• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

অভিভাবকরা বাড়াচ্ছেন সংক্রমণের ঝুঁকি

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

দীর্ঘ ছুটির পর খুলেছে স্কুল-কলেজ। আর সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে উৎকণ্ঠিত অভিভাবকরা অপেক্ষা করছেন গেটের বাইরে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি না মেনে তাদের এই ভিড় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিভাবকদের দাবি, সরকার ও স্কুল কর্তৃৃপক্ষ যতই নিশ্চয়তার কথা বুলুক, সন্তানের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না। তাই উৎকণ্ঠায় থাকতে হচ্ছে সবসময়। একই সাথে স্কুল কর্তৃৃপক্ষ গেটের বাইরে নির্দিষ্ট দূরত্বে বসার ব্যবস্থা না করায় বাধ্য হয়ে তাদের ভিড় করতে হচ্ছে। স্কুল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সন্তানদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করতে গিয়ে অভিভাবকরা নিজেরাই জটলা তৈরি করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

গতকাল সোমবার স্কুল খোলার দ্বিতীয় দিন রাজধানী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি স্কুলের গেটের বাইরে অভিভাবকদের জটলা। অনেকে একসঙ্গে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সুখবরের মধ্যেও করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির আশঙ্কা আছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল সোমবার সকালে মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬০ ফিট বালক শাখার সামনে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের গাদাগাদি করে অবস্থান করতে দেখা গেছে। স্কুলের পক্ষ থেকে অপেক্ষা করার স্থান তৈরি না করায় বাইরে থাকা শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের প্রবেশপথের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। নির্ধারিত সময়ের আগে ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় এ পরিস্থিতি বলে জানান অভিভাবকরা। মিজানুর রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, ভেতরে এত বড় জায়গা থাকতেও করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গেটের বাইরে বাচ্চাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বার বার বলার পরও তারা এটি গুরুত্ব দিচ্ছে না। একসঙ্গে সবাইকে প্রবেশ করতে দেওয়ায় গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আগে এলে ভেতরে প্রবেশ করে একটি স্থানে অপেক্ষা করতে পারে। এতে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিও তৈরি হয় না। দ্রুত এমন ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের বার বার নির্ধারিত সময়ে আসতে বলা হলেও তারা আগেভাগে চলে আসছে। কিন্তু আগে এলেও নির্ধারিত সময়ের আগে তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া সম্ভব নয়। এতে গেটের বাইরে জটলা তৈরি হচ্ছে। এটি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ক্লাস শুরুর ১৫ মিনিট আগে স্কুলের ভেতরে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। অভিভাবকরা এর আগে এসে ইচ্ছাকৃত গেটের বাইরে জটলা করছে। আমরা ক্লাস রুটিন গেটের বাইরে দিয়েছি, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সচেতনতায় বাইরে ব্যানার টানানো হয়েছে। তারপরও ইচ্ছে করে গেটের বাইরে জটলা পাকানো হচ্ছে।

শুধু মনিপুর স্কুলই নয়, একই অবস্থা দেখা গেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুল ও ঢাকা গভ. মুসলিম হাই স্কুলেও।

এ বিষয়ে অভিভাবদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনার সংক্রমণ কমে এলেও উদ্বেগ এখনো কাটেনি। তাই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পাঠিয়ে বাইরে অপেক্ষায় থাকছেন উৎকণ্ঠিত অভিভাবকরা। রাজধানীর ধানমন্ডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের গেটে গিয়ে দেখা যায় অপেক্ষা করছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, সন্তানরা স্কুলে ফেরায় তারা একই সঙ্গে স্বস্তি এবং উৎকণ্ঠায় আছেন। স্বস্তি লেগেছে স্কুলের প্রতি সন্তানের উচ্ছ্বাস দেখে। আর তাদের উৎকণ্ঠা হচ্ছে-করোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে ক্লাস হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি পালন করা হচ্ছে কি না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে কি না তা নিয়ে। তাই উৎকণ্ঠা নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করেন তারা।

তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে তৎপর দেখা গেছে। সরেজমিনে কয়েকটি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, সন্তানদের স্কুলের গেট পর্যন্ত নিয়ে আসেন অভিভাবকরা। স্কুলের গেট দিয়ে প্রবেশের পর তাপমাত্রা পরীক্ষা করেন দায়িত্বরত কর্মী। তারপর হাত ধোয়ার জায়গা দেখিয়ে দেন তারা। শিক্ষার্থীরা হাত ধুয়ে প্রবেশ করেন বিদ্যালয়ের ভেতরে। স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, কিছুদূর পর পর বৃত্তাকার চিহ্ন আঁকা আছে। শ্রেণিকক্ষের কাছে গিয়ে দেখা যায় বেঞ্চে তিনজনের বসার ব্যবস্থা থাকলেও মাঝখানে ক্রস চিহ্ন দেওয়া আছে যাতে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে এক বেঞ্চে দুজন বসতে পারে। কর্মচারীরা পরিষ্কার করছে দরজা-জানালা। মাঠের গর্তগুলো ভরাট করা হয়েছে বালি ফেলে। শিক্ষার্থীদের জন্য করোনা বুথ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হলেও সামাজিক দূরত্ব না মেনে এমন জটলা সংক্রমণ ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজীর আহমেদ বলেন, সংক্রমণের মাত্রা এখন কম হলেও আমাদের মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রাখতে হবে। কোনোভাবেই একসাথে অনেক মানুষের জটলা করা উচিত হবে না। সচেতন না হলে পরিস্থিতি যে-কোনো সময় আবার খারাপ হয়ে যেতে পারে।

করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ করা হবে বলে রেখেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গত শুক্রবার জামালপুর পৌর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিলে প্রয়োজনে আবার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সেখানে পাঠদান সাময়িকভাবে বন্ধ করাও হতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads