• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

বিপাকে দোকান ব্যবসায়ীরা

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ০৫ অক্টোবর ২০২১

স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করে দেওয়ায় স্বাভাবিক হয়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। খুলেছে ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আপাতদৃষ্টিতে সবকিছুই স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু করোনার দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেটের হাজারো দোকানের এখনো শাটার খোলেনি। করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকেই পুঁজি হারিয়েছেন। দেনার বোঝা ভারী হওয়ায় এখনো দোকান খুলতে পারেননি তারা।

রাজধানীর মিরপুর কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেট, শাহ আলী মার্কেট, মিরপুর শপিং সেন্টার, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট সরেজমিনে দেখা যায়, এসব মার্কেটের অনেক দোকানই তালাবদ্ধ। বহুতলবিশিষ্ট প্রতিটি মার্কেটের প্রায় প্রতিটি ফ্লোরেই তালাবদ্ধ হয়ে আছে বেশ কিছু দোকান।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে চলতি বছর দুই ঈদ ও পহেলা বৈশাখের মতো সর্বজনীন উৎসবের মৌসুমে সাধারণ সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশও ব্যবসা হয়নি। অন্যদিকে ঋণের বোঝায় দিশেহারা অনেক ব্যবসায়ী। এ অবস্থায় কোনোরকমে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তারা। কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। অনেকে আবার টানা লোকশন টানতে টানতে পুঁজি খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এরকম ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখনো দোকান খুলতে পারছেন না।

মূলত ১৫ জনের কম কর্মীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসার আওতায় পড়ে। অন্যদিকে হকার, বাদামওয়ালা, ফেরিওয়ালা, পান-সিগারেট বিক্রেতাসহ স্বল্প পুঁজির ব্যবসাগুলো অণু অর্থাৎ অতিক্ষুদ্র ব্যবসার আওতায় পড়ে। দেশের মোট ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশই হচ্ছে এসব ক্ষুদ্র ও অণু ব্যবসায়ী। পুঁজি কম এবং সঞ্চয় সীমিত হওয়ায় এ ধরনের ব্যবসায়ীদের ঝুঁকি মোকাবিলার ক্ষমতাও অনেক কম। তাই করোনা বিপর্যয়ে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছেন এসব ব্যবসায়ী।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যানুযায়ী, দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৫৭ লাখ এবং অণু ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। দেশের মোট ব্যবসায়ীদের প্রায় ৯০ শতাংশই হচ্ছে অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী। করোনার দীর্ঘদিন ব্যবসা মন্দা থাকায় এসব ব্যবসায়ীর সংখ্যা এখন অনেক কমে এসেছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা কষ্ট করে এখনো ব্যবসা ধরে রাখছেন। কিন্তু সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছেন ক্ষুদ্র ও অণু ব্যবসায়ীরা। ২০-৪০ হাজার টাকার সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করা এসব অণু ব্যবসায়ী করোনার মন্দা বাজারে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। করোনার মন্দা বাজারে সারা দেশে ৫০-৬০ লাখ ক্ষুদ্র ও অণু ব্যবসায়ী তাদের পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কেবল রাজধানীতেই ব্যবসা হারিয়েছেন প্রায় পাঁচ লাখ অণু ব্যবসায়ী। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে না পেরে পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন অনেকে। তিনি বলেন, এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা এক কোটির বেশি কর্মচারী ও তাদের পরিবার এখন মহাবিপদে রয়েছে। আমরা সরকারের কাছে বহুবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও এসব অসহায় মানুষের জন্য কিছুই করা হয়নি।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে ২০০০ সালের ২৬ মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের ১০ আগস্ট পর্যন্ত দফায় দফায় বন্ধ করা হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দোকান খুলে দেওয়ার দাবিতে একপর্যায়ে রাস্তায়ও নেমে আসেন ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ দেশে দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে গত ২৮ জুন থেকে সীমিত আকারে বিধিনিষেধ শুরু হয়। সেদিন থেকেই সারা দেশের দোকানপাট ও বিপণিবিতান বন্ধ হয়ে যায়।  পরে ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়। ঈদের ব্যবসার জন্য আট দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার।  গত ২৩ জুলাই থেকে আবার ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়। পরে গত ১১ আগস্ট থেকে সারা দেশে দোকানপাট ও বিপণিবিতান খুলে দেওয়া হয়।

কিন্তু করোনার অভিঘাতে এ সময় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে আসে। ব্যবসা কমে আসায় কর্মী ছাঁটাই, বেতন কমাতে বাধ্য হয়েছে মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। মানুষের আয় কমে যাওয়ায় ব্যয় করার ক্ষেত্রও কমে যায়। সরকারি গবেষণা-প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাকালে দেশে নতুন করে ১ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। দেশে এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে ৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ। অন্যদিকে বেসরকারি গবেষণা-প্রতিষ্ঠান

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনায় দারিদ্র্য ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে দেখা গেছে, করোনায় মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ। করোনার আগে যাদের আয় ছিল প্রতিদিন ১০০ টাকা। করোনার কারণে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads