• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

পর্যাপ্ত মজুতেও বাড়ছে দাম

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ অক্টোবর ২০২১

দেশে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ থাকার পরও বেড়েই চলছে দাম। বাজার তদারকি কিংবা নজরদারিতে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। খোদ কৃষিমন্ত্রীও বলেছেন, দেশে খাদ্যের কোনো সংকট নেই, তবে বাজারে দাম বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে ভরপুর পণ্য থাকলেও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিতে গড়ে উঠেছে অবৈধ সিন্ডিকেট। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে, পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিতে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এদিকে নিত্যপণ্যের দামের সংকট নিয়ে এমনটি অতীতে আর দেখা মেলেনি। দেশ কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারে নেই কোনো অস্থিরতা। তারপরও পণ্যের দাম ছুটছে লাগামছাড়া।

সরকারি হিসাবে, দেশে প্রতি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা দুই লাখ টনের কিছু বেশি। বর্তমানে মজুত আছে ছয় লাখ টন। প্রায় দেড় লাখ টনের বিপরীতে মজুত আছে সাড়ে পাঁচ লাখ টন। প্রতি মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা এক লাখ ৬৬ হাজার টন, আছে ছয় লাখ পাঁচ হাজার টন। এরপরও বাজারে মূল্যের দাপটে অস্থির মানুষ। বিক্রেতারা জানান, পণ্যের দাম কেজিতে এক টাকা কমলেও বাড়ছে সাত থেকে আট টাকা।

আমদানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে পণ্য সরবরাহ করছেন তারা।

আবদুল মোমেন সুগার রিফাইনারি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে তারা সরকারের কাছে আবেদন করেছে যেন তাদের কাজের সময় কমানো হয়। সময় কমানো হলেই দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

তবে বিশ্লেষকদের দাবি, সরকারের নজরদারিকেও ফাঁকি দিচ্ছে ব্যবসায়ীদের অবৈধ সিন্ডিকেট। ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, সরকার যদি মাঠে নজরদারি আরো বাড়াতে পারে, তাহলে এমন হতো না। সারা বছর পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসূফ জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়লেও দেশে যাতে কৃষিপণ্যের দাম না বাড়ে, সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় মিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এদিকে বাজারমূল্যের চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কমে পণ্য বিক্রি করছে সরকারি বিপণন প্রতিষ্ঠান টিসিবি।

টিসিবির এক কর্মকর্তা জানান, জনগণের ভোগান্তি কমানোর জন্য ডাল, তেল ও চিনিসহ সব পণ্য নিয়ে আসা হয়েছে।

শুধু রাজধানী নয় টিসিবির এ কার্যক্রম সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার দাবি ভোক্তাদের।

এদিকে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘খাদ্যের দামের বিষয়টা আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। খাদ্যের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য স্থানীয় বাজারের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এখন আশ্বিন কার্তিক মাস, এই সময়ে দেশে মঙ্গা শুরু হতো, কিন্তু আমরা মঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। খাদ্যের জন্য দেশে এখন আর হাহাকার নেই, খাদ্যের সংকট নেই, তবে খাবারের দাম একটু বেশি।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে একজন শ্রমিক কিংবা রিকশাওয়ালা একদিনের আয় দিয়ে ১০ থেকে ১২ কেজি চাল কিনতে পারেন। সেটা কিনতে পারেন বলেই দেশের মানুষের মধ্যে খাদ্য নিয়ে হাহাকার নেই, মানুষ না খেয়ে নেই। কুড়িগ্রাম নীলফামারী অঞ্চলের মানুষ এখন বলে, ‘দেশে মঙ্গা নেই, আমরা ভালো আছি’।’ 

তিনি বলেন, ‘খাদ্যে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ কি না সেটা আমরা বলছি না, কিন্তু আমাদের দেশে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ছে। চালের দাম একটু বেশি হলেও, চাল নিয়ে দেশে অস্থিরতা নেই।’ পণ্যের দাম বাড়া নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘পণ্যের চাহিদা যদি বেশি হয় এবং সেই তুলনায় যদি সরবরাহ কম থাকে তাহলে পণ্যের দাম কিছুটা বাড়বেই। হাজার চেষ্টা করেও তখন দাম কমানো সম্ভব নয়। যেমন বর্তমানে আলুর দাম কম, এখন কি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো সম্ভব? তারপরও আমরা সরবরাহ বৃদ্ধি এবং মনিটরিংয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করি বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে। যারা ব্যবসা করেন তারা আরো বেশি মুনাফা করতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। সারা পৃথিবীতেই এমন হয়।’  

‘একটা জিনিস আমাদের সবাইকে বিবেচনায় নিতে হবে, প্রতি বছর ২৪ লাখ জনসংখ্যা বাড়ছে। পৃথিবীর বহু দেশে ২৪ লাখ মানুষ নেই। আবার আমাদের কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। একই জমিতে শিল্প কলকারখানাও গড়ে তোলা হচ্ছে। দেশের উন্নয়নের ফলে মানুষের আয় বাড়ছে। জমি কমে যাওয়ার পরেও আমরা কিন্তু উৎপাদন বাড়িয়েছি। হাঁস-মুরগি-পশু পালন, মৎস্য চাষের ফলে খাদ্যের ব্যবহার ও চাহিদা বেড়েছে,’ বলেন ড. আব্দুর রাজ্জাক। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads