• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ২৬ এপ্রিল ২০২২

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষের ঈদযাত্রায় বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কয়েকদিন ধরে রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। ভিড় বাড়তে শুরু করেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন ও গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। তবে লঞ্চ, বাস ও ট্রেনের কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না যাত্রীরা। এতে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

মহামারি করোনা পুরো পৃথিবীকে কতটা বিপর্যস্ত করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বার বার করোনাভাইরাসের ধরন পাল্টে ওলটপালট করে দিয়েছে বিশ্ব। যদিও গত দু-তিন মাস যাবৎ এর সংক্রামণ নিম্নমুখী। তবে সংক্রামণ যে আবার বাড়বে না, তা এখনো বলতে পারছে না স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা। ফলে করোনা পরিস্থিতি আবার বাড়ার আতঙ্ক রয়েই গেছে।

এখনো বলা যাচ্ছে না বাংলাদেশে করোনার আবার কোন ভ্যারিয়েন্ট ছড়ায়। তবে দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের উপস্থিতি আছে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো গত বছর ওমিক্রনের সামাজিক ট্রান্সমিশন বেশি হওয়ার কারণে সংক্রামণ বেড়ে ছিল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাই এখনো কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। নইলে হঠাৎ করে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আর অতিরিক্ত করোনা রোগী হলে তাদের সামলানো কঠিন হয়ে যাবে। তখন ভেঙে পড়তে পারে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এ অবস্থায় নিজেকে বাঁচাতে নিজেরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ তাদের। করোনার বিধিনিষেধ শিথিল থাকায় দুই বছর পর এবার নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পাড়ছে মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মানার কয়েক দফা শর্ত দিয়ে গত বছর ১১ আগস্ট থেকে দেশের লকডাউন ও বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। এরপর অফিস, কলকারখানা, দোকানপাট ও যানাবাহনসহ আস্তে আস্তে সব কিছু খুলে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিশেষ কিছু শর্ত দিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়। সেই থেকে দেশে স্বাভাবিক জীবনযাপন চলছে।  

এদিকে গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ ব্রিফিং-এ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা সংক্রমণ আবার বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যুহার এখন শূন্যের কোটায়। সংক্রমণের হারও শূন্যের কোটায় চলে গেছে। এটা যদি ধরে রাখতে হয়, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ আমাদের মাস্ক পরতে হবে, যতটুকু সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। নইলে যেকোনো সময় দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে, আপনাদেরও হয়েছে। আমরা অনেকগুলো ঢেউ দেখেছি। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউ দেখেছি। চতুর্থ ঢেউ যে আসবে না, তা হলফ করে কেউ বলতে পারে না। আমরাও পারি না। দেয়ার ইজ অলওয়েজ এ পসিবিলিটিজ অব ফোর্থ ওয়েভ, হুইচ ইজ নাউ টেক ইন প্লেস ইন ইন্ডিয়া। কাজেই আমাদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে।

এর আগে রোববার জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানে (নিপসম) জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শঙ্কা প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আবারো করোনাভাইরাসের বাড়ছে সংক্রমণ বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশেও আবার করোনা বাড়তে পাড়ে। তাছাড়া বিশ্ব পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে সংক্রমণ ফের বাড়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ, ভারতে সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে আমাদের দেশের অনেকেই যাতায়াত করছেন। তাদের নজরে রাখতে হবে, আমাদের সচেতন হতে হবে। যারা আসা-যাওয়া করছেন সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না যায়।

অন্যদিকে ঈদযাত্রা কেন্দ্র করে দেশে আবারো সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গতকাল সোমবার কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৫৭তম সভা গত ২৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা। সভাপতি জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির নতুন সদস্যদের স্বাগত জানান এবং বিদায়ী সদস্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু করেন।

সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণ এবং দেশে সংক্রমণের হার ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রণে রাখতে করণীয় বিষয়ে কারিগরি পরামর্শক কমিটির মতামত জানতে চেয়েছে বলে জানানো হয়। এ বিষয়ে সভায় কমিটির সব সদস্যদের উপস্থিতিতে বিস্তারিত আলোচনা শেষে সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো-

১. বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ নিম্নমুখী হলেও পার্শ্ববর্তী দেশসহ এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, যা উদ্বেগজনক। জাতীয় কারিগরি কমিটি আশংকা করে এখন থেকেই সতর্ক না হলে দেশেও সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিকভাবে মাস্কপরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি। একইসঙ্গে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়।

২. আসন্ন ঈদুল ফিতরে বাজার, কেনাকাটা এবং ঘরমুখী মানুষের যাতায়াতের সময় মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া তারাবির নামাজ ও ঈদ জামাতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

৩. কোভিড-১৯ মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হাসপাতালগুলোর সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সভা আয়োজন করে এই বিষয়ক প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় গুরুত্বারোপ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের পর এ পর্যন্ত ৪টি ঈদ উৎসব উদ্যাপিত হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকটি ঈদে মানুষকে যার যার স্থানে রাখার চেষ্টা করা হলেও তাতে সফলতা আসেনি। মানুষকে আটকে রাখতে গণপরিবহন, লঞ্চ ও ট্রেন সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু তারা মাইক্রোবাস, পিকআপ, প্রাইভেটকার, ট্রাকে করে দল বেঁধে বাড়ি ফিরেছেন। ওইসব ঈদযাত্রায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। এর পরই সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছিল। আর এবারতো সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে চলছে। তাই এবারও সে আশঙ্কা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, দেশ করোন সংক্রমণ নিম্নমুখী হলেও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। এখনো দৈনিক সংক্রামিত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশসহ এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, যা উদ্বেগজনক। তাই এখন থেকেই আমাদের সতর্ক হতে হবে।  সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads