• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
রাজধানীর সাত পয়েন্টে যানজট

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

রাজধানীর সাত পয়েন্টে যানজট

  • রতন বালো
  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০২২

ঈদযাত্রার শুরুতেই রাজধানী ঢাকা থেকে বের হতে ও ঢুকতে তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ঘরমুখী মানুষ। রাজধানীর সাতটি পয়েন্টে  ঢুকতে বা বের হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই সাত পয়েন্ট হচ্ছে, গুলিস্তান-সায়েদাবাদ-যাত্রীবাড়ী , দোলাইপাড় মোড় জুরাইন রেলক্রসিং, বংশাল মোড়-বাবুবাজার ব্রিজ, গাবতলী মোড়-আমিনবাজার ব্রিজ, আব্দুল্লাপুর মোড়-কামারপাড়া, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার মোড় ও সাইনবোর্ড-কাঁচপুর ব্রিজ। এসব পয়েন্ট অতিক্রম করতে সময় লাগছে দেড় ঘণ্টা থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত।

গুলিস্তান-সায়েদাবাদ-যাত্রীবাড়ী র দূরুত্ব ২ কিলোমিটার পার হতে সময় লাগে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। আর বর্তমানে সেখানে এক থেকে  দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় যানজটে। ১০ মিনিটের সড়ক গাবতলী মোড়-আমিনবাজার ব্রিজ। সেখানে এই অংশ পার হতে সময় লাগছে ১ ঘণ্টা। ৩ কিলোমিটার সড়ক যাত্রাবাড়ী-ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার মোড় পর্যন্ত। সেখান থেকে বের হওয়া ও প্রবেশের সময় লাগার কথা ৩০ মিনিট। সেখানে লেগে যাচ্ছে দেড় ঘণ্টা। এভাবেই রাজধানীবাসীদের ঢাকা থেকে বের হতেই দীর্ঘ সময় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রীরা রাজধানীতে প্রবেশ ও বের হয় গাবতলী, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ,  পোস্তগোলা ও বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে। ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখেই যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে জুরাইন রেলগেট, বংশাল মোড় থেকে বাবুবাজার ব্রিজের পর্যন্ত ১-২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকতে হয় ঘরমুখো যাত্রীদের। এর মধ্যে জুরাইন রেলগেটে এলাকায় রাস্তা দখল করে ফুটপাতের দোকান, এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্কিং ও ট্রাফিকের অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিনিয়ত এই সড়কগুলোতে যানজট গেলে থাকে বলে ভোক্তভুগীরা জানান।

রাজধানীর গুলিস্তানে সড়কের নিয়ন্ত্রণ যেন কারো হাতে নেই। এই সড়কটি দখল হয়ে গেছে ফুটপাতের দোকান ও অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ে। দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঈদযাত্রার যানযটের ভোগান্তি শুরু হয় গুলিস্তান থেকেই। এই মুখ দিয়ে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের যাত্রীরা যাতায়াত করে। রাজধানী থেকে বের হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই মুখের প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টা যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। ঈদের আগে তা আরো দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারগুলোতে মানুষজনকে অসহনীয় যানজটে দুর্ভোগ পোহানোর অভিযোগ করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি জানান, এসব এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিষ্কার রাখা ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’ তা না হলে আগামী ২৫ রমজান থেকে যানজটে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে জানান তিনি।

ঈদের আগেই রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সড়কে যানজটে বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। রাস্তার পাশে অবৈধ স্থাপনা, ফুটপাতের দোকান, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, খানাখন্দ সড়ক ও নির্মাণাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের কারণে রাজধানীতে প্রবেশমুখেই প্রতিনিয়ত প্রচণ্ড-যানজটের শিকার হতে হয় আন্তঃজেলা যানবাহনকে।

অপরদিকে রাজধানীর স্বামীবাগ এলাকায় ট্রাকস্ট্যান্ড পাশের সড়কের অর্ধেক দখল করে পণ্যবাহী ট্রাক ও ঢাকা-নরসিংদী রুটের মেঘালয় পরিবহনের বাসগুলো রাখা হয়। এ কারণে সায়েদাবাদ রেলক্রসিং থেকে রাজধানীর সুপার মার্কেট পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকতে হয় যানবাহনকে। এছাড়া রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে ইউটার্ন থাকায় প্রতিদিন আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা মার্কেটের সামনে আটকে থাকতে হয়। ঈদের সময় তা আরো বাড়বে বলে ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটের বাসচালকরা জানান।

রাজধানীর সুপার মার্কেটের সামনে আলম নামের ট্রান্স সিলভা পরিবহনের এক চালক বলেন, পুলিশের লইগ্যা এহানে জ্যাম লাগে। মার্কেটের মোচরে টার্ন নেয় গাড়িগুলো। পুলিশ টাকা খায়। এর লইগ্যা সায়েদাবাদ জনপথ মোড় থেকে বলধা গার্ডেন পর্যন্ত জ্যাম লাইগ্যা থাকে। ঈদের সময় আরো খারাপ অইবো। তিনি জানান, এই যানজটের জন্য অনেকে সায়েদাবাদ না গিয়ে দয়াগঞ্জ হয়ে দোলাইপাড় দিয়ে মাওয়া রুটে যাতায়াত করে। রাজধানী সুপার মার্কেটের যানজটের কারণে সায়েদাবাদ, দয়াগঞ্জ ও বলধা গার্ডেনের এই তিন সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

গত দুই দিন সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার বেশিরভাগ সড়কের দুই পাশে অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাতের দোকান বসানো হয়েছে। এছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় প্রতিদিন সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী মোড় পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। এছাড়া ইত্তেফাক মোড় থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়া আরিচা ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটের যানবাহনগুলো গাবতলীর আমিনবাজার সেতু দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরাও আমিনবাজার ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। ঈদের সময় গাড়ির চাপে গাবতলী থেকে আমিনবাজার সেতু ১ কিলোমিটার সড়কে দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে যাত্রীরা জানান।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যানবাহনগুলো টঙ্গী ব্রিজ দিয়ে রাজধানী থেকে বের হয়। এ পথে গাজীপুর থেকে উত্তরা বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণ কাজে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। সরু রাস্তার কারণে আবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ পর্যন্ত সড়কেও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে জানার জন্য সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যানের নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি কোনো কথা বলেন নাই। তিনি পরিচালক (প্রশাসন) মো. আজিজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তিনি জানান, বনানীর প্রধান কার্যালয়ে তৃতীয় তলায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বিআরটিএ ও বিআরটিসির সমন্বয়ে। আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ৮ দিন বিভিন্ন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

ঈদে যোগাযোগব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে বলে জানান, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেন। পুলিশের লোকসহ সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে ঈদে যাতায়াতে সড়ক-মহাসড়কে কোনো সমস্যা না হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads