• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

একুশের প্রথম কবিতা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রথম রচিত কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। এটি ভাষা আন্দোলন তথা জাতীয় ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিলও বটে। আলোচ্য কবিতাটিতে অমর একুশের ভাষাশহীদদের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে অগ্নিঝরা বিদ্রোহী কণ্ঠই শুধু উচ্চারিত হয়নি, একুশের চেতনা, স্বাধীনতার চেতনা সর্বোপরি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও জাতীয় মুক্তির চেতনাও প্রতিফলিত হয়েছে। একুশের প্রথম কবিতাটি ভাষা আন্দোলনের আবেগ সৃষ্টিকারী সংগ্রামী মানস চেতনার হাতিয়ার হিসেবে ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই কবিতার কবি ভাষা সংগ্রামী ও চট্টগ্রাম জেলা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক কবি মাহবুব-উল আলম চৌধুরী।

ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক অবস্থা থেকেই মাহবুব-উল আলম চৌধুরী রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের চিন্তাভাবনা ও আন্দোলনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সচেতন নাগরিক হিসেবে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানিদের সেই বুলেটের তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং একুশে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রামে বসেই ইতিহাসের অমর কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ রচনা করেন তার সংগ্রামী আদর্শের আলোকে। আর এটিই হচ্ছে আমাদের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত প্রথম কবিতা। ২১ তারিখ রাতে হাতে লেখা ১৭ পৃষ্ঠার এই বৃহৎ কবিতাটি চট্টগ্রামের কোহিনুর প্রেসে মলাটসহ ৮ পৃষ্ঠায় পুস্তিকা আকারে ১৫ হাজার কপি প্রকাশ করা হয় খুব গোপনে। দাম ধার্য করা হয় দুই আনা। ২২ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে জনসম্মুখে কবিতাটি পাঠ করা হয়। কবিতাটি পাঠের সাথে সাথে এর প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের ওপর হুলিয়া জারি করা হয়। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠী ভীত হয়ে কবিতাটি সাথে সাথে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে।

কবিতাটিতে কবি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের একান্ত প্রাণের কথাগুলোই বলেছেন সহজ ভাষায়। প্রাণের বিনিময়ে মাতৃভাষা রক্ষার বিষয়টি কবি কখনই মেনে নিতে পারেননি; বরং তিনি চেয়েছেন সমগ্র বাংলা ভাষাভাষী জনগণকে সংগঠিত এবং দাবি আদায়ের আন্দোলনকে চাঙা করতে। কবিতাটিতে তিনি দাবি আদায়ের বিদ্রোহ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সুনিপুণভাবে।

উল্লেখ্য, ৫২-সালে লেখা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ কবিতাটির মধ্যেই লুকিয়ে ছিল ভাষা আন্দোলনের সফলতা তথা স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ যা আজ বাংলাদেশের সকল আন্দোলনের প্রতিবাদী ভাষা হিসেবেও কাজ করে চলেছে। এই সফল কবিতাটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে বাঙালি জাতির সকল আন্দোলনের সূতিকাগার, ভাষা আন্দোলনের অঙ্কুর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads