• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
দুইশ কোটি হাতিয়ে নিয়েছে রিং আইডি

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

পরিচালক সাইফুল গ্রেপ্তার

দুইশ কোটি হাতিয়ে নিয়েছে রিং আইডি

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৩ অক্টোবর ২০২১

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম রিং আইডি কমিউনিটি জবস খাতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে উপার্জনের কথা বলে জনগণের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। কেবল কমিউনিটি জবস খাত থেকেই গত মে মাসে ২৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, জুন মাসে ১০৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও জুলাই মাসে ৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে সংগ্রহ করেছে রিং আইডি। তিন মাসে মোট ২১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা তারা হাতিয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

রিং আইডিতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত একজন ভুক্তভোগী ভাটারা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। রিং আইডির ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই ভুক্তভোগী। শিডিউলভুক্ত হওয়ায় এ মামলাটি সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। তদন্তের ধারাবাহিকতায় সাইবার পুলিশ সেন্টার মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সর্বজনীন সামাজিক নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফরম রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলামকে গুলশান থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির একটি টিম।

গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াসির আহসানের আদালতে সাইফুল ইসলামকে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পরিদর্শক সোহেল রানা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

রিং আইডি যেন অবৈধভাবে দেশের টাকা বাইরে পাচার করতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যেই তাদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার রিং আইডির অবৈধ কার্যক্রম সম্পর্কে বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করে তিন মাসে ২১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। তাদের এসব সন্দেহজনক কার্যক্রম লক্ষ করে বেশ কিছুদিন আগে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার থেকে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অনুসন্ধানের জন্য একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। বিএফআইইউ ইতোমধ্যেই এবিষয়ে তাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়াও রিং আইডির ইস্যুতে সাইবার পুলিশ সেন্টারে মানিলন্ডারিং বিষয়ে একটি অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, রিং আইডি যেন অবৈধভাবে দেশের বাইরে টাকা পাচার করতে না পারে সে কারণে ইতোমধ্যেই তাদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, রিং আইডি প্রাথমিকভাবে একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফরম হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে তারা বিভিন্ন সার্ভিস যোগ করে জনগণের কাছে থেকে বিপুল পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করে। এসব সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে বৈদেশিক বিনিয়োগ, কমিউনিটি জবসসহ বিভিন্ন সার্ভিস, যার আড়ালে এ আমানত সংগ্রহের কার্যক্রম পরিচালনা করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুল পরিমাণ জনগণ এ খাতে বিনিয়োগ করে। এর আগেও তাদের করোনাকালীন ডোনেশনের মাধ্যমে জনগণের কাছে থেকে অর্থ সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সন্দেহ পোষণ করা হয়েছিল। বর্তমানে সন্দেহের তালিকায় থাকা বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের মতো তারাও অস্বাভাবিক ডিসকাউন্টে বিভিন্ন প্রোডাক্ট বিক্রি ও ক্রেতাদের কাছে থেকে ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করছিল। ই-কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চলমান গ্রেপ্তার অভিযানের এটিও একটি অংশ।

যেভাবে প্রতারণা রিংআইডির : রিং আইডি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপস। গুগলের প্লেস্টোর থেকে ডাউটলোড করে অ্যাপটিতে লগইন করলেই পাওয়া যাবে ফেসবুকের মতো অ্যাকাউন্ট। সেখানে ম্যাসেজ আদান প্রদান, কল দেওয়া থেকে শুরু করে লাইভও করা যায়। এই অ্যাপসের বিশেষত্ব হলো বিনোদনের পাশাপাশি আছে আয়ের সুযোগও।

এই প্ল্যাটফরমে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে আয়ের সুযোগের কথা জানিয়ে প্রলুব্ধ করার মতো বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। এখানে দুটি অফারের আওতায় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে; একটি ১২ হাজার টাকার প্যাকেজ, অপরটি ২২ হাজার টাকার প্যাকেজ।

রিং আইডি থেকে বলা হয়, দুই প্যাকেজের আওতায় বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন ৭৫০ টাকা হিসেবে সপ্তাহে ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। আর এই টাকা আয়ের জন্য খুব একটা পরিশ্রম করতে হয় না। প্রতিদিন ৫০টি ও ১০০টি করে বিজ্ঞাপন দেখলেই হয়।

সেই সঙ্গে এমএলএম ব্যবসায়ের মতো কাউকে আইডি খুলতে রেফার করলেও চেইন অনুযায়ী নিয়মিত টাকা জমতে থাকবে ওই বিনিয়োগকারীর ওয়ালেটে। দেড় থেকে দুই মাসে বিনিয়োগের অর্থ ফিরে আসে।

ধারাবাহিক আয়ের এমন লোভনীয় অফারে এখন পর্যন্ত অসংখ্য গ্রাহক রিং আইডিতে বিনিয়োগ করেছেন অসংখ্য মানুষ। এমনকি নিজেরা বিনিয়োগ করার পর অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপনও দিয়ে যাচ্ছেন গ্রাহকরা।

রিং আইডি যাত্রা শুরু করে ২০১৫ সালে। বাংলাদেশি দুই প্রকৌশলী ভাই মিলে এই অ্র্যাপস তৈরি করেন। বড় ভাই শরিফুল ইসলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, আর ছোটভাই সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে রিং আইডির পরিকল্পনা করেন।

অ্যাপসটি লঞ্চ করার পর বড় ভাইয়ের স্ত্রী আইরিন ইসলাম রিং আইডির চেয়ারম্যান, বড় ভাই এমডি এবং ছোট ভাই পরিচালক হিসেবে রিং আইডির পরিচালনা শুরু করেন। রাজধানীর নিকেতনে তাদের অফিস। রিং আইডির অ্যাপসের পর তারা রিং আইডি ই-কমার্স সাইটও পরিচালনা শুরু করেন।

সিআইডি বলছে, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের মতো ই-কমার্স সাইটগুলোর মতো গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের জন্য পরিকল্পনা সাজিয়েছিল রিং আইডি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সেগুলোর প্রত্যেকটিকেই আইনের আওতায় আনা হবে। এর আগে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, দালাল, সিরাজগঞ্জশপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এর মধ্যে ইভ্যালির সিইও রাসেল তার স্ত্রী, ধামাকার পরিচালককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। পণ্য দেওয়ার নাম করে তারা টাকা নিলেও পণ্য সরবরাহ করেনি। এর মধ্যে ই-অরেঞ্জ কোনো পণ্য না দিয়েই গ্রাহকের সাড়ে ৩শ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। ধামাকা কিছু পণ্য সরবরাহ করলেও গ্রাহকের প্রায় সাড়ে ৭শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads