• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

টিকা নষ্টের হার ‘সন্তোষজনক’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ জানুয়ারি ২০২২

সংরক্ষণ ও প্রয়োগ ব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে ৬৭ লাখ ১ হাজার ২৪১ ডোজ টিকা নষ্ট হয়েছে। তবে এ সংখ্যা খুবই কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি আশপাশের অনেক দেশের চেয়েও এই সংখ্যা কম। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে বিনামূল্যে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি। গত ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে ১০ কোটি ৬৬টি লাখ ৯৭ হাজার ৭৬ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।

সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চার কোম্পানির ২০ কোটি টিকা এসেছে। ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট টিকা পেয়েছে ১২ কোটি ২৪ লাখ ১৫ হাজার ৭৮৬ জন। এর মধ্যে ৭ কোটি ২৪ লাখ ৪৩ হাজার ৭৩৪ জন পেয়েছে প্রথম ডোজ। আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২ হাজার ৫২ জন। সরকারের হাতে এখন ৮ কোটি টিকা মজুত রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, টিকাকার্যক্রম বাস্তবায়ন, সংরক্ষণ ও পরিবহনসহ নানা কারণে ৫ শতাংশ টিকা নষ্ট হতে পারে। এর চেয়ে বেশি নষ্ট হওয়াটা গ্রহণযোগ্য নয়। টিকাদান কর্মসূটি বাস্তবায়নে টিকা নষ্ট হওয়া কমাতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ থাকলেও বেশির ভাগ দেশ টিকা নষ্ট হওয়ার হার কমিয়ে আনতে যথাযথ উদ্যোগ নিচ্ছে না। তবে ডব্লিউএইচও’র হিসাব অনুযায়ী তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে টিকা নষ্ট হওয়ার হার কিছুটা কম। দেশে সবচেয়ে কম টিকা এসেছে ফাইজার। এই টিকা নষ্ট হয়েছে ২ হাজার। প্রয়োগ করা হয়েছে ৩৯ লাখ ৯ হাজার ৯৩৯ ডোজ। তাপমাত্রা জটিলতায় মডার্নার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে মাত্র ৩০টি উপজেলায় ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৪ ডোজ। এই টিকা নষ্ট হয়েছে ৮০ হাজার ১০৮ ডোজ। অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা ৪৮৩টি উপজেলায় ১ কোটি ৯৬ লাখ ১৪ হাজার ১৭৩ ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে এই কোম্পানির টিকা নষ্ট হয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৪০০ ডোজ।

সবচেয়ে কম নষ্ট হয়েছে চীনে উৎপাদিত সিনোফার্ম টিকা। এই টিকা ৪৮৪ উপজেলায় ৪ কোটি ৭৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭২ ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে। এই টিকা নষ্ট হওয়ার পরিমাণ ২৩ লাখ ৮ হাজার ৩৩১ ডোজ।

অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে টিকা নষ্ট হওয়ার হার কম থাকাটাকে সাফল্য হিসেবে দেখছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা কারণে টিকা নষ্ট হওয়ার ঘটনা স্বাভাবিক। পরিবহন, সংরক্ষণ ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা কাটিয়ে টিকা নষ্ট হওয়ার হার কমিয়ে আনতে যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে এমন অবস্থা দেখা দিতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইপিআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, টিকা পরিমাণে কম আসা, রং পরিবর্তন হওয়া, সংমিশ্রণে সমস্যা দেখা দেয়া, হাত থেকে পড়ে যাওয়া টিকা নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ। একটি ভায়েলে যে পরিমাণ টিকা থাকে দেওয়ার সময় হয়তো সেই পরিমাণ টিকা পাওয়া যায় না।

মডার্নার টিকা একটি ভায়েলে ১৪ ডোজ থাকে। তবে প্রয়োগের সময় ১৩ ডোজের বেশি দেয়া সম্ভব হয়নি। আমরা দাঁড়িয়ে থেকে টিকা প্রয়োগ করেও ১৪ ডোজ করা সম্ভব হয়নি। অনেক সময় ইনজেকশন সিরিঞ্জে এক ডোজের বেশি পরিমাণ উঠে আসা। এতে টিকা কিছুটা নষ্ট হয়েছে। তবে অন্য দেশের তুলনায় নষ্ট হওয়ার হার অনেক কম। এই হার গড়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হবে না।’

সংরক্ষণ জটিলতায় টিকা নষ্ট হয়েছে কী না জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, টিকা সংরক্ষণে আমাদের কোনও ধরনের সমস্যা নেই। টিকা সংরক্ষণ ও পরিবহনের কাজ সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) অনেক আগে থেকেই করে আসছে। আমাদের টিকা সংরক্ষণ ও পরিবর্তন ব্যবস্থা অনেক ভালো।

টিকাদান কর্মসূচি শুরুর দিকে ফাইজার টিকা সংরক্ষণে জটিলতা ছিল। সে কারণে টিকা নষ্ট হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফাইজার টিকা সংরক্ষণে ইউনিসেফের মাধ্যমে ২৫টি ফ্রিজার নেয়া হয়েছে। যে কারণে এখন উপজেলা পর্যায়ে এই টিকা সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে।

টিকা নষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক-এমন মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

তিনি বলেন, দেশে যত টিকা নষ্ট হয়েছে সেগুলো সংরক্ষণ ও পরিবহন কিংবা অন্য কোনও জটিলতায় হয়নি। প্রয়োগের সময় এগুলো নষ্ট হয়েছে। যেটা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও হয়ে থাকে। দশ ডোজের ভায়েলে ৫ শতাংশ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে সিঙ্গেল ডোজের হলে নষ্ট কম হয়। তাই বাংলাদেশে যত টিকা নষ্ট হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদন্ড অনুযায়ী তা বেশ কম এবং খুবই স্বাভাবিক।

শুরুর দিকে সিনোফার্মের একটি ভায়েলে একটি ডোজ দেয়া হতো। তখন নষ্ট কম হতো। কিন্তু এটি করতে গিয়ে ভায়েলের খরচ বেড়ে যায়। ভায়েলে ডোজের সংখ্যা কম, টিকা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি ততটাই কম। তাই ভায়েলের ওপর নির্ভর করে কী পরিমাণ টিকা নষ্ট হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব শামসুল হক বলেন, এ পর্যন্ত কত টিকা নষ্ট হয়েছে সে হিসাব আমাদের কাছে আছে। অবশেষে টিকা নষ্ট হওয়ার তথ্য স্বীকার করে এই কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় সংখ্যাটি অনেক কম।

করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে বিশ্বব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। সবমিলে ২৪ কোটি ১০ লাখ টিকা নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১ কোটি টিকা নষ্ট হয়েছে ভারতে। পার্শ্ববর্তী দেশটিতে টিকা নষ্টের এই হার ৬ দশমিক ৩।

বিদেশি গণমাধ্যম বিবিসি’র তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাত মাসে নষ্ট হয়েছে দেড় কোটির বেশি করোনা টিকা। নাইজেরিয়ায় টিকা নিতে অনাগ্রহের কারণে শুধু নভেম্বরেই ১০ লাখ ডোজ টিকা নষ্ট হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads