাড়ী হতে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল (এমআরটি-৬)। গত সোমবার দিয়াবাড়ী থেকে পল্লবী পর্যন্ত মেট্রোরেলের ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে। আগামী বছর ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ উদ্বোধনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। আর মেট্রোরেলের জন্য কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে দুই টাকা ৪০ পয়সা। ভারতের বিভিন্ন শহরের চেয়ে এ ভাড়া হার কম। তথ্যমতে, গত জানুয়ারিতে উত্তরা-মতিঝিল রুটের ভাড়া প্রস্তাব করা হয়। সে প্রস্তাব অনুযায়ী উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রুটে ভাড়া গুনতে হবে মাত্র ৪৮ টাকা। প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে করোনার কারণে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যদিও প্রস্তাবের চেয়ে ভাড়া বেশি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান তারা।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, ভাড়া নির্ধারণে ডিএমটিসিএলকে প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছিল। তারা একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এনিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে দেখছে। এর ভিত্তিতে ভাড়ার হার চূড়ান্ত করা হবে।

সূত্রমতে, ভারতের বিভিন্ন শহরে মেট্রোরেল রয়েছে। এর মধ্যে কলকাতায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোরেলের ভাড়া প্রথম দুই কিলোমিটার পাঁচ রুপি ও পরবর্তী তিন কিলোমিটার ১০ রুপি। এর পরের পাঁচ (৬-১০) কিলোমিটার ভাড়া ২০ রুপি ও বাকি সাড়ে ছয় (১১-১৬.৫) কিলোমিটার ৩০ রুপি। অর্থাৎ সাড়ে ১৬ কিলোমিটার মেট্রোরেলে ভ্রমণ করলে ভাড়া দিতে হবে ৬৫ রুপি বা প্রায় ৭৫ টাকা। এতে প্রতি কিলোমিটার গড় ভাড়া পরে চার টাকা ৫৫ পয়সা।

হায়দরাবাদ মেট্রোরেলের প্রথম দুই কিলোমিটার ভাড়া ১০ রুপি ও পরবর্তী দুই কিলোমিটার পাঁচ রুপি। এর পরের দুই (৫-৬) কিলোমিটার ভাড়া ১০ রুপি, তার পরের দুই (৭-৮) কিলোমিটার পাঁচ রুপি ও তার পরের দুই (৯-১০) কিলোমিটার পাঁচ রুপি। আর পুরো মেট্রোরেল রুটটি ২৬ কিলোমিটার। এ রুটে ভাড়া গুনতে হবে ৬০ রুপি বা ৭০ টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি গড়ে ভাড়া পরে দুই টাকা ৬৯ পয়সা।

এদিকে ভারতের দিল্লি মেট্রো সবচেয়ে বিখ্যাত। এর ফেজ-১-এ প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ১০ রুপি ও পরবর্তী তিন কিলোমিটার ১৫ রুপি, পরের সাত (৬-১২) কিলোমিটারের ভাড়া ২০ রুপি, তার পরের ৯ (১৩-২১) কিলোমিটার ৩০ রুপি এবং এর পরের ১১ (২২-৩২) কিলোমিটার ৪০ রুপি। এতে ৩২ কিলোমিটার মেট্রোরেলে ভ্রমণে গুনতে হবে ১১৫ রুপি বা ১৩৩ টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি গড়ে ভাড়া পরে চার টাকা ১৬ পয়সা।

ভারতের দিল্লি মেট্রোর ফেজ-২-এ প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ১০ রুপি ও পরবর্তী তিন কিলোমিটার ২০ রুপি, পরের সাত (৬-১২) কিলোমিটারের ভাড়া ৩০ রুপি, তার পরের ৯ (১৩-২১) কিলোমিটার ৪০ রুপি এবং এর পরের ১১ (২২-৩২) কিলোমিটার ৫০ রুপি। এতে ৩২ কিলোমিটার মেট্রোরেলে ভ্রমণে গুনতে হবে ১৫০ রুপি বা ১৭৪ টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি গড়ে ভাড়া পরে পাঁচ টাকা ৪৪ পয়সা।

সূত্রমতে, মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর একটি কমিটি গঠন করে। ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে সাত সদস্য রয়েছেন। ওই কমিটি গত ১০ জানুয়ারি কমিটি বৈঠকে ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। সেখানে ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে মেট্রোরেল আইন, ২০১৫-এর ধারা ১৮ (২) অনুযায়ী মেট্রোরেল পরিচালনার ব্যয় ও জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনাপূর্বক ভাড়ার হার প্রস্তাব করা হয়।

প্রস্তাবনায় মেট্রোরেল নির্মাণে সরকারি খাত ও বৈদেশিক ঋণের মাসিক ও দৈনিক খরচ, মেট্রোরেল পরিচালন ব্যয়, কর্মীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন খাতকে পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর সঙ্গে যাত্রী পরিবহনের হিসাবও নিরীক্ষা করা হয়েছে।

এতে দেখা যায়, মেট্রোরেল নির্মাণ ব্যয় ও পরিচালন ব্যয় যোগ করলে প্রতি মাসে খরচ পড়বে ৬৯ কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ২২৯ টাকা। দৈনিক হিসাবে এ খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের খরচের সঙ্গে ঋণের টাকার সুদ, গ্রেস পিরিয়ড, সরকারি অর্থ, পরিচালন ব্যয়—সবকিছু পর্যালোচনা করে এই খরচ তুলে ধরা হয়েছে।

মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। প্রকল্প খরচের ব্যয় ধরা হয়েছে দৈনিক সরকারি উৎস ৪৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা আর বৈদেশিক ঋণের টাকার দৈনিক পরিমাণ এক কোটি ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।

এর সঙ্গে আছে প্রশাসনিক ব্যয়। এক্ষেত্রে বেতন-ভাতার হিসাবে দৈনিক খরচ প্রায় ১৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। এর বাইরেও অন্যান্য খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ১১ হাজার টাকা। আর পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে বেতন-ভাতায় দৈনিক খরচ সাত লাখ এক হাজার টাকা, বৈদ্যুতিক বিল ৬৮ হাজার টাকা এবং তিন লাখ ৩৬ হাজার টাকা দৈনিক খরচ হতে পারে। তবে ভাড়া দিয়ে লাভজনক করা যাবে না, এমন বিবেচনায় ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট হাব ও স্টেশন প্লাজা গড়ে তোলা হবে।

প্রসঙ্গত, উত্তরা-মতিঝিল রুটে প্রতিটি ট্রেনের ছয়টি কোচের মধ্যে একটি কোচ নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে ট্রেনের অন্যান্য কোচেও নারী-পুরুষ একসঙ্গে ভ্রমণ করতে পারবে। মেট্রোরেলটি ৩৮ মিনিটে পুরো রুট ভ্রমণ করা যাবে। আর এ রুটে ৬০ হাজার যাত্রী ঘণ্টায় যাতায়াত করতে পারবে। আর দৈনিক চার লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে শুরু হয়ে পল্লবী, মিরপুর-১০, আগারগাঁও, খামারবাড়ী, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, তোপখানা রোড ও বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত নির্মাণকাজ চলছে। তবে এটি জসিম উদ্দিন রোডের দক্ষিণ দিক দিয়ে সার্কুলার রোড সংলগ্ন কমলাপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। এক্ষেত্রে মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত এক দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads