• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ অক্টোবর ২০২১

অর্থনৈতিক সংকট, পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনার চাপসহ নানামুখী কারণে বিষণ্নতায় ভোগা মানুষের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। সম্প্রতি ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের ওপর একটি গবেষণা করেছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। ওই গবেষণায় পাওয়া গেছে, দেশে প্রতি ১০০ জনে ৪৭ জন আত্মহত্যার চিন্তা করে। এদের প্রতি ২৫ জনের একজন আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে রেখেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে পুরুষের চেয়ে নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ৬ দশমিক ৬ জন আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে। আর পুরুষের আত্মহত্যা প্রবণতা দেখা গেছে ২ দশমিক ৬ শতাংশের। এই গবেষণা বলছে, গ্রামের মানুষের চেয়ে শহরের মানুষের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। শহরের প্রতি ১০০ জনে ৮ দশমিক ২ জন আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন। আর যারা গ্রামে বসবাস করেন, তাদের আত্মহত্যার প্রবণতা প্রতি ১০০ জনে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এটা উদ্বেগজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যারা আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে, তাদের পরিবারের কারো না কারো আত্মহত্যার প্রবণতা বা আত্মহত্যা পরিকল্পনা রয়েছে। এই গবেষণার অংশ হিসেবে ২ হাজার মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এদের প্রতি ১০০ জনে ৫ জন আত্মহত্যার চিন্তা করে। এই ৫ জনের মধ্যে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করে। কী কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে-এমন প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী রেজিস্ট্রার আহসান আজিজ সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, দাম্পত্য জীবনে কলহ, পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা, একাডেমিক পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল, হঠাৎ করে রেগে যাওয়ার প্রবণতা, দারিদ্র্য বা অর্থ সংকট, বিষণ্নতা ও হতাশাই আত্মহত্যার চিন্তায় ফেলে প্রভাবিত করে। তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যা যারা করছে, তাদের একটি বড় অংশ মাদকাসক্ত। করোনার কারণে বিষণ্নতা ও হতাশাগ্রস্ত মানসিক রোগী বেশি আসছে। তবে এমনটা বলা যাবে না যে, এ কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। যাদের বড় ধরনের মানসিক সমস্যা আছে, তারাই এই হাসপাতালে আসেন।

এ হাসপাতালের আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতালে সেবা নেওয়া ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ সিজোফ্রেনিয়ার রোগী। ৩০ শতাংশের ছিল বাইপোলার ডিজ-অর্ডার। বিষণ্নতার রোগী ১০ শতাংশ। ১০ শতাংশ হতাশার রোগী এবং বাকি ১৫ শতাংশ অন্যান্য রোগে ভুগছে।

আহসান আজিজ সরকার বলেন, ‘করোনাকালে অনেকের চাকরি চলে গেছে। ফলে সংসারে অশান্তি বেড়েছে। করোনার কারণে ঘরবন্দি থাকায় অবসাদসহ নানা মানসিক রোগ বেড়ে গেছে। অর্থনৈতিক সংকট, পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা-এ বিষয়গুলো আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়াতে পারে। তবে আমাদের দেশে এ বিষয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই।’

আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘করোনা চলে গেলেও আমরা একটি নীরব মহামারির দিকে যাচ্ছি। করোনা-পরবর্তী সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের রোগী ৩ থেকে ৮ গুণ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মানসিক রোগী বেশি হচ্ছে।’

হেলাল উদ্দিন একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করে জানান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপে উঠে এসেছে দেশের অর্ধেক মানুষ এখন বিষণ্ন। দেশে প্রতি দুই জনের প্রায় একজন (৪৬ শতাংশ) বিষণ্নতায় ভুগছে, যেটি ২০১৮ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ সংখ্যাটি আড়াই গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে করোনাকাল। একইভাবে প্রতি তিনজনে একজন এখন দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দ্রুত নগরায়ণের কারণে প্রভাব পড়ছে মানুষের ওপর। বেড়েছে হতাশা। প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি যখন না হচ্ছে, তখনই তাদের মধ্যে বিষণ্নতা ও হতাশা তৈরি হচ্ছে। মানুষের ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আসছে। জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন আসছে। একই সঙ্গে জিডিটাল ডিভাইস নির্ভরতাও এক ধরনের চাপ তৈরি করছে।

‘বিশ্ব সংস্থ্য সংস্থা অনুমান করছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিষণ্নতা হবে বিশ্বের একমাত্র রোগ। এটি প্রতিরোধে এখন থেকে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads