• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

দ্রব্যমূল্যের ভোগান্তি কাটছে না সহসা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০২ জানুয়ারি ২০২২

২০২১ সালের মতো ২০২২ সালেও জিনিসপত্রের দাম নিয়ে বেশ খানিকটা ভোগান্তিতে থাকবেন সীমিত আয়ের মানুষেরা। ফলে অতীব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খাদ্যপণ্য কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষ চাপে থাকবে। বিশেষ করে চালের দাম আরো বাড়তে পারে। নতুন বছরের অর্থনীতি আরো চাঙ্গা রাখতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। ধারণা করা যায়, এর ধারাবাহিকতা নতুন বছরেও থাকবে। অবশ্য বিশ্বজুড়েই এখন মূল্যস্ফীতি বেশি। আর্ন্তজাতিক বাজারে তেল ও চালের দাম চড়া। এর প্রভাব বাংলাদেশেও কিছুদিন থাকবে। আহসান এইচ মনসুর বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে হলে চাল আমদানি আরো বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে দেশে ডলারের সংকট দেখা দিতে পারে। তার মতে, অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক ব্যালেন্স অব পেমেন্টেও চাপ পড়বে। কারণ, আমদানি ব্যয় যেভাবে বাড়ছে এবং প্রবাসী আয় আয় যেভাবে কমছে, তাতে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে আবার বিশ্বব্যাপী  ওমিক্রনের আঘাতের শঙ্কাও রয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ আমদানি বেশি হচ্ছে, কিন্তু প্রবাসী আয় কমে গেছে। বিদেশে শ্রমিক কম যাওয়ায় সামনের দিনগুলোতেও রেমিট্যান্স প্রবাহ আরো কমতে পারে।

তিনি উল্লেখ করেন, মুদ্রা বিনিময় হারে অসামঞ্জস্য আছে। ডলারের মূল্য ব্যাংকে এখন ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা। আর খোলাবাজারে তা ৯১-৯২ টাকা। পার্থক্য অনেক বেশি। এতে ব্যাংকব্যবস্থায় অর্থের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হতে পারে।

আহসান এইচ মনসুরের মতে বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়েও অস্বস্তিতে আছে সরকার। এই অস্বস্তি আরো কিছুদিন থাকবে।

বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুরের মতে-রাজস্ব আদায় কম হলে সরকার খরচ কমিয়ে সামাল দিতে পারে।  লক্ষ্য বেশি থাকায় এবারো টার্গেট অনুযায়ী  রাজস্ব অর্জিত হবে না। ফলে সরকারকে উন্নয়ন খরচ কমাতে হবে, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। উন্নয়ন খরচ কমালে মানুষের কাছে টাকার প্রবাহ কমবে। সব কিছুর পরও ২০২১ সালের মতো নতুন বছরে দেশের সার্বিক অর্থনীতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির যে ঝুঁকি রয়েছে, তাকে ভালোভাবে সামাল দিতে না পারলে সামনে অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় পড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ও রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের এই চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত।

তিনি বলেন, ওমিক্রনের আঘাত কেমন হবে, তার ওপর নতুন বছরের অর্থনীতি অনেকটা নির্ভর করছে। তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ধরে রাখতে হলে এটাকে ভালোভাবে সামাল দিতে হবে। তার মতে,  নতুন বছরের অর্থনীতিতে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ থাকলেও সম্ভাবনা আছে বেশি। ইতিমধ্যে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। তৈরি পোশাক রপ্তানি ভালো হচ্ছে। তবে তুলনামূলকভাবে দাম কমেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও চালের দাম চড়া। এটাকে মাথায় রেখে নতুন বছরের প্রস্তুতি নিতে হবে।

এদিকে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প আবারো করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের চাপ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম।

তিনি জানান, আমরা গত কয়েক মাসে কেবল কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিলাম, এরই মধ্যে আবার ওমিক্রনের চাপ এসে পড়েছে। ইতিমধ্যেই বিশ্বের ১০৬টির বেশি দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে জেনেছি। দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার রয়েছে। এসব দেশেও বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির ওপর ওমিক্রনের চাপ আসতে শুরু করেছে।

টানা সাত মাস ধরে প্রবাসী আয় কমেছে। গত মে মাসে ২১৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা সাম্প্রতিক কালে কোনো এক মাসে সর্বোচ্চ। এরপর প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স কমেছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে ১৫৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। প্রবাসে শ্রমিক যাওয়াও কমেছে।

আহসান এইচ মনসুর ও ড. জায়েদ বখত জানান, এ বছর ব্যাংক ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে ব্যাংকগুলো। করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকমতো করা হয়নি। যেগুলো একটু দুর্বল প্রতিষ্ঠান, সেগুলো আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চলতি বছর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads