• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

জিডিপি নির্ধারণে নতুন ভিত্তি বছর

বাড়ছে অর্থনীতির পরিধি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ নভেম্বর ২০২১

২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে এতোদিন মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির তথ্য প্রকাশিত হতো। তবে এখন থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে নতুন ভিত্তি বছর ধরে জিডিপিসহ অর্থনীতির সব হিসাব-নিকাশ প্রকাশ করবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। নতুন ভিত্তি বছর অনুযায়ী, চলতি মূল্যে গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার (জিডিপি) দাঁড়িয়েছে ৪০৯ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩৫ লাখ ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।

বিবিএস বলছে, প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাব ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার এখন ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা আগের ভিত্তি বছরের (২০০৫-০৬) হিসাবে পাওয়া ৩০ লাখ ১১ হাজার ১০০ টাকার চেয়ে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। নতুন ভিত্তি বছরের (২০১৫-১৬) হিসাবে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। পুরনো ভিত্তি বছরের হিসাবে যা ছিল ২ হাজার ২২৭ ডলার।

যদিও ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে নতুন ভিত্তি বছর নির্ধারণ করায় সাম্প্রতিক বছরগুলোর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে গেলেও সার্বিক বিবেচনায় অর্থনীতির আকার বেশ বেড়েছে; বেড়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয়।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘অনেক দেরিতে হলেও আমরা নতুন ভিত্তি বছর শুরু করতে যাচ্ছি। এখন থেকে জিডিপি, মূল্যস্ফীতি, মাথাপিছু আয়সহ অর্থনীতির সব সূচক ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে হিসাব করা হবে। আমরা পাঁচ বছর পর পর ভিত্তি বছর পরিবর্তন করব।’ তিনি বলেন, ‘আরো আগেই নতুন ভিত্তি বছর নির্ধারণ করা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি; এটাকে আমাদের এক ধরনের ব্যর্থতাও বলতে পারেন। অনেক পেছনের ভিত্তি বছরকে ভিত্তি ধরে হিসাব করলে অর্থনীতির বর্তমান অবস্থার বাস্তব প্রতিফলন পাওয়া যায় না।

‘এই ১৫ বছরে অনেক নতুন নতুন খাত আমাদের অর্থনীতির মূলধারায় যুক্ত হয়েছে; ভালো অবদান। সে কারণেই এখন আমরা পাঁচ বছর পর পর ভিত্তি বছর পরিবর্তন করব।’

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এখন থেকে জিডিপিসহ অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের তথ্য নতুন ভিত্তি বছরের পাশপাশি পুরনো ভিত্তি বছরেরটাও প্রকাশ করা হবে। কিছুদিন পর শুধুমাত্র নতুন ভিত্তি বছরেরটা প্রকাশ করা হবে। পুরনোটা আর প্রকাশ করা হবে না।’

এদিকে, নতুন ভিত্তি বছর নির্বাচনের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরাও। অর্থনীতির বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বলেন, ‘জিডিপি ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে সময়মতো সংশোধন করা হলে তা জাতীয় সূচকের পূর্বাভাসের গ্রহণযোগ্যতা এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করার ক্ষেত্রে উপযোগিতা নিশ্চিত করে। যদিও নতুন ভিত্তি বছর শুরু করায় আগের কয়েক বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে গেছে, তবুও এটি অর্থনীতির বাস্তব চিত্র প্রকাশ করছে। বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারলে তা সরকারকে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিতে আরো সহায়তা করবে।’

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখতের মতে, তথ্যের উৎসের উন্নয়ন হলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ব্যপ্তি বাড়ে। কারণ নতুন মানদণ্ড অর্থনীতিতে বর্ধনশীল শিল্পের অবদানের আরো সঠিক প্রতিফলন নিশ্চিত করে।

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে হিসাব করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর হিসেবে নির্ধারণ করায় ওই হার কমে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

পরের অর্থবছরগুলোতেও একইভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা করে কমেছে। ভিত্তি বছর হচ্ছে একটি মানদণ্ড যার প্রেক্ষাপটে একটি দেশের উৎপাদন, সঞ্চয় ও মূলধনের মোট পরিমাণের মতো উন্নয়ন সূচকগুলোর প্রবৃদ্ধি হিসাব করা হয়। নতুন ভিত্তি বছর (২০১৫-১৬) শুরু হলে জাতীয় হিসাবের বিবেচনায় বাংলাদেশ সার্কভুক্ত অন্য দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র মালদ্বীপ (২০১৪) ও ভারত (২০১১-১২) কাছাকাছি আছে। পাকিস্তান (২০০৫-০৬) এবং শ্রীলঙ্কা (২০১০) যথেষ্ট পিছিয়ে আছে। এর আগে ভিত্তি বছরের সর্বশেষ সংশোধন করা হয়েছিল ২০১৩ সালে।

নতুন ভিত্তি বছরের প্রেক্ষাপটে কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতের সম্প্রসারণ ঘটেছে। নতুন হিসাবে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান হিসাব করার সময় ১৪৪ ধরনের শস্যের তথ্য আমলে নেওয়া হয়েছে, যেটি আগের হিসেবে ১২৪ ছিল।

কৃষি খাতের মোট মূল্য সংযোজন (জিভিএ) চলতি মূল্যে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা হয়েছে, যেটি আগের হিসাবে ৩৮ হাজার ৪৬ কোটি টাকা ছিল। শিল্প খাতে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, পল্লিবিদ্যুৎ কোম্পানি, খাদ্য সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ, রাজশাহী ওয়াসা ও জাহাজ ভাঙা শিল্পের তথ্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

নতুন ভিত্তি বছরের হিসাবে শিল্প খাতের মোট মূল্য সংযোজন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১১ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা হয়েছে। পুরনো হিসাবে যা ৮ লাখ ৯৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ছিল।

বিবিএস দেশে চালু হওয়া বিভিন্ন নতুন সেবার অবদান জানতেও সমীক্ষা পরিচালনা করেছে। রাইড-শেয়ারিং সেবা, বেসরকারি মোটরযান, জাতীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান, বেসরকারি নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা, বেসরকারি হেলিকপ্টার সেবা, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি, চলচ্চিত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান, সিনেমা হল, নতুন ব্যাংক, মোবাইল আর্থিক সেবা, এজেন্ট ব্যাংকিং এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আর তাতে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট মূল্য সংযোজন সেবা খাতের মোট মূল্য সংযোজন বেড়ে ১৮ লাখ ৯৮ কোটি টাকা হয়েছে। যা ছিল ১৬ লাখ ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ইতিবাচক উন্নয়ন হিসেবে গত অর্থবছরে বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত বেড়ে ৩০ দশমিক ৭৬ শতাংশ হয়েছে, যেটি পুরনো ভিত্তি বছরের হিসেবে ২৯ দশমিক ৯২ ছিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads