• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

রিয়েলটাইম মনিটরিংয়ে আসছে চট্টগ্রাম হাইওয়ে

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৩ অক্টোবর ২০২১

নারায়ণগঞ্জ-চট্রগ্রাম মহাসড়ককে নিরাপত্তা বলয়ে আনতে অত্যাধুনিক ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার প্রকল্পের কাজ ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। পুলিশের একক বৃহত্তম ইউনিট হাইওয়ে পুলিশকে আধুনিকায়নে পরিকল্পনার অংশ এই সিসি ক্যামেরা প্রকল্প।

দেশের অর্থনীতিতে নারায়ণগঞ্জ-চট্রগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু মহাসড়কটিতে দুর্ঘটনা, ডাকাতি, যানজটসহ নানা সমস্যায় বিঘ্নিত হয় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। মহাসড়কের নিরাপত্তার স্বার্থে ২০০৫ সালের ১১ জুন গঠিত হয় হাইওয়ে পুলিশ। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত মহাসড়কের সার্বিক সেবা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে পারেনি বিশেষায়িত এই ইউনিটটি। ফলে ঢাল-তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দারে পরিণত হয়েছিল ইউনিটটি। একটা সময় পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা ছাড়া অন্য কোনো মামলার তদন্ত করারও ক্ষমতা ছিল না হাইওয়ে পুলিশের। ২০১৭ সাল থেকে  হাইওয়ে পুলিশ মাদক ও চোরাচালান মামলা তদন্ত করার ক্ষমতা লাভ করেন। ২০১৩ সালেও মহাসড়কের নিরাপত্তায় টহল গাড়ি ছিল ৭২টি। বর্তমানেও পর্যাপ্ত সংখ্যক যানবাহনের অভাব রয়েছে। এই ইউনিটে মঞ্জুরীকৃত জনবল ২৮৬১ জন। সাবেক ডিএমপি কমিশনার ও হাইওয়ে পুলিশের তৎকালীন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন, ৮০ শতাংশ কাজের ক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশকে জেলা পুলিশের সহায়তা নিতে হয়।

তবে দীর্ঘ এই মহাসড়কের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত জনবল ও যানবাহনের স্বল্পতা মেটানোর পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশের আধুনিকায়নে দৃষ্টি দিয়েছে সরকার। তারই অংশ হিসাবে নারায়ণগঞ্জ-চট্রগ্রাম মহাসড়কটিকে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনা হয়। এ মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় দেড় হাজার ক্যামেরা বসানো হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টেন্ডার প্রক্রিয়া, লজিস্টিক কার্যক্রম, পয়েন্ট বাছাই, সার্ভে, বিদ্যুৎ লাইন এবং নেটওয়ার্কিংসহ ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু করা হবে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করা হবে। যদিও আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে। প্রায় ১৪০ কোটি টাকার প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরে। নারায়ণগঞ্জ থেকে চট্রগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে বসানো হবে সিসিটিভি।

জানা যায়, হাইওয়ে পুলিশের অধীনে পরিচালিত এ প্রকল্পের আওতায় থাকা রাস্তায় মোট সিসি ক্যামেরা থাকবে এক হাজার ৪২৭টি। এর মধ্যে বুলেট ক্যামেরার সংখ্যা ৯২৪টি। পিটিজেট ক্যামেরা থাকবে ৪৭১টি। লং ভিশন ফোর-কে এবং ট্রাফিক ক্যামেরা থাকবে ১৬টি করে। এ ছাড়া ৪৯০টি পোল, পাঁচটি মনিটরিং সেন্টার এবং একটি ডেটা সেন্টার থাকবে। মনিটরিং সেন্টারগুলো থেকে সার্বক্ষণিক সিসিটিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হবে। বিশ্লেষণ করা হবে ট্রাফিক ফ্লো। গুরুত্বপূর্ণ বস্তু শনাক্ত করতে সারা দিনের ভিডিওর সারাংশ তৈরি করে সংক্ষিপ্ত আকারে দেখা হবে।

চলতি বছরের ১৯ মে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়। হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করার মাধ্যমে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করার জন্য ‘হাইওয়ে  পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সিসিটিভি স্থাপন করার এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৯ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে ২৪৪ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ‘হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেয়। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদনও করা হয়।

প্রকল্পের আওতায় হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে হাইওয়ে ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম (ক্যামেরা, কম্পিউটার, সফটওয়্যার এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ) সংগ্রহ এবং তাদের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স, ৩০টি মোটর যানবাহন, অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনার সংস্থান রয়েছে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের আরএডিপিতে প্রকল্পটির অনুকূলে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।

জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গত ২০২০ সালের ১২ জুলাই দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪৩ টি দরপত্র বিক্রি হয়। শেষ পর্যন্ত ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। কারিগরি মূল্যায়ন কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। চূড়ান্ত মূল্যায়নে যৌথভাবে স্মার্ট টেকনোলজিস লিমিটেড ও ডিজিকন টেকনোলজিস লিমিটেডের দরপ্রস্তাব সার্বিক মূল্যায়নে রেসপন্সিভ হিসেবে বিবেচিত হয়।

হাইওয়ে পুলিশ প্রধান ও অতিরিক্ত আইজি  মল্লিক ফখরুল ইসলাম বলেন, ভিশন-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১কে সামনে রেখে বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বমানের পুলিশি সেবা নিশ্চিতকরণে যে নতুন ধারা সূচনা করেছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাইওয়ে পুলিশও তার কর্মকাণ্ডে আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তারই একটি অংশ এই প্রকল্পটি। তিনি বলেন, মহাসড়কে সার্বক্ষণিক পুলিশি নজরদারি বাড়ানো, অপরাধ বিশ্লেষণ, অপরাধী শনাক্ত, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান এবং ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী গাড়িকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করাসহ নানা প্রয়োজনে আসবে এসব সিসি ক্যামেরা।

তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দুর্ঘটনার পর কোনো গাড়ি বেশি দূর পালিয়ে যেতে পারবে না। গাড়ির নম্বরপ্লেট অটোমেটিক শনাক্ত করা যাবে। শনাক্ত করা যাবে যানবাহনের গতিপথ। সিসি ক্যামেরায় থাকবে হাইস্পিড ডিটেকশন। এর মাধ্যমে উচ্চগতির গাড়ি চিহ্নিত করা যাবে। সন্দেহজনক অনুপ্রবেশ শনাক্ত হবে। মহাসড়কে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই তৎপরতা অনেকাংশে কমে যাবে। হাইওয়ের রিয়েলটাইম মনিটরিংয়ের পাশপাশি সন্দেহভাজনদের আচরণ বিশ্লেষণ করা যাবে। মাদক, চুরি, ছিনতাই এবং ডাকাতি প্রতিরোধসহ অন্যান্য অপরাধ তৎপরতা কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এসব সিসি ক্যামেরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads