• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
বাতাস বিক্রি করে বিল নিচ্ছে তিতাস : বিটিএমএ

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

বাতাস বিক্রি করে বিল নিচ্ছে তিতাস : বিটিএমএ

  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি ২০২২

গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন-বিটিএমএ। গ্যাসের বদলে বাতাস বিক্রি করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ কোটি কোটি টাকার বিল আদায় করছে বলেও অভিযোগ সংগঠনটির। কেপটিভ পাওয়ার জেনারেশন সংশ্লিষ্ট মিলগুলোতে দ্রুত ইভিসি মিটার স্থাপনের পাশাপাশি গ্যাসের সংকট সমাধানে গণপরিবহনে সিএনজি বন্ধ করে দেওয়ারও দাবি জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বিটিএমএ আয়োজিত গ্যাস সংকট সম্পর্কিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান বক্তারা। সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএর পক্ষ থেকে পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়।

দাবিগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে কেপটিভ পাওয়ার জেনারেশন সংশ্লিষ্ট মিলগুলোতে ইভিসি মিটার স্থাপন ও তার ভিত্তিতে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করা। যেহেতু সায়ের চাহিদা বিকল্পভাবে অর্থাৎ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব, সেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসাবে সার কারখানায় সরবরাহকৃত গ্যাস টেক্সটাইল খাতের মিলগুলোতে সরবরাহের ব্যবস্থা করা। তিতাস কর্তৃপক্ষ গত ৩ থেকে ৪ বছর যাবৎ মুনাফা করছে, তাই তাদের মুনাফাকৃত অর্থের একটি অংশ এলএনজির আমদানিতে ব্যয়ের মাধ্যমে এলএনজির মূল্যকে সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ এলএনজির ফ্রিকোয়েন্ট নিশ্চিত করা। গ্যাস সংশ্লিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিষয়টি জন গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এ ক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তার গাফিলতিতে যদি কোনো মিলের সার্বিক উৎপাদন ব্যাহত হয় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একই সঙ্গে গ্যাসের অপব্যবহারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা মিলের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় এবং তা প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। এছাড়া যে সকল মিলের অনুকূলে এরই মধ্যে গ্যাস সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট মিল কর্তৃক ডিমান্ড নোটের অর্থ পরিশোধ করেছে সংশ্লিষ্ট সেই মিলগুলোতে দ্রুত গ্যাস সংযোগ প্রদান করতে হবে।

এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। এ সময় সংগঠনটির অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, বিগত তিন বা তারও বেশি সময় যাবৎ আমরা পর্যায়ক্রমে বর্ধিত গ্যাস ট্যারিফে গ্যাস বিল প্রদান করছি। অথচ প্রায়শই আমাদের মিলগুলো তাদের নির্ধারিত পিএসআই এ গ্যাস পাচ্ছে না। আমাদের তথ্যমতে, তিতাস কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাতাস সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা আমাদের নিকট থেকে গ্যাস না দিয়ে গ্যাসের বিল নিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা মিলগুলোতে ইভিসি মিটার সংযোগের জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েছি। এর প্রেক্ষিতে আমাদের জানামতে ১২০০ ইভিসি মিটার আমদানি করা হয়েছে, কিন্তু খুবই অল্প কিছু সংখ্যক মিলে সংযোগ প্রদান করা হলেও অজ্ঞাত কারণে আমাদের বেশিরভাগ মিলগুলিতেই সরকারের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ইভিসি মিটারের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

মোহাম্মদ আলী বলেন, করোনার সময়েও তিতাস গ্যাস আমাদের একটি পয়সাও মওকুফ করেনি। সারচার্জ মওকুফ করেনি। করোনার সময়েও তিতাসের তিনজন এমডি বদল হয়েছে। বারবার টেলিফোন করার পরও নতুন এমডি ফোন ধরছেন না। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে ১২০০ ইভিসি মিটার আনা হলেও তা লাগানো হচ্ছে না। মিলগুলোতে তিতাস শুধু বাতাস বিক্রি করছে। ইভিসি মিটার লাগালে হয়তো তিতাসের প্রকৃত সিস্টেম লস বেরিয়ে আসবে। তাই তারা টেক্সটাইল মিলসে এই মিটারগুলো লাগাচ্ছে না।

মোহাম্মদ আলী আরো বলেন, যেসব গ্যাসের কূপে স্তর নিচে নেমে গেছে সেখানে যদি কম্প্রেসার বসানো হয়, তাহলে ১০ শতাংশ গ্যাস বাড়বে। আমরা অনুরোধ করব, সেসব কূপে দ্রুত কম্প্রেসার লাগানো হোক। কারণ কোনো দেশই জ্বালানি আমদানি করে শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারে না। জ্বালানির সংকট সমাধানে আমরা শিল্পবান্ধব জ্বালানি নীতি চাই। গ্যাসের দাম বাড়লে সুতা উৎপাদনে দেশে খরচ বেড়ে যাবে। এতে টেক্সটাইল মিলস হুমকির মুখে পড়বে। একই সঙ্গে পোশাক রপ্তানিতে দেশের আয় কমে যাবে। তাই কোনোক্রমেই গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি বলেন, পিডিবি বিদ্যুতের মূল্য প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়াতে চায়। আমাদের জানামতে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উইভিং ও স্পিনিং মিলের সিংহভাগ পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। ফলে মিলগুলোর পক্ষে বর্ধিত মূল্যে পল্লী বিদ্যুৎ থেকে যে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হবে তা মিলগুলোর পক্ষে কোনোক্রমেই বহন করা সম্ভব হবে না। এমনিতেই মিলগুলো কোনোভাবে চালু রয়েছে।

মোহাম্মদ আলী বলেন, গ্যাস সংকট মোকাবিলার জন্য সরকার এলএনজি আমদানির বিষয়টি উত্থাপন করে বিগত সময়ে গ্যাস ট্যারিফ বৃদ্ধি করেছে। আমরাও বাস্তবতা বিবেচনায় বর্ধিত গ্যাস ট্যারিফ মেনে নিয়েছি কিন্তু পরবর্তীতে এলএনজি আমদানি করে গ্যাস পাইপ লাইনে সরবরাহ করা হলে কিছুদিনের জন্য গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি আমাদের জানামতে স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এর পরে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির উচ্চ মূল্যের অজুহাতে এলএনজি আমদানি বন্ধ থাকে। আমরা মনে করি এলএনজির আমদানি যদি অব্যাহত থাকতো তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারের এলএনজির বিভিন্ন সময়ের মূল্য গড় করলে হয়তো এলএনজির মূল্য একটি গ্রহণীয় পর্যায়ে থাকত ফলে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হতো।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads