• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

দারিদ্র্য নিরসনের হার শহরে কম, গ্রামে বেশি

নগর উন্নয়নে বাড়ছে স্থবিরতা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশের উন্নয়নের অধিকাংশ রাজধানীকেন্দ্রিক। অন্যান্য নগরে উন্নয়নের ঘাটতি রয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে দেশে নগর উন্নয়ন স্থবির হয়ে আছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারেও অন্যান্য শহর পিছিয়ে রয়েছে। দারিদ্র্য নিরসনের হার শহরে কম, গ্রামে বেশি। এই হার জাতীয় হারের চেয়ে গ্রামে বেশি। এই বিষয়টির সমাধানের জন্য অন্য শহর ও অঞ্চলের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উন্নয়ন বিষয়ক বার্ষিক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা এসব বিষয় তুলে ধরেন। এ সময় বিআইডিএস-এর কয়েকজন গবেষক বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা করেন।

আলোচকরা বলেন, ঢাকার অতিরিক্ত বৃদ্ধি সার্বিকভাবে নগর উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রতি বছর এই ক্ষতির পরিমাণ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ থেকে ১০ শতাংশ। এছাড়া দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। পূর্বাঞ্চলের তুলনায় পশ্চিমাঞ্চলের বৈষম্য বেশি। পূর্বাঞ্চলের দারিদ্র্য কমছে অধিকহারে। অন্যদিকে দ্রুত বাড়ছে ভোগও। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে দারিদ্র কমছে ধীরে এবং ভোগও কম। অর্থাৎ দেখা যায় ভোগ বৃদ্ধির হার প্রায় শূন্যের কোটায়।

বিআইডিএসের সিনিয়র রির্সাস ফেলো মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, জাতীয় পর্যায়ে দেশে ২০১০ সালে দারিদ্র্য হার ছিল ৩২ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে সেটি কমে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। জাতীয় পর্যায় মাথাপিছু ভোগ ২০১০ সালে ছিল এক হাজার ৪৭১ দশমিক ৫৪ টাকা। সেটি বেড়ে ২০১৬ সালে হয়েছে এক হাজার ৫০৮ দশমিক ৬৪ টাকা। আঞ্চলিক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ২০১০ সালে দারিদ্র্য হার ছিল ২৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এ সময় মাথাপিছু ভোগ ছিল এক হাজার ৬১৩ দশমিক ২২ টাকা। ২০১৬ সালে এসে দারিদ্র্যের হার হয় ২৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এ সময় মাথাপিছু ভোগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৯৮ দশমিক ১৯ টাকা।

এদিকে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ সময় মাথাপিছু ভোগ ছিল এক হাজার ৩৭৪ দশমিক ৬০ টাকা। ২০১৬ সালে এসে দারিদ্র্য হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এ সময় মাথাপিছু ভোগ হয়েছে এক হাজার ৩৭৮ দশমিক ৯৫ টাকা। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে দ্রুতহারে দারিদ্র্য কমছে এবং ভোগ বাড়ছে। তুলনামূলক কমহারে দারিদ্র্য ও ভোগ বাড়ছে পশ্চিমের জেলাগুলোতে।

বিআইডিএসের গবেষক ড. আজরিন করিম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকিতে আছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিচ্ছে। যেগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফল হিসেবে মনে করা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয়ের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

বিআইডিএস-এর  গবেষক আহমাদ আহসান বলেন, সরকারি সেবার মান এবং বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও ভালো করতে হবে। নীতি-নির্ধারকদের অর্থনৈতিক কমিশন গঠনের মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া চালুর সুপারিশ করে তিনি বলেন, নগর প্রশাসনের হাতে নীতি-নির্ধারণী ক্ষমতা দিয়ে বিকেন্দ্রীকরণ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। নগর উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধির জায়গাগুলো ও নীতিমালা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। এগুলো সহজেই সমাধানযোগ্য সমস্যা। তথ্য ও গবেষণায় আমাদের আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।

আহমাদ আহসান আরো বলেন, রাজধানী ঢাকার নাগরিকদের সবচেয়ে বড় বিরক্তির কারণ যানজট। একদিকে উন্নয়নের কাজ চলছে, অন্যদিকে রাস্তায় চলছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। এই দুয়ে মিলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বাদ দিয়ে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ঢাকার যানজটে। এ ক্ষতি দেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশের সমান।

তিনি জানান, ঢাকা শহরে যানজটের কারণে বছরে জিডিপির সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে মাইনাস ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সেই সঙ্গে ঢাকার ওভার প্রবৃদ্ধির কারণে ক্ষতি হয় জিডিপির ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশের যে মানুষ শহরে বাস করে তার অধিকাংশ ঢাকায়। বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে আহমাদ আহসান বলেন,  বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। এর মধ্যে প্রধান শহরগুলোতে বাস করে ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ। আবার ঢাকায় বাস করে ১১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। ১০ লাখের মতো মানুষ বাস করে এমন শহর মাত্র ৫টি। চীনের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৩৮ কোটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শহরে বাস করে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। সবচেয়ে বড় শহরে বাস করে ১ দশমিক ৮ শতাংশ, ১০ লাখের মতো মানুষ বাস করে এমন শহর রয়েছে ১০২টি। ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১৩৩ কোটি। এর মধ্যে শহরে বাস করে ৬ শতাংশ। সবচেয়ে বড় শহরে বাস করে ২ শতাংশ মানুষ। ১০ লাখের বেশি মানুষের শহর রয়েছে ৫৪টি।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ঢাকার অতিরিক্ত বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক খরচের বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকাকেন্দ্রিক অনেক উন্নয়ন হলেও এখানের শ্রমিকদের মানোন্নয়নে তেমন কাজ করা হয়নি। অন্যান্য শহরে শ্রমিকদের মজুরি হারের প্রবৃদ্ধি কমছে। আগে যেখানে প্রবৃদ্ধির এই হার ১২ শতাংশ ছিল, এখন সেটি কমে ৮ শতাংশ হয়েছে। নীতি-নির্ধারকদের উচিত একে খুবই গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads