• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে রোগবালাই

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে রোগবালাই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ জুলাই ২০২২

তীব্র গরমে অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনজীবন। গত কয়েকদিন ধরে চলছে এ অবস্থা। কোথাও কোথাও দু-এক পশলা বৃষ্টি হলেও গরমের তীব্রতা থেকে রেহাই মিলছে না। আর তাপপ্রবাহের তীব্রতায় রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগবালাই। গ্রামাঞ্চলে মারাত্মকভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়ার রোগী।
এর মধ্যে ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলে ফেরা ঘিরে যাত্রাপথে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়েছেন অনেকে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজ রোববার সব ধরনের অফিসে বা শিল্প-কারখানায় পুরোদমে কাজ শুরু হচ্ছে। একদিকে কাজের চাপ, অন্যদিকে তাপপ্রবাহের কারণে চলতি সপ্তাহে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে।

তাপপ্রবাহ ১২তম দিনে গতকাল শনিবারও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলাকায় ছিল তীব্র গরম। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এ বছর সবচেয়ে আর্দ্র থাকবে জুলাই মাস, যা আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়াবিদরা বলেছেন যে, জুলাই মাসে তাপপ্রবাহ সাধারণত কয়েক দিন স্থায়ী হয়। তাই ভারি বৃষ্টি ছাড়া গরম কমার লক্ষণ নেই।

এদিকে ৬৬ বছরের মধ্যে চলতি মাসে সিলেটে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। বন্যার পর গত কয়েকদিন ধরে সিলেট জেলায় ব্যাপক তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সিলেটে ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে সিলেটে সর্বশেষ ১৯৫৬ সালের জুলাই মাসে এত উচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
আর রাজধানী ঢাকায় গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শুক্র ও বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর চলতি মাসের মধ্যে গত রোববার রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির জানান, তাপপ্রবাহ শনিবারের তুলনায় শুক্রবার ও গতকাল শনিবার কিছুটা কমেছে। শুক্রবার ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের কিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। ফলে তাপপ্রবাহ ওইসব অঞ্চলে কমেছে। তবে রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে তাপপ্রবাহ আগের মতোই আছে। রোববার বা সোমবারের পর দেশের সব অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে, তখন তাপপ্রবাহ কিছুটা কমে যাবে।

এবার গুরুতর তাপপ্রবাহের মধ্যে দেশব্যাপী ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। এর মধ্যে কয়েক লাখ মানুষ ঈদ-উল-আজহা উদ্যাপনের জন্য গ্রামাঞ্চলে যান। তীব্র গরমের মধ্যে ঈদ পরবর্তী মঙ্গলবার থেকে তারা আবার লঞ্চ, ট্রেন ও বাসে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরেছেন। আজ রোববার থেকে পুরোদমে অফিস, ব্যবসা, শিল্প কলকারখানা চালু হয়ে যাবে। গরমের মধ্যে যাত্রাপথের ভোগান্তিতে ক্লান্ত মানুষগুলো কাজের চাপে আবার অসুস্থ হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। তাই চলতি সপ্তাহে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে জ্বর, সর্দি, স্ট্রোক ও ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তীব্র গরমের মধ্যে ঢাকার কয়েক লাখ নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করে। তাদের বসবাস স্থলে রয়েছে পর্যাপ্ত সুপেয় পানীয় অভাব। এসব এলাকার শিশুরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই হাসপাতালে ভিড় করেন। আর তীব্র গরমের মধ্যে অপরিশোধিত পানি পান করায় শিশুসহ বড়রাও ডায়রিয়া আক্রান্ত হতে পারেন। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আজ রোববার অফিস শুরু হওয়ার পর আমরা হাসপাতালে ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগীর ভিড়ের আশঙ্কা করছি।

এদিকে, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) কর্তৃপক্ষ জানান, ঈদ পরবর্তী শুক্রবার পর্যন্ত ঢাকায় ফিরে আসা লোকজনের মধ্যে অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা করেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের হাজার হাজার মানুষের জীবন জীবিকা পথে-মাঠে-ঘাটে হয়ে থাকে। তরা পর্যাপ্ত সুপেয় পানি পান না। এর মধ্যে তীব্র গরমে শরীর গোসল করে শীতল করতেও অনেক ক্ষেত্রে পানির অভাব রয়েছে। সরকার যদি প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ সরবরাহ করতে না পারেন এবং কর্মজীবী মানুষ সূর্যের নিচে দীর্ঘ সময় থাকার কারণে দাবদাহে সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হবেন। এরা জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত রোগ ও উদারময় রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে-নাজির আহমেদ বলেন, মানুষের শরীর ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরের তাপমাত্রা কঠিন রোগ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ তাপমাত্রা শরীরের কোষে এনজাইমের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। তাই অতিরিক্ত তাপের কারণে মারাত্মক হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। তাছাড়া গ্রীষ্মকালে নিরলস ঘামের কারণে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের সাধারণ ব্যাপার। ঠান্ডারোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমানোর পাশাপাশি মানবদেহকে অনেক রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। তাই এ গরমে যখনই সম্ভব ছায়ায় আশ্রয় নিতে এবং ছাতা ও পর্যাপ্ত সুপেয় পানীয় পান করার পরামর্শ দেন তিনি।

বে-নাজির আহমেদ আরো বলেন, গ্রীষ্মকালে সব বয়সের মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জার ঝুঁকিতে থাকলেও, তিনি বলেন, বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরাও গ্রীষ্মকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।

হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. এম এইচ চৌধুরী লেনিন বলেন, এ গরমে জ্বরকে অতি সাধারণ রোগ হিসাবে অবহেলা করা যাবে না। ইতিমধ্য গ্রামাঞ্চলে একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে জ্বরে অসুস্থ বিছানায় পরে থাকতে শোনা যাচ্ছে। সর্বত্র ওষুধের দোকানগুলিতে জ্বরের ওষুধের চাহিদা বেড়েছে।

তিনি বলেন, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় বাংলাদেশে তাপপ্রবাহ বিশেষভাবে বিপজ্জনক। উচ্চ আর্দ্রতা শরীরের প্রাকৃতিক শীতল ব্যবস্থাকে বাধা দেয়। অতি গরমে মানুষ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই এ অবস্থায় বেশি বেশি সুপেয় পানি পান করাসহ জ্বর সহ যেকোনো ঠান্ডাজনিত রোগে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads