• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
সেবা পেলেও ওষুধ মেলে না কমিউনিটি ক্লিনিকে

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

সেবা পেলেও ওষুধ মেলে না কমিউনিটি ক্লিনিকে

  • গাজী শরীফ মাহমুদ
  • প্রকাশিত ১৩ ডিসেম্বর ২০২১

গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দুই দশক আগে দেশে চালু করা হয় কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিকে বেড়েছে সেবার মান। বর্তমানে প্রতিদিন চার লাখের বেশি মানুষ নানা ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে এখান থেকে। তবে এসব ক্লিনিকে ২৭ ধরনের প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগই পাওয়া যায় না।

সম্প্রতি সরকারি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা ৯৩ শতাংশ রোগী কোনো ওষুধ পান না।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণা বলছে, সেবার মান বাড়ার পরও প্রায় ৮৫ শতাংশ রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে ছুটতে হয় বেসরকারি হাসপাতালে। এ ছাড়া এসব রোগীকে ওষুধের ৬৪ শতাংশ ব্যয় নিজেদেরই বহন করতে হয়।

গবেষণায় উঠে এসেছে, গ্রামপর্যায়ে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা যথাযথ কার্যকর নয়। শহর এলাকায়ও পর্যাপ্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা নেই। এ কারণে রোগীরা চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা কমিউনিটি ক্লিনিকে চর্ম রোগের চিকিৎসা নিতে যান সাদিয়া। প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবস্থাপত্রে পাঁচটি ওষুধ লিখে দেন চিকিৎসক। ওই কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে দুটি ওষুধ দেওয়া হলেও বাকি তিনটি ওষুধ কিনতে হয় দোকান থেকে। এতে সাদিয়াকে ৫০০ টাকা গুনতে হয়। এভাবে ওই দিন যতজন রোগী এসেছেন, তাদের সবাইকে বাড়তি টাকা গুনতে হয়েছে ওষুধ কেনার পেছনে।

ক্লিনিকে না থাকা ওষুধ কেন লিখছেন চিকিৎসকরা-এমন প্রশ্নের উত্তরে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাঈদ আল মামুন বলেন, চাহিদার তুলনায় ওষুধ সরবরাহ অনেক কম। ওষুধ আসার কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হয় যায়। যে কারণে অনেক সময় বাইরে ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লেখেন চিকিৎসকরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশেষ করে গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের সাফল্য অনেক বেশি। একই সঙ্গে সব ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিশ্চিত করতে পারলে সেবার মান আরো বাড়বে।

সরকারি হিসাব বলছে, সারা দেশে ১৩ হাজার ৮৮১টি ক্লিনিকে দৈনিক গড়ে ৩০ জন মানুষ সেবা নেয়। আরো ১৪৬টি ক্লিনিক চালুর অপেক্ষায় আছে। এসব ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যশিক্ষার পাশাপাশি দেওয়া হয় পুষ্টিশিক্ষা। বয়স্ক, কিশোর-কিশোরী ও প্রতিবন্ধীদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘স্বাস্থ্যব্যবস্থায় কমিউনিটি ক্লিনিকের উল্লেখযোগ্য অর্জন আছে। এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে গেছে। প্রতি ৬ হাজার মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য একটি করে ক্লিনিক তৈরি করা হয়েছে। অথচ এখানে একজন মাত্র সেবাদানকারী।

তিনি বলেন, এসব ক্লিনিকে সেবা নেওয়ার প্রবণতা মানুষের মধ্যে বেড়েছে। অথচ সক্ষমতা তেমন বাড়েনি। তাই আমাদের প্রায়ই শুনতে হয় ওষুধের ঘাটতির খবর। কিছু ভিটামিন ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ছাড়া অন্য ওষুধ মেলে না অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকে।

এ সমস্যা সমাধানে দুটি উপায়ের কথা বললেন এই জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। প্রথমত, ওষুধের ওপরে চাপ কমাতে জনগণকে স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে আরো সচেতন হতে হবে।

দ্বিতীয়ত, অপ্রয়োজনীয় ও যথেচ্ছ ওষুধের ব্যবহারের বন্ধ করতে হবে। কিছু হলেই ওষুধ দরকার-এমন মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অহেতুক ওষুধের ব্যবহার বন্ধে চিকিৎসকেরও সচেতন হতে হবে।

কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা ও নীতিনির্ধারণের জন্য সরকার গঠন করেছে কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্ট। একে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি-বেজড হেলথ কেয়ার প্রকল্প থেকে।

কমিউনিটি ক্লিনিককে কেন্দ্র করে নমুনা কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। প্রতিটি ক্লিনিকসংলগ্ন এলাকার ২৫০ থেকে ৩০০ পরিবারের জন্য একজন করে মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে।

সারা দেশে ৭০ হাজার ভলান্টিয়ার দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে। এদের মাধ্যমে ক্লিনিকসংলগ্ন বাড়িগুলোর সদস্যদের স্বাস্থ্যকার্ড দেওয়ারও পরিকল্পনা আছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা দিতে সরকার যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, এর মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সেবা এরই মধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে। তবে এখনো এর উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এসব সংকট ধীরে ধীরে দূর করার চেষ্টা চলছে।’

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads