• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
সীমান্তে আটকে আছে চার লাখ টন গম

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

সীমান্তে আটকে আছে চার লাখ টন গম

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৩ জুন ২০২২

বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় অংশে আটকে আছে গম বোঝাই শত শত ট্রাক। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন স্থলবন্দরে আটকে থাকা এসব গমের পরিমাণ প্রায় চার লাখ টন। বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য বিপুল পরিমাণ এই গম অন্তত তিন সপ্তাহ ধরে আটকে থাকলেও ভারতীয় কাস্টমস বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া।

এদিকে সীমান্তে গম আটকে থাকায় ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করেছেন ভারতীয় রপ্তানিকারকরা। তাদের আশঙ্কা, গম পরিবহনে দেরি হলে বৃষ্টির কারণে প্রয়োজনীয় এই শস্য পচে যেতে শুরু করবে। এতে তারা কোটি কোটি রুপি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া বলছে, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) গত ১৩ মে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেই প্রজ্ঞাপনে ভারত থেকে অবিলম্বে গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। মূলত ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। কারণ এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী গম সরবরাহ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অবশ্য ডিজিএফটি গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করলেও ভারতের সরকারি নির্দেশনায় জানানো হয়, গত ১৩ তারিখের আগে যেসব ঋণপত্র বা এলসি ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলো যথাসময়ে রপ্তানি করা হবে। এরপরও ১৩ মের আগে চালান সম্পন্ন হওয়া বা অর্থ পরিশোধ করা গম বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সপোর্টার্স কোঅর্ডিনেশন কমিটির (ডব্লিউবিইসিসি) সাধারণ সম্পাদক উজ্জল সাহা বলছেন, মালদহ জেলার মাহাদিপুর স্থলবন্দরে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন গম আটকে আছে। এসব গমের জন্য গত ১৩ মের আগে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কাছ থেকে অর্থ পেয়েছি। এই চালান বহনকারী ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কোনো কারণ নেই।

একজন ভারতীয় রপ্তানিকারক বলেছেন, ডিজিএফটি জোর দিয়ে বলেছে, গত ১৩ তারিখের আগে যেসব চালান রপ্তানির জন্য অনুমতি পেয়েছে সেগুলো বাংলাদেশে পাঠাতে কোনো বাধা নেই। তার অভিযোগ, কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তের স্থলবন্দরে শুল্ক কর্তৃপক্ষ ডিজিএফটি’র আদেশের ওপর জোর দিচ্ছে যে, নিষেধাজ্ঞার আগে সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা গমের চালানগুলো রপ্তানি করা যেতে পারে।

দ্য টেলিগ্রাফের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ভারতের একজন কাস্টমস কর্মকর্তা বলেন, ডিজিএফটি থেকে একটি নির্দেশনা দরকার। তা না হলে বাংলাদেশে ট্রাক ঢুকতে দেওয়া যাবে না।

পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ২৮ মে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী পীযূষ গোয়ালকে একটি চিঠি পাঠায় ডব্লিউবিইসিসি। ওই চিঠিতে গম বোঝাই ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য ডিজিএফটিকে একটি আদেশ জারি করার অনুরোধ জানানো হয়।

কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরেও একই অবস্থা বিদ্যমান। চ্যাংড়াবান্ধা রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি বিমল কুমার ঘোষ জানান, গত ১২ মে থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় দেড় হাজার গম বোঝাই ট্রাক আটকে আছে।

মালদহভিত্তিক একজন রপ্তানিকারক বলছেন, গত ১৩ মে থেকে প্রায় চার লাখ টন গম পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অংশে আটকে আছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ আমাদের প্রধান ক্রেতাদের মধ্যে একটি। কারণ বাংলাদেশি আমদানিকারকরা অন্যান্য দেশ থেকে কেনার পরিবর্তে ভারতীয় গম কিনে প্রায় ৩০ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় করে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ টন শস্য রপ্তানি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী দেশ। তবে তাপপ্রবাহের কারণে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে গমের উৎপাদন প্রায় সাড়ে চার শতাংশ কম হয়েছে। এর জেরে গম রপ্তানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।

এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও বৈশ্বিকভাবে গমের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই দুই দেশ একত্রে বিশ্বের মোট রপ্তানির ৩০ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads