• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

বেড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ এপ্রিল ২০২২

রাজধানীতে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করলেও গত দুদিনে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। এছাড়া গত দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা শিশু হাসপাতালেও বেড়েছে ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগী। অভিভাবক ও চিকিৎসকরা বলছেন, সরাসরি ট্যাপ থেকে ওয়াসার পানি পান, ভ্যাপসা গরম ও খাদ্যে অসচেতনতার কারণে শিশুরা বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

গত শুক্রবার হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দেড় মাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যা তার আগের একই সময়ে চেয়ে অনেক বেশি। গেলো এক সপ্তাহে এ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২০২ জন রোগী। এরমধ্যে ১৪ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪০ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়। এছাড়া গত ৮ এপ্রিল ২১ শিশু, ৯ এপ্রিল ৩৬, ১০ এপ্রিল ১৯, ১১ এপ্রিল ১৯, ১২ এপ্রিল ২৩, ১৩ এপ্রিল ২৯, ১৪ এপ্রিল ৪০ এবং সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত ১৫ শিশুকে ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত আবাসিক চিকিৎসক ডা. নাদিরা খান বলেন, ‘যারা ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে আসছে, তাদের বয়স ছয় মাস থেকে আড়াই বছরের মধ্যে। হাসপাতালে আসার পর আমরা উপসর্গগুলো দেখে প্রাথমিকভাবে কিছু পরীক্ষা করি। এরপর চার ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। যদি সমস্যা গুরুতর মনে হয়, তবে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।’ ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খাবারে অনিয়মের কারণে এমনটা বেশি হচ্ছে। রোজায় সব বাসায় ভাজাপোড়া ও তেলযুক্ত খাবারের আয়োজন বেশি হয়। ফলে খাদ্যে অসচেতনতা একটি বড় সমস্যা। তবে গত এক মাস হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের খাওয়ার পানি থেকে বেশি সমস্যা হয়েছে। অনেকে যারা সরাসরি কলের পানি পান করছে সেসব শিশুরা ডায়রিয়াজনিত সমস্যায় ভুগছে বেশি।

তবে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ডায়রিয়া রোগীদের ভরসাস্থল উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে রোগী ভর্তির চাপও কমতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, গত ১ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৪৮ হাজার ডায়রিয়া ও কলেরা রোগী চিকিৎসা নিয়েছে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে। শুরু থেকেই রোগীর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও গত ৮ এপ্রিলের পর থেকে হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তির সংখ্যা কিছুটা কমতে থাকে।

আইসিডিডিআরবির অ্যাসিস্ট্যান্ট সাইনটিস্ট ডা. শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে এসেছে। প্রায় এক মাস পর হাসপাতালে দৈনিক রোগী ভর্তির সংখ্যা হাজারের নিচে নেমেছে। গতকাল শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত সাড়ে ৪০০ রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছে।

গত দুদিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইসিডিডিআরবি হাসপাতলে আসা মোট রোগীর মধ্যে এর আগে শিশুদের ভর্তির হার ছিল ৩০-৩০ শতাংশ। গতকাল ও পরশুর পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে শিশু রোগীর হার বেড়ে ৪০ শতাংশে এসেছে। এমনকি তাদের অধিকাংশই আসছে তীব্র পানিশূন্যতা নিয়ে, যা ঝুঁকির কারণ।

আইসিডিডিআরবি সূত্রে জানা গেছে, মার্চে হাসপাতালটিতে ৩০ হাজার ৩৭২ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। মার্চের মাঝামাঝি থেকেই রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। এরপর ৪ এপ্রিল এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক এক হাজার ৩৮৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্চে মাসে দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ২৩৭ জন। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই ৩৬ হাজার ৯১২ জন হাসপাতালে গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে আমাদের কাছে সহায়তা চাইলে সহায়তা দেওয়া হবে। সিটি করপোরেশন বলছে, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বা পানি বিশুদ্ধ করার দায়িত্ব ওয়াসার। আর ওয়াসা বলছে, আমরা আমাদের পানিতে ডায়রিয়া বা কলেরার কোনো জীবাণু পাচ্ছি না।

আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে এত ডায়রিয়া ও কলেরা রোগী আগে আর কখনো দেখা যায়নি। ভর্তি রোগীদের ২৩ শতাংশই কলেরায় আক্রান্ত। ঢাকার অন্যান্য হাসপাতাল ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর ভর্তি হওয়ার সংখ্যা কমার কোনো লক্ষণ নেই। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

কর্মকর্তারা আরো বলছেন, ২০০৭ সালে বন্যা ও একই সঙ্গে ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হলে তখন রাজধানীতে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাসের এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়। ২০১৮ সালেও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, কিন্তু এবারের পরিস্থিতি সে সময়ের তুলনায় অনেক বেশি উদ্বেগের হলেও সে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও এই প্রতিষ্ঠানের সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসার জন্য মুখে খাবার স্যালাইন তৈরি হয়েছে। কলেরা টিকা তৈরিতেও আমাদের দেশের বিজ্ঞানীদের অবদান আছে। কিভাবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, সে জ্ঞানও আমাদের রয়েছে, কিন্তু এবার দীর্ঘ সময় ধরে চলা ডায়রিয়ার প্রকোপ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না এ পরিস্থিতি লজ্জার।’

জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাজধানীর যে পাঁচটি এলাকার বাসিন্দাদের কলেরা টিকা খাওয়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সেসব এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও ডায়রিয়া রোধ করতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করার দাবি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads