• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

তিন বেলার খাবার জোগাতেই নাভিশ্বাস

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ জানুয়ারি ২০২২

বাজারে কমছে না দাম। উল্টো দিন দিন চালের দাম মিলগেট, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বেড়েই চলেছে। সরকারি গুদামে যথেষ্ট চালের মজুত রয়েছে।  পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরবরাহও ভালো রয়েছে। তারপরও দামের এ ঊর্ধ্বমুখীপ্রবণতা ভোক্তাদের তিন বেলার খাবার জোগাতেই তুলেছে নাভিশ্বাস।

গত ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। এখনই উদ্যোগ না নিলে আগামী এক মাসে চালের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। আর ঊর্ধ্বমুখীপ্রবণতা রোধে সরকারকে এ বছর দেড় থেকে দুই মিলিয়ন টন চাল আমদানি করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকে বাজার ব্যবস্থাপনাসহ মিল থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত চাল সরবরাহ ব্যবস্থায় কঠোর নজরদারি করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ধানের চেয়ে চাল বেশি কেনায় মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে বড় ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো বাজারে আসায় চালের মজুত বেড়েছে। মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিলেও খোলাবাজারে সঠিকভাবে সরবরাহ করছে না। ইচ্ছামতো সরবরাহ করে বাজারে দাম বাড়াচ্ছে। আবার একশ্রেণির ব্যবসায়ী চাচ্ছেন দেশে চাল আমদানি হোক। এজন্য দাম বাড়িয়ে বাজারে চাপ তৈরি করছেন। এ দাম কমাতে বাজার তদারকির বিকল্প নেই।

এছাড়া বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ ভোক্তা চিকন ও মাঝারি ধরনের চাল খায়। এ চাল উৎপাদন হয় বোরো মৌসুমে। গত বোরো মৌসুমের ধান-চালের মজুত প্রায় শেষ। ফলে সরবারহ কম। এজন্য সরকারকে বাজার ব্যবস্থাপনায় আরো কঠোর হতে হবে। মিল থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত চাল সরবরাহ ব্যবস্থায় কঠোর নজরদারি করতে হবে, বর্তমানে যা খুবই দুর্বল। এছাড়া ওএমএসর কার্যক্রম বাড়লে দাম কমে আসবে বলেও জানান তারা।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, চালের দামের ঊর্ধ্বমুখীপ্রবণতা রোধে সরকারের এ বছর দেড় থেকে দুই মিলিয়ন টন চাল আমদানি করতে হবে। সরকারকে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সরকার আমদানি করা চাল আনতে পারবে তত বেশি মঙ্গল হবে। তাহলে দাম কম বাড়বে।

তিনি বলেন, সরকারের মজুত আছে, কতো মজুত আছে সেটা আপনি ও আমি জানি না। ফলে সেটা বলে লাভ নেই। গুরুত্বপূর্ণ হলো বাজার কি বলছে। বাজারে যদি চালের সংকট না থাকে তাহলে দাম বাড়ছে কেন। তাহলে সরকারের দুর্বলতা রয়েছে। এ মুহূর্তে দাম কমাতে হলে আমদানির কোনো বিকল্প নেই। 

এছাড়া মিল-মালিকরা ধান কিনে বলেই আমরা সারা বছর চাল পাচ্ছি। তবে সরকারকে নজর রাখতে হবে। মিল-মালিকরা যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত মজুত না করতে পারে। মিলাররা বাজারকে স্থিতিশীল রাখে। যখন বাজারে ঘাটতি থাকে তখন সরকারের উচিত সরবরাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা করা। ফলে সরকারকে আমদানি করে বাজারের ঘাটতি মিটাতে হবে।

বাবুবাজারের পাইকারি আড়তের রশিদ রাইস এজেন্সির মালিক আব্দুল রশিদ বলেন, এখন চালের মৌসুম না। আগামী মার্চ মাসের শেষে নতুন চাল আসবে। এদিকে গত অগ্রহায়ন মৌসুম শেষ হয়েছে। মাঝের দুই মাস সব সময় চালের সংকট থাকে। কিন্তু এ বছর চালের সরবরাহ ভালো রয়েছে। তারপরও চালের দাম কেন বাড়ছে বলতে পারছি না। তবে আমার ধারণা এবছর ধানের দাম বেশি, কৃষকের কাছে ধান নেই। ফলে মিল-মালিকরা এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। এছাড়া চাল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) বন্ধ হলে চালের দাম বেড়ে যায়। আবার এলসি চালু হলে স্বাভাবিক হয়। তাই সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে চালের এলসি চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে মিলগেটে নজরদারি বাড়াতে হবে।

একই বাজারের দয়াল ভাণ্ডারের ম্যানেজার মো. সাঈদ বলেন, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে সব রকমের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। বাজারে প্রচুর সরবরাহ রয়েছে, কোথাও চালের সংকট নেই। শুধু ক্রেতার সংকট। তারপরও চালের দাম কেন বাড়ছে মিল-মালিকদের জিজ্ঞাসা করলে বলেন, বাজারে ধানের সংকট, দাম বেড়েছে তাই চালের দামও বেড়েছে। একই সঙ্গে পরিবহন ব্যয়, ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি তো আছেই। সরকার এবিষয়ে সব জানে তারপরও কিছু করে না। শুধু পাইকারি ও খুচরা বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এসব বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কোনো লাভ হবে না। মিলগেটে নজরদারি বাড়াতে হবে।

বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের পলিসি গত ভুলের কারণে চালের দাম বাড়ছে। যেহেতু ১৫ দিন ধরে চালের দাম বাড়তি। এসময়ই সরকারের উচিত আমদানির ঋণপত্র (এলসি) ওপেন করে দেওয়া। কারণ আমদানির খবরে চালের দাম কমে এবং আমদানি বন্ধ হলে আবার বাড়ে। সরকার যদি আমদানি ওপেন না করে তাহলে চালের দাম আরো বাড়বে। 

এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওএমএস চালু আছে সারা বছর। তবে এটা সীমিত ছিল। ৭৩০টি দোকানে চালু ছিল। এখন উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ১ হাজার ৭৬০টি ডিলারের মাধ্যমে আমাদের এএমএস চালু হচ্ছে। আমাদের চালের মজুত এখন সর্বকালের সর্ব বৃহৎ মজুত। এটা কোয়ালিটিফুল চালের মজুত। আমি আশা করি মানুষ এটা নিয়ে খাবে। দেশে খাদ্যের কোনো অভাব নেই।

তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় মানুষের এখন চিকন চাল খাবার প্রবণতা বেড়েছে। একজন রিকশাচালকও সরু চাল খেতে চায়। সরু চালের ওপর চাপ তো একটু পড়েছেই। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার থেকে নগদ দামে সরু চালটা তুলে নিয়ে প্যাকেট করে। প্যাকেটে বেশি দামে অনেকেই কেনেন।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সরু চালের কিন্তু এখন অফ টাইম। সাধারণত বোরো মৌসুমে এটা উৎপাদন হয়, এখন ধান লাগাবে। আমরা এটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা ফাইলও পাঠিয়েছি, আরো কিছু ট্যাক্স কমিয়ে সরু চাল বেসরকারিভাবে আমদানি করা যায় কিনা। তবে এটাও ঠিক, আমরা সুষ্ঠু মনিটরিংয়ে আছি, আপনারাও যদি কোনো অবৈধ মজুত সম্বন্ধে জানেন তাহলে আমাদের জানালে, আমরা সেখানে হানা দিতে পারি। তাহলে আমার বিশ্বাস চালের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে চালের দাম চার শতাংশ বেড়েছে। আর গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৮ শতাংশ। সর্বাধিক বেড়েছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads