• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির নবম বছর আজ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৪ এপ্রিল ২০২২

আজ ২৪ এপ্রিল, রোববার। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির নবম বছর। ৯ বছর আগে ২০১৩ সালের এই দিনে সাভারে রানা প্লাজা নামের একটি ৯তলা ভবন ধসে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডির ঘটনা ঘটে যা গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দেয়।

রানা প্লাজা একটি বাণিজ্যিক ভবন হলেও এর ভূগর্ভস্থ তলায় গাড়ি রাখার জায়গা, প্রথম তলায় ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, দ্বিতীয় তলায় বিপণিকেন্দ্র এবং তৃতীয় থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত পোশাক কারখানা ছিল। এর ওপরের দুটি তলা খালি ছিল। ঘটনার দিন সকালে মার্কেটের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল তৈরি পোশাক কারখানা। ফলে দুর্ঘটনায় ইট-কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মুহূর্তেই হারিয়ে যায় হাজারেরও বেশি তাজা প্রাণ। আবার সৌভাগ্যক্রমে শত শত পোশাক শ্রমিক প্রাণে বেঁচে যান কিন্তু তাদের বেশিরভাগকেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ধ্বংসস্তূপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত এবং ১ হাজার ১১৭ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরো ১৯ জন। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ১৩৬ জনে। আহত হন ১ হাজার ৫২৪ জন। ২৯১টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা ছাড়াই ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে ১৫৭টি লাশের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়েছে।

তবে এই দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের স্বজনেরা যেমন যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাননি, তেমনি যথাযথ সহায়তা না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে অনেক শ্রমিক ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। তাই হতাহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের ফাঁসির দাবিতে প্রতিবছরই এই দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন।

রানা প্লাজা ধসের আট বছর পূর্তি উপলক্ষে গত বছর একশনএইড বাংলাদেশের এক জরিপে দেখা যায়, রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের ৫১ শতাংশ ২০১৯ সালে বেকার ছিলেন। ২০২০ সালে করোনাকালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ শতাংশ, যা আগের ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে আহত পোশাক শ্রমিকদের সাড়ে ৯ শতাংশের কোনো আয় নেই। আর সাড়ে ১০ শতাংশের আয় ৫ হাজার ৩০০ টাকার নিচে।

জরিপের ফলাফলে আরো বলা হয়, রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৯২ শতাংশই করোনাকালে সরকারের কোনো সহায়তা পাননি। মাত্র ৮ শতাংশ শ্রমিক অল্প কিছু সহায়তা পান। এছাড়া ১৪ শতাংশ শ্রমিকের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। সাড়ে ১২ শতাংশ শ্রমিক মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন। ২০১৯ সালেও এই সংখ্যা ছিল সাড়ে ১০ শতাংশ। এর মানে ২ শতাংশ শ্রমিকের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে।

এদিক, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এ পর্যন্ত ভবনের মালিক রানা, তার পরিবার, সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়রসহ বিভিন্ন জনের নামে পাঁচটি মামলা হয়। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে একটি, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) একটি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিনটি মামলা দায়ের করে।

২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট সম্পদের হিসাব দাখিল না করা সংক্রান্ত নন সাবমিশন মামলায় রানার তিন বছর কারাদণ্ড হয়। এ মামলায় তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ  জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার মা মর্জিনা বেগমের ছয় বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তার ছয় কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯০ টাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন আদালত। এছাড়া ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের আরেকটি মামলা চলমান আছে। তবে ভবন ধসের ঘটনায় মূল মামলার বিচারে অগ্রগতি নেই।

২০১৬ সালে ১৮ জুলাই হওয়া মূল মামলায় বিচার শুরু হয়। এদিন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন। তবে উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশের কারণে এ মামলায় দীর্ঘ এ সময়েও কোনো সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।

এর আগে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে রানার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। রানা প্লাজা ধস হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন কেবল ভবনের মালিক সোহেল রানা। বাকি আসামিদের মধ্যে জামিনে আছেন ৩২ জন, পলাতক ছয়জন এবং মারা গেছেন দুইজন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads