• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
আখাউড়ায় বল সুন্দরী কুল চাষে কৃষকের সাফল্য

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

আখাউড়ায় বল সুন্দরী কুল চাষে কৃষকের সাফল্য

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি ২০২২

এক একটি গাছ ৫ থেকে ৬ হাত লম্বা। গাছের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত থোকায় থোকায় ঝুুলছে শুধু বল সুন্দরী কুল বরই। ওই বল কুলের ওপরের অংশে হালকা সিঁদুর রং রয়েছে। ফলটি আকারে বড়, দেখতে ঠিক আপেলের মতো। খেতেও ঠিক আপেলের মতো সুস্বাদু। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাণিজ্যিকভাবে এ চাষ শুরু হয়েছে। এ চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছে কৃষক মো. মোস্তাকিম সরকার।

বিশাল জায়গায় চারা রোপণের ৭ মাসের মধ্যেই গাছগুলোতে ফলে ভরপুর হয়ে উঠেছে। বাজারে এই কুলের চাহিদা ও দর ভালো হওয়ায় কৃষক মোস্তাকিমের মুখে দেখা দিয়েছে হাসিক ঝিলিক। আবহাওয়া অনুক’লে থাকলে যাবতীয় খরচ বাদে এই চাষ থেকে তার দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হবে বলে জানান তিনি।

বল সুন্দরী ফল চাষ করে ইতিমধ্যে তিনি এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন। দূর দূরান্ত থেকে অনেক বেকার লোকজন এসে দেখছেন এবং বিষয়ে নানা পরামর্শ তার কাছ থেকে নিচ্ছেন।

কৃষক মো. মোস্তাকিম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ধাতুরপহেলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে গত কয়েক বছর ধরে মায়ের দোয়া বহুমুখী কৃষি খামার নামে ২৫ বিঘা জমিতে এ খামার গড়ে তুলেছেন। ওই খামারে তিনি ৩ বিঘা জমিতে বল সুন্দরী কুল চাষ করেন। বছর জুড়ে নানা প্রকার সবজিসহ বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী ফল চাষ করে অল্প এলাকায় এ চমক সৃষ্টি করেন। তবে তার এ কাজে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আদমপুর গ্রামে মোস্তাকিম সরকার ৭ মাস আগে বর্গাকৃত ৩ বিঘা জমিতে প্রায় ৬ শতাধিক বল সুন্দরী আপেল কুলের গাছের চারা লাগান। কুল গাছের চারা রোপনসহ তার দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়। চারা রোপণ করার ৭ মাসের মাথায় চারাগুলো পরিপক্কতা পেয়েছে। গাছে থোকায় থোকায় ধরেছে দৃষ্টি নন্দন এই ফলও। যে দিকে দৃষ্টি যায় শুধু ফল আর ফল চোখে পড়ছে। প্রতি গাছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কেজি করে আপেল কুল ধরেছে। ইতোমধ্যে বাগান থেকে কুল বিক্রি শুরু হয়েছে। শ্রমিকরা বাগানে কুল তোলা ও বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো ফল বিক্রি হয়েছে বলে জানায়। প্রতি কেজি ১০০ টাকায় পাইকারী দরে বিক্রি করেছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এই বাগান থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকার মতো ফল বিক্রি করতে পারবে তিনি আশা প্রকাশ করছেন। এদিকে এই ফলটি খেতে স্বসাধু হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ পরিচিতি লাভ করায় দিন দিন বেড়েছে ক্রেতাদের চাহিদাও।

মোস্তাকিম সরকার বলেন, তার এই বাগানে ৩ জন শ্রমিক দিনরাত পরিচর্যা করছেন। এই প্রথম তিনি এই কুল চাষ করেন। তিনি আরও বলেন, এই ফলটি অতি মিষ্টি, খেতে আপেলের মতোই ও সুস্বাদু। বিক্রি শুরু হওয়ায় ভালো সারা পাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে যাবতীয় খরচ বাদে তার দেড় থেকে দুই লাখ টাকার উপর আয় হবে বলে জানায়।
সরেজমিনে বল সুন্দরী কুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ পাতার ফাঁকে লুকিয়ে রয়েছে বল সুন্দরী কুল। দেখতে অনেকটা মাঝারি সাইজের আপেলের মতো। রঙ আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। খেতে অনেক সুস্বাধু ও মিষ্টি।
কৃষক মো. মোস্তাকিম সরকার দীর্ঘ সময় প্রবাসে ছিলেন। সেখান থেকে চলে আসার পর দেশে কিছু করার চিন্তা করেন। কোনো উপায় না পেয়ে কৃষির প্রতি তার আগ্রহ বাড়ে। শুরু করেন আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ। এ চাষে তিনি স্বল্প সময়ে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। কৃষি অফিস ও কৃষিবিদদের পরামর্শ এবং নিয়মিত ইউটিউব চ্যানেলে কৃষি সংক্রান্ত নানা বিষয় দেখে এ কাজে তার অনেক সহায়তা হয়। তাদের পরামর্শ ও অভিজ্ঞার আলোকে গত ৩ বছর ধরে তিনি ২৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে তরমুজ, ক্যাপসিকাম, সিমলা, শসা, টমেটো, ঢেঁড়স, লাউ, বেগুনসহ নানা প্রকার সবজি চাষ করছেন ।

এদিকে কৃষিতে ব্যপক সফলতা লাভ করায় তিনি এখন এলাকায় একজন সফল ও আদর্শ কৃষক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। বর্তমানে স্ত্রী ২ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে সুখ শান্তিতেই দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয়রা বলেন, একটা সময় এ এলাকার শুধু ধান চাষ হতো। এখন পাল্টে গেছে ফসলের মাঠগুলো। কৃষক আর কেবল একটি ফসলেই নির্ভরশীল নয়। তারা নিজের প্রয়োজনেই খুঁজে নিয়েছে বিকল্প আর রকমারি ফসল। মাঠ ভরে আছে মৌসুমী সবজিসহ নানা ফলে।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, এ উপজেলায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে এ চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছেন। এরমধ্যে কৃষক মো. মোস্তাকিম সরকার একজন সফল কৃষক। নতুন জাতের এই কুলের চাষ করে তিনি এলাকায় চমক কৃষ্টি করেছেন। বেকার ও শিক্ষিত যুবকরা কুল চাষে এগিয়ে এলে একদিকে বেকারত্ব দূর হবে, অপরদিকে উপজেলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও আসবে। তিনি কুল চাষে আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads