• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

প্রতারণার নাম ‘ওয়েবিল’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৬ নভেম্বর ২০২১

রাজধানীর বিভিন্ন রুটে ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় থামেনি। বিআরটিএ ভাড়া বেঁধে দিলেও তোয়াক্কা করছেন না চালক-পরিবহন শ্রমিকরা। এ নিয়ে যাত্রী-শ্রমিক বািবতণ্ডাও চলছে। কখনো তা হাতাহাতির পর্যায়েও গড়াচ্ছে। ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে পরিবহন শ্রমিকরা বিভিন্ন সড়কে বাস চলাচল সীমিত করেছেন, কোথাও কোথাও বন্ধও রাখা হয়েছে।

পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, তারাও চান ওয়েবিল ব্যবস্থা বন্ধ হোক। কিন্তু মালিকরা ওয়েবিলের হিসাব ধরে বাড়তি টাকা দাবি করেন। এ অবস্থায় বাড়তি ভাড়া না নিলে তারা মালিকের চাহিদা মেটাবেন কীভাবে।

জানা যায়, একটি নির্ধারিত টার্মিনাল বা স্টপেজ থেকে বাস ছাড়ার পর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকার থাকেন। তারা ওই পয়েন্ট পর্যন্ত কতজন যাত্রী উঠলেন, কত ভাড়া দিলেন তার হিসাব রাখেন। একটি শিট নিয়ে চলেন চালকরা। প্রতিটি পয়েন্টে হিসাবটা যাচাই করে ওই শিটে লিখে দেন চেকার। দিন শেষে এই হিসাব অনুযায়ী বাসমালিকদের প্রতিদিনের ভাড়ার টাকা বুঝিয়ে দেন শ্রমিকরা।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ভাড়া কার্যকর হওয়ার পর ওয়েবিল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি। অথচ এই সমিতির সদস্যরাই ওয়েবিল ব্যবস্থার পক্ষে। তারা বলছেন, ওয়েবিল ব্যবস্থা না থাকলে বাসে স্টাফরা কত টাকা ভাড়া কাটছেন, তার সঠিক হিসাব মালিকরা পান না। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, নতুন ভাড়া কার্যকর হওয়ায় ওয়েবিল অনুযায়ী যে ভাড়া নেয়ার কথা তা আদায় করা যাচ্ছে না। তারাও চান ওয়েবিল বন্ধ হোক। তাহলে তাদের আয় বাড়বে।

বেশ কয়েকদিন ধরে রাজধানীর ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, মালিবাগ, বাড্ডা, মহাখালী, মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় ওয়েবিল নিয়ে প্রতিবাদ করছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সর্বনিম্ন ভাড়া ও ওয়েবিলের প্রতিবাদ করছে। ছাত্রদের এ প্রতিবাদে যুক্ত হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। বাড়তি ভাড়া আদায়ে প্রতিরোধের মুখে পড়ে একাধিক পরিবহন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে।

ভাড়া নিয়ে বাড়াবাড়ির জেরে গত মঙ্গল ও বুধবার মিরপুরের পরিবহন শ্রমিকরা অঘোষিত ধর্মঘট করে সড়কে গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে দেন। একই ঘটনা ঘটেছে মহাখালী ওয়্যারলেস এলাকায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৈশাখী পরিবহনের বাসগুলোও বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। তারা বলছেন, সড়কে গাড়ি চালাতে তাদের সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে ওয়েবিলে ভাড়া নেয়া যাচ্ছে না। সিটিং সার্ভিসও বন্ধ। ওদিকে মালিক বেশি ভাড়া হিসাবে টাকা চাচ্ছেন।

বিকাশ পরিবহনের সহকারী রাজন বলেন, গাড়ি চালাইতে খরচ বাড়ছে, মহাজনও জমা বাড়াই দিছে। ভাড়া বাড়ছে, কিন্তু যাত্রীরা তো ঠিকমতো ভাড়া দিতে চায় না। ভাড়া চাইতে গেলে গরম দেহায় সবাই। এহন আমরা মালিকরে বাড়তি টাকাটা দিমু কইত্তে।

তবে যাত্রীরা বলছেন, মালিকের দোহাই দিয়ে চালক-শ্রমিকরা তাদের গলা কাটতে চাচ্ছেন। মিরপুরের বাসিন্দা মুনতাসির বলেন, সরকার বলে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা। তা না হয় মানলাম। কিন্তু আবার বলা আছে, কিলোমিটার হিসাবে ভাড়া হবে। দূরে যেতে গেলে তারা আবার কিলোমিটার হিসাবে ভাড়া নেবে না। তখন তারা নেবে ওয়েবিল হিসাবে। ওরা আসলে কোনটা ধরে ভাড়া নিচ্ছে, এটাই আমরা বুঝতে পারি না।

এদিকে পরিবহন সংগঠনগুলো ওয়েবিল বাতিলের ঘোষণা দিলেও যেসব পরিবহন আগে থেকে ওয়েবিলে চলছিল, সেসব বাসের মালিক তা বন্ধ করতে চান না। তাদের দাবি, ওয়েবিল থাকলে ভাড়ার হিসাব সঠিকভাবে পাওয়া যায়। ওয়েবিল না থাকলে সেটা সম্ভব হয় না।

বিকাশ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব হোসেন বলেন, ওয়েবিল ছাড়া প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন। এখন এটা নিয়ে বহুমাত্রিক সমস্যা হচ্ছে। পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে। মালিকের ন্যায্য পাওনা প্রাপ্তিটা নিশ্চিত হবে এমন ব্যবস্থাপনা চালু হওয়া দরকার। নয়তো এই ওয়েবিল চালু রাখার পক্ষে আমরা।

হাফ পাসের দাবিতে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ওয়েবিল বন্ধের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা মালিকদের ডেকে ওয়েবিল বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। যারা নির্দেশনা মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা করছেন। যারা বারবার এই নির্দেশনা অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে রুট পারমিট বাতিলের মতো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, ওয়েবিল ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। তবে কেউ ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া নিলে তাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা করছেন। যারা একই অপরাধ বারবার করছেন সেসব পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads