• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
খাল দখল করে চিংড়ি ঘের, পানি চলাচলে বাঁধা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

খাল দখল করে চিংড়ি ঘের, পানি চলাচলে বাঁধা

  • মো. সাইফুল ইসলাম খোকন, চকরিয়া (কক্সবাজার)
  • প্রকাশিত ০৯ জুন ২০২২

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় জনপদের পশ্চিম বড়ভেওলা মৌজার কাকাড়াদিয়া ডেবডেবি এলাকার মধ্যখানে প্রবাহিত জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন চলাচলের শাখা খালে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে চিংড়িঘের তৈরীর হিড়িক পড়েছে। এভাবে সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি চলাচলের খাল দখলে নিয়ে মাঝ পয়েন্টে মাটির বাঁধ দেয়ার কারণে চিংড়িজোনের কমপক্ষে হাজারো চিংড়িঘেরে লবণাক্ত পানি ঢুকানো নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। এতে লবণাক্ত পানির সংকট তৈরি হলে চাষের ভরা মৌসুমে মৎস্যঘেরগুলোতে মড়কের আশঙ্কা করছেন চাষীরাসহ সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে স্থানীয় চিংড়িঘের মালিক ও চাষীদের মাঝে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ভুক্তভোগী ঘের মালিক ও চিংড়িচাষীরা অভিযোগ তুলেছেন,  বিগত তিনমাস ধরে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল সরকারি খালটি দখলে নিয়ে মাঝপয়েন্টে মাটির বাঁধ দিয়ে ঘের নির্মাণের প্রচেষ্ঠা চালিয়ে গেলেও কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর অথবা জেলা প্রশাসন জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে জড়িতরা আরও বেপরোয়া হয়ে খালে মাটির বাঁধ তৈরির কাজ যাচ্ছেন।

স্থানীয় চিংড়িঘের মালিক ও চাষীরা অভিযোগ করে বলেছেন, চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুন নবী নামের একব্যক্তির নেতৃত্বে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র কয়েকমাস ধরে থেমে থেমে স্কেভেটর গাড়ি দিয়ে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করে পশ্চিম বড়ভেওলা মৌজার ডেবডেবি পা কাটা খালটি দখলে নিয়েছে। পাশাপাশি খালের আশপাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন বিপুল পরিমাণ জায়গাও দখলে নেমেছে অভিযুক্ত মহলটি। বর্তমানে সেখানে তাঁরা চিংড়িঘের তৈরী শুরু করেছে।

ঘের মালিক ও চাষীদের দাবি, এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়ে চলতি জুন মাস পর্যন্ত সরকারি চলাচলের খালটি দখলে নিয়ে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে অভিযুক্ত নুরুন নবীর নেতৃত্বে ওই চক্রটি। সর্বশেষ শুক্রবার (৩জুন) খালের মধ্যখানে নতুন মাটির বাঁধ দিয়েছে অভিযুক্তরা। এ অবস্থার কারণে খালে সামুদ্রিক লবণ পানি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে ডেবডেবি ও কাকাড়াদিয়া এলাকার কমপক্ষে হাজারো চিংড়িঘেরে লবণাক্ত পানি ঢুকানো নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সরকারি খালে মাটির বাঁধ দিয়ে সামুদ্রিক লবণ পানি চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় অনুকুলস্থলের চিংড়িচাষী মোহাম্মদ এহেছানসহ বেশ কয়েকজন চাষী ইতোমধ্যে চক্রটিকে বাঁধাও দিয়েছেন। এতে উল্টো বাঁধা দানকারী ঘের মালিক ও চাষীদেরকে নানাভাবে হুমকি দিয়েছে তারা। বিষয়টি নিয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

চিংড়িচাষীরা বলেন, উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেয়ার পর কিছুদিন খালে বাঁধ দেয়া বন্ধ রাখলেও সম্প্রতি একই অপর্কম শুরু করেছেন অভিযুক্ত প্রভাবশালী মহলটি।

চিংড়িচাষী মোহাম্মদ এহেছান বলেন, চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড় ভেওলা মৌজার ডেবডেবি ও কাকড়াদিয়া এলাকার পা কাটা নামক খালটি সরকারি শাখাখাল। এ খালটি দিয়ে যুগ যুগ ধরে সামুদ্রিক লবণ পানি প্রবাহিত হয়ে আসছে। মুলত খালের লবণপানি নিয়ে ডেবডেবি ও কাকড়াদিয়া এলাকার চিংড়িঘেরগুলোতে মৎস্য চাষ করা হয়। কিন্তু কয়েকমাস ধরে একটি প্রভাবশালী চক্র মাটি কেটে খালের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে চিংড়িঘের তৈরি করছে।

পাশাপাশি অভিযুক্তরা আশপাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন ঘেরের জায়গাও দখলের চেষ্ঠা চালাচ্ছে। তাদের অনিয়ম অপর্কমের কারণে বর্তমানে খালের লবণ পানির সুবিধা বঞ্চিত হবে স্থানীয় চিংড়িঘেরগুলো। এতে ঘেরগুলোতে লবণ পানির সংকট তৈরী হলে মড়কের মতো প্রার্দুভাবের আশঙ্কাও রয়েছে। এতে চাষীরা বিপুল ক্ষতিসাধাণের মুখে পড়বে।


বিষয়টি প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা মৌজায় সরকারি খালে মাটির বাঁধ দিয়ে চিংড়িঘের তৈরী করার চেষ্ঠা করছে একটি মহল। এ ধরণের অভিযোগ আমাকে একজন জানিয়েছে। ব্যাপারটি নিয়ে আমি ওয়াকিবহাল। তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনায় জড়িতদর বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সরকারি খাল আগের মতো পানি চলাচল উন্মুক্ত করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads