• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮

জাতীয়

বাস ও ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৯ এপ্রিল ২০২২

ঈদের বাকি আর মাত্র দুই থেকে তিনদিন। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে কয়েকদিন ধরে রাজধানী ছাড়ছে লাখো মানুষ। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই যাতায়াত করতে পারছে ঘরমুখো মানুষ। ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন গতকাল বৃহস্পতিবারও রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন ছেড়েছে। তবে বেশিরভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেলেও কিছু ট্রেন ছেড়েছে বিলম্বে। আর কাউন্টারে যাত্রী সংকটের কারণে বাতিল হয়েছে বেশকিছু বাসের শিডিউল। এতে ঈদ উৎসবের যাত্রায় কেউ পেয়েছেন স্বস্তি, আবার কেউ পড়েছেন ভোগান্তিতে।

প্রতিবছর ঈদ ঘিরে দেশের প্রতিটি যাতায়াত মাধ্যমে থাকে উপচেপড়া ভিড়। এ বছরের চিত্রও ব্যতিক্রম নয়। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে যাত্রীচাপ নেই। কাউন্টারগুলোও প্রায় ফাঁকা। যাত্রীসংকটে কিছু কিছু দূরপাল্লার বাসের শিডিউল বাতিল করা হয়। তবে দুপুরের পর থেকে যাত্রীসংখ্যা কিছুটা বাড়তে থাকলেও তা সন্তোষজনক ছিল না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে ঈদযাত্রার দ্বিতীয় গতকাল ট্রেনে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ। তবে টিকিটধারীদের চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীর চাপ ছিল অনেক বেশি। নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে স্টেশন ছাড়তে দেরি করছে প্রতিটি ট্রেনই। এর মধ্যে কয়েকটি ট্রেনের সিডিউল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে নীল সাগর এক্সপ্রেস ২ ঘণ্টা ৫ মিনিট দেরিতে ছাড়ে। এছাড়াও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে না পৌঁছানোর কারণে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে নিয়ে যাওয়া হয় রংপুরগামী যাত্রীদের। মূলত আব্দুল্লাহপুরে মালবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার কারণেই অন্যান্য ট্রেনগুলো সময়মতো নিজ গন্তব্যে রওনা দিতে পারেনি। সরেজমিন দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাইকে জানানো হচ্ছে, বিনা টিকিটে ভ্রমণ না করার জন্য। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ থেকেও বিরত থাকার কথা বলা হচ্ছে। বেশিরভাগ লোকজনের হাতে টিকিট থাকলেও অনেকের হাতে কোনও টিকিট। বিনা টিকিট কিংবা নানাভাবে ম্যানেজ করে তারা ট্রেনে উঠে পড়ছেন। এতে করে যারা টিকিট কেটেছেন, তারা কিছুটা ভোগান্তিতে পড়ছেন। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে গতকাল বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেনের প্রতিটি আসন পূর্ণ হয়ে গেছে। সিটিং যাত্রীর বাইরে কমলাপুর থেকেই বিপুল সংখ্যক লোককে ট্রেনে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা জানান, তারা ট্রেনের টিকিট পাননি, তাই বাধ্য হয়েই টিকিট ছাড়াই ট্রেনে উঠেছেন। আবার কেউ কেউ সিট না পেলেও টিকিট ম্যানেজ করে ট্রেনে উঠেছেন।

ট্রেনের সিটে বসা যাত্রীরা বলছেন, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যদি এভাবে টিকিট ছাড়া লোকজন দাঁড়িয়ে থাকে, সামনের স্টেশনগুলো থেকে তো আরও যাত্রী উঠবে। তখন তো ট্রেনে পা ফেলার জায়গা থাকবে না। অগ্রিম টিকেট কাটতে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, ঠিক তেমনি বাড়ি যেতেও এই ভিড়ের মধ্যে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হবে যাত্রীদের। সকাল থেকে যতগুলো ট্রেন কমলাপুর রেলস্টেশন এবং বিমানবন্দর রেল স্টেশন ছেড়ে গেছে, সবগুলো ট্রেনে ছিল যাত্রী পরিপূর্ণ। গতকাল মোট ৩৭টি ট্রেনের কমলাপুর ছেড়ে যায়।

অন্যদিকে রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়নি। সরেজমিনে রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেখানে যাত্রীচাপ ছিলনা। কাউন্টারগুলোও প্রায় ফাঁকা। যাত্রী সংকটে কিছু কিছু দূরপাল্লার বাসের সিডিউল বাতিল করা হয়। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদের সরকারি ছুটি আজ (গতকাল) শুরু হওয়ায় গত কয়েকদিন যাত্রীচাপ তেমন ছিল না। আশা ছিল আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় হবে। কিন্তু যাত্রীর চাপ না থাকায় তারা হতাশ। তবে দুপুরের পর থেকে যাত্রীসংখ্যা কিছুটা বড়তে থাকলেও প্রস্তুতি অনুযায়ী তা সন্তোষ জনক নয়। 

গাবতলীতে দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলরত গোল্ডেন লাইন বাসের কাউন্টারে কথা হয় রানা নামের একজনের সঙ্গে। তিনি জানান, যাত্রী সংখ্যা খুবই কম, তাই সকাল থেকে তিনটি বাস সিট খালি রেখে ছাড়তে হয়েছে। ৪০ সিটের বাসে অর্ধেকে সিটই ফাঁকা। যে কারণে দিনের বেলা আর কোনো বাস না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মিরপুরের বাসিন্দা শিক্ষার্থী তামিম গ্রামের বাড়ি খুলনায় যেতে এদিন সকালে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে আসেন। তিনি গত ২৫ এপ্রিল অনলাইনে সোহাগ পরিবহন থেকে খুলনার টিকিট সংগ্রহ করেছেন। আজ বেলা ১১টায় তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের বাস ছাড়ার কথা। তামিম বলেন, ভেবেছিলাম বাসস্ট্যান্ড অনেক ভিড় হবে, কিন্তু এখানে এসে উল্টোটা দেখলাম। মানুষের ভিড় কম থাকায় একরকম ভালই লাগছে। ঈদের আগে এ ধরনের ঢিলেঢালা চিত্র আগে দেখিনি।

সরকারি চাকরিজীবী মঞ্জু মিয়াঁ আগেভাগে ছুটি নিয়ে সপরিবার বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি বলেন, একদিন আগে ছুটি পাওয়ায় পরিবার নিয়ে রংপুরে দেশের বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছি। গাবতলীতে এসে ডিপজল এন্টারপ্রাইজ থেকে রংপুরের টিকিট নিয়েছি। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ভাড়া কিছুটা বেশি দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়েছে। তবে টিকিট পেতে কোনো ভোগান্তি হয়নি।

ডিপজল কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা সেন্টু মিয়া বলেন, পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় দিনের বাসের শিডিউল বাতিল করা হচ্ছে। টিকিট বিক্রি হওয়ার পর বাস ছাড়ার সিডিউল করা হচ্ছে। যাত্রীদের যেন কোনো রকম হয়রানিতে পড়তে না হয়, সেজন্যই এমন সিদ্ধান্ত।

এদিকে সকালে বাসস্ট্যান্ডে এমন অনেককেই দেখা গেছে, যারা শুক্র ও শনিবারের ঈদযাত্রার টিকিট সংগ্রহ করতে এসেছেন। তবে বেশিরভাগ পরিবহনের তিনদিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

এদিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঢাকা সদরঘাটের পরিস্থিতি অনেকটা ভালো দেখা গেছে। গতকালও যাত্রীদের মাত্রাতিরিক্ত চাপ দেখা যায়নি। ফলে নির্ধারিত সময়ে লঞ্চগুলো ছেড়ে বরিশালের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। তবে লঞ্চের যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি একেবারেই ছিল না।   

অন্যদিকে গতকাল সকাল থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে তেমন চাপ ছিলনা। তবে দুপুরের পর থেকে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই দুই নৌপথে ফেরিতে গত কয়েক দিন যানবাহনের বেশ চাপ থাকলেও গতকাল দেখা গেচে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা ছয়টি ফেরি চলাচল করবে। বুধবার এ নৌরুটে পাঁচটি ফেরি চলাচল করলেও গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চলাচল করছে নয়টি ফেরি। জানা গেছে, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে ছয়টি ফেরি এবং মাঝিরকান্দি-শিমুলিয়া রুটে চারটিসহ উভয় রুটে ঈদের আগে ও পরে ১০টি ফেরি চলবে।

ঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের চাপ তেমন না থাকলেও ছিল ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির দীর্ঘ সারি। যাত্রীরা ঘাট এলাকায় পৌঁছা মাত্রই ফেরিতে উঠতে পারলেও যানবাহনগুলোকে এক থেকে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েচে। ঘাট এলাকায় যানবাহন ও যাত্রীর বাড়তি চাপ না থাকায় কোনো ভোগান্তি নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস ও ছোট গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। ঘাট এলাকায় যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি নেই।

এদিকে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যানজট ছিল না ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। এ মহাসড়কে স্বাভাবিক গতিতেই চলেছে যানবাহন। তবে বিকেলে থেকে যানবাহনের কিছুটা ধীরগতি লক্ষ করা গেলে তা তীব্র ছিল না। গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে কোথাও যানবাহনের জট দেখা যায়নি। ফলে ভোগান্তি ছাড়াই স্বস্তিতে মানুষ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন।

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আতাউর রহমান বলেন, মহাসড়কে এখনও যানবাহন স্বাভাবিক গতিতেই চলাচল করছে। এখনও কোথাও জটের সৃষ্টি হয়নি। তবে বুধবার রাতে ঢাকামুখী লেনে গাড়ির ধীরগতি ছিল। যানজট নিরসনে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মহাসড়কে কাজ করছেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এ বছর আগের মতো এবার তীব্র যানজট হবে না বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads