• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
এক হাজার টাকার তাল শাঁস বিক্রিতে লাভ ৫ হাজার টাকা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

এক হাজার টাকার তাল শাঁস বিক্রিতে লাভ ৫ হাজার টাকা

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ৩১ মে ২০২২

প্রকৃতিতে এখন চলছে মধু মাস। আর মধু মাসের অন্যরকম বৈশিষ্ট্য হলো আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ নানা রকেমের সু-স্বাধু ফল পাওয়া যায়। এ মাসে জ্যৈষ্ঠ্যতে নানা রকম ফলের মধ্যে রয়েছে তাল শাঁসও। ইতিমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার, পাড়া মহল্লায় কাঁচা তাল বিক্রি বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রতি পিস তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। তবে গরম বেশী থাকায় তালের শাঁস বিক্রির চাহিদা ও বৃদ্ধি পেয়েছে। গরমের মধ্যে তৈলাক্ত খাবারের চেয়ে তালের শাঁস অনেক উপকরী হওয়ায় সৌখিন ক্রেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে তাল শাঁস বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জ্যৈষ্ঠের ভ্যাপসা গরমে শরীরের পানি শূন্যতা দুর করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে এই ফলটি। ফলটি ফরমালিন মুক্ত, পুষ্টিকর খাদ্য হওয়া এবং বিভিন্ন ধরণের ওষুধি গুন থাকায় মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী । সহজলভ্য ও মুখরোচক হওয়ায় বিভিন্ন বয়সী শ্রেণি পেশার মানুষের এ সময়ের পছন্দের ফল তাল শাঁস।

চিকিৎসকরা জানায়, তাল শাঁসে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, লিভার সমস্যা দুর হয়, তালে থাকা ভিটামিট সি ও বি কমপ্লেক্স পানি পানের তৃপ্তি বাড়িয়ে খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে, স্মৃতিশক্তি ও শারীরিক সুস্থ্যতা বৃদ্ধি করে, ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে, তালে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম থাকায় দন্ত ও হাড়ের সুরক্ষায় সহায়তা করে, তালে আছে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, আয়রন, সালফার, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ কপারের মতো বেশ কিছু উপকারী উপাদান যা চোখের জন্য খুবই উপকারী হওয়ায় চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পাই, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে।

মৌসুমী তাল শাঁস বিক্রেতা মো. নূরুল আলম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে তিনি মৌসুমী তাল বিক্রি করছেন। ওইসব তাল গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়। বেশীভাগ গাছ তাল ছোট অবস্থায় কেনা হয়ে থাকে। ওই তাল পরিপক্ক হলে গাছ থেকে কেটে হাট বাজারে বিক্রি করা হয় । চুক্তি এক একটি গাছ কেনা হয় ১ হাজার থেকে ১২শ টাকায়। গড়ে এক একটি গাছের তাল বিক্রি হচ্ছে ৬০০০-থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায়। খরচ বাদে প্রতিটা গাছ থেকে লাভ হচ্ছে ৫ হাজার টাকার উপর।

মো. ছিদ্দিক মিয়া বলেন, প্রতিবছর মধু মাসে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে তাল ক্রয় করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। এ মৌসুমে বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭টি তাল গাছ চুক্তি করে রেখেছেন। যখন যেখানে খবর পান সেই জায়গা থেকে তাল সংগ্রহ করছেন বলে জানায়। গড়ে ১হাজার থেকে ১৩শ টাকায় কেনা হয়েছে। স্থানীয় বাজারে তাল শাঁসের ভালো কদর রয়েছে। একটি তাল ২০ টাকা থেকে উপরে ২৫ টাকা করে বিক্রি করা হয়।। দৈনিক ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ তাল শাঁস বিক্রি হয় বলে জানায়। তাল বিক্রিতে ভালো লাভ হওয়ায় সে খুবই খুশি। তিনি আরো বলেন এটি ঠান্ডা ও মিষ্টি জাতীয় সুস্বাধু একটি ফল। গরম থেকে এসে এই ফলটি খেলে খুবই ভালো লাগে এবং মনটা জুড়িয়ে যায়। সব বয়সের মানুষের কাছে তাল শাঁস বেশ প্রিয় হওয়ায় দিন দিন কদর বাড়ছে বলে জানায়।

কৃষক মো. ফারুক মিয়া বলেন, তার বাড়ি সংলগ্ন পুকুর পাড়ে তার ৪ টি তাল গাছ রয়েছে। এরইমধ্যে ২টি গাছে তাল বিক্রির উপযুক্ত হওয়ায় ২ হাজার ৫শ টাকায় তিনি বিক্রি করেছেন।

স্থানীয় কৃষকরা জানায়, এক সময় মানুষ সখ করে বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে তালের বীজ বোপন করতো। গাছ থেকে তাল পাড়া খুবই কষ্টকর হওয়ায় তাল গাছ বোপন কমে যায়। এলাকায় তালের চাহিদা থাকায় পাইকাররা বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রয় করে বিক্রি করছেন।

শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, তালের শাঁস একটি সু-স্বাধু ফল। বাজারে আসা অসংখ্য ফলের চেয়ে এই ফলের বৈশিষ্ট্য আলাদা। তাই এই নতুন ফলটি খাওয়ার জন্য ৪ টি কেনে হয়। বাড়িতে নিয়ে সবাই মিলে খাব। তিনি আরো বলেন গত বছরের চাইতে এবার দাম কিছুটা বেশী বলে জানায়।

ক্রেতা কাজী জান্নাতুল মাওয়া বলেন, স্কুলের সামনে বিক্রি হতে দেখে একটি তাল কেনে হয়। আজই প্রথম সে তাল খেয়েছেন বলে জানায়। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. বাদশা মিয়া বলেন, গরমে তার ছেলে মেয়েরা তাল খেতে খুবই পছন্দ করে তাই তাদের জন্য কেনা হয়েছে।

উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো: বিল্লাল হোসেন বলেন, বৈশ্বিক আবহাওয়ার কারণে তাল গাছ সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আসলে তালগাছ দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে এটি দুর্যোগ সহনশীল একটি গাছ। তকে কি ভাবে এলাকায় তাল গাছ বৃদ্ধি করা যায় এ জন্য নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন তালের শাঁস সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এটি মৌসুমী একটি ফল। তালের রসও অনেক উপকারী। তালের রস দিয়ে গুড়, মিসরি এসব তৈরি হয়। খেজুরের গুড়ের মতো এটিও পুষ্টিকর।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো: হিমেল খান বলেন, একটি তাল শাঁসে ৯২ শতাংশ জলীয় অংশ, ক্যালরি থাকে ২৯ শতাংশ, শর্করা ৬ দশমিক ৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪ মিলি গ্রাম। তিনি আরো বলেন, এর বেশীভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় শরীরের পানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। যদি আবহাওয়ার কারণে শরীর থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে যায় সেটিও পূরণ করতে পারে। তিনি আরো বলেন শুধু তাল শাঁসই নয় রস ও পাকা তাল দেহের জন্য খুবই উপকারি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads