• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

এবার সবজি ট্রেনের কথা ভাবছে সরকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ নভেম্বর ২০২১

আমচাষিদের কাছে সমাদৃত হয়েছিল ম্যাঙ্গো ট্রেন। এবার সেই আদলে সবজি ট্রেন চালুর কথা ভাবা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রস্তাব পেলে বিষয়টি নিয়ে এগোবে সরকার। এমনটাই জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য ও পরিবহন খরচের কারণে বাড়ে সবজির দাম। আবার দীর্ঘ সময় ট্রাকে বস্তাবন্দি থাকায় মাঠ থেকে রান্নাঘর পর্যন্ত আসতেই গুণ হারায় অনেক সবজি। যানজটে পড়ে সবজি পচে যাওয়ার নজিরও অনেক। এসব ক্ষতি এড়াতে সরাসরি ট্রেনে সবজি পরিবহনের কথা উঠেছে কৃষকদের পক্ষ থেকে।

এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, আমের মতো সবজি পরিবহনের বিষয়টিও ভাবা যেতে পারে। কৃষকরা চাইলে সৌসুমি সবজি পরিবহনে এ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এতে সময় বাঁচবে, দাম কমবে। সবজিও পচন থেকে রেহাই পাবে। জানা গেছে, বগুড়া থেকে এক ট্রাক সবজি আনতে ট্রাক ভাড়া গুণতে হয় ২৫-২৬ হাজার টাকা। রাস্তায় নানা গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি তো আছেই। যার কারণে বগুড়ার ৮ টাকা কেজির সবজি রাজধানীবাসীকে কিনতে হয় ৮০ টাকায়। কৃষকরা জানিয়েছেন, ট্রাকের পরিবর্তে ট্রেনে সবজি পরিবহনের সুবিধা থাকলে তাদের লাভ হবে। কমবে মধ্যস্বত্বভোগী ও আড়তদারদের দৌরাত্ম্য। রাজধানীর বাসিন্দারাও পাবে তাজা সবজির স্বাদ। তাদের মতে, এর আগে আমের জন্য বিশেষ ‘ম্যাঙ্গো ট্রেন’-এর মতো ‘সবজি ট্রেন’-এর বিষয়ে ভাবতে পারে সরকার। বছর দুয়েক ধরে আম চাষিদের জন্য রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’ চালু হয়েছিল। করোনার কারণে তখন আম বাজারজাত করা যাচ্ছিল না। ছিল ট্রাকের সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া। পরে সরকারের পক্ষ থেকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ম্যাঙ্গো ট্রেন চালু হয়। মৌসুম শেষ হলে গত ১৫ জুলাই থেকে ওই ট্রেন বন্ধ হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই ট্রেনে আম পরিবহন করে রেলওয়ের আয় হয়েছিল প্রায় সাড়ে ২৬ লাখ টাকা। একইভাবে সবজি অধ্যুষিত এলাকাগুলো থেকে ট্রেনে সবজি পরিবহনের সুবিধা পাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা। তারা জানিয়েছেন, এই ব্যবস্থা চালু হলে তারা নিজেরাই সরাসরি আড়তদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবজি পাঠাবেন।

বগুড়ার কৃষক তোফাজ্জেল হক জানিয়েছেন, ট্রেনে সরাসরি পাঠালে রাজধানীকে ৮ টাকার সবজি ৮০ টাকায় কিনতে হবে না। কৃষকরাও লোকসানে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হবে না। বগুড়া, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, দিনাজপুর, নওগাঁ ও নরসিংদী থেকে রাজধানীতে রেল যোগাযোগ রয়েছে। এসব স্থান থেকে সবজি ট্রেন চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা। তারা বলছেন, এতে রেল কর্তৃপক্ষের লাভও হবে।

রাজশাহী রেলওয়ের তথ্যমতে, কুরিয়ারে এক কেজি আম পরিবহনে চাষিদের খরচ যা হতো, রেলে তারচেয়ে অনেক কম হয়েছিল। ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে গত ২৭ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ২২ লাখ ৩৪ হাজার ৯২০ কেজি আম বহন করা হয়েছে। যেখান থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে আয় করেছে প্রায় ২৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ম্যাঙ্গো ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে ছেড়ে রহনপুর, আমনুরা বাইপাস, নাচোল, কাকনহাট, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন, আড়ানী, লোকমানপুর, আব্দুলপুর ও আজিমনগর গিয়ে থামতো। স্টেশনগুলো থেকে আম নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হতো ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সড়ক পথের চেয়ে রেলপথে পণ্য পরিবহন বেশি নিরাপদ। জানা গেছে, ট্রেনে ঢাকায় এক কেজি আম পাঠাতে এক টাকা ৩০ পয়সা খরচ হয়েছে। কুরিয়ারে লাগে ১২ টাকা। এ ছাড়া ট্রেনে আম বেশি সময় বাক্সবন্দি থাকে না বলে ক্ষতিও হয় না। একই সুবিধা পাওয়া যাবে সবজিতেও।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads