• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
সারা দেশে রেললাইন ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

বাড়বে ট্রেন ও যাত্রী

সারা দেশে রেললাইন ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি

  • রতন বালো
  • প্রকাশিত ১৭ জুলাই ২০২২

সারা দেশে ট্রেন চলাচলের জন্য রেললাইন ক্যাপাসিটি বাড়ানোর জন্য কাজ করছে সরকার। নতুন ট্রেন চালু করার বাধা দূর করতে ইতোমধ্যে ডাবল লাইন করা হচ্ছে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোরকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার কাজ শুরু করে। ৩২১ কিলোমিটার করিডোরের মধ্যে ১১৮ কিলোমিটারই ডাবল লাইন ছিল।

রেললাইন ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করার কারণে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চের ট্রেন চলাচলের গতি বাড়বে। বিশেষ করে ডাবল লাইনে উন্নীত করার ফলে  ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-ভৈরব- ময়মনসিংহ এ তিনটি করিডোরের লাইন ক্যাপাসিটি বাড়বে বলে মনে করছেন রেল কর্তৃপক্ষ। শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ভৈরবই নয় সারা দেশে রেল নেটওয়ার্কের জন্য রেললাইন ক্যাপাসিটি বাড়ানো হচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২টি প্রকল্পের আওতায় লাকসাম-চিনকিআস্তানা সেকশনে ৬১ কিলোমিটার এবং টঙ্গী-ভৈরব বাজার সেকশনে ৬৪ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। কাজেই ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোর ৩২১ কিলোমিটারের মধ্যে বর্তমানে ২৪৩ কিলোমিটার ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল করছে। চট্টগ্রাম স্টেশন ইয়ার্ড রিমডেলিংয়ের আওতায় ১১ কি.মি. রেললাইন পুনর্বাসন এবং ২.৮৭ কি.মি. নতুন রেললাইন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে রেল সূত্র জানায়।

ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইনের বিপরীতে ২য় ভৈরব ও ২য় তিতাস সেতু নির্মাণের সমীক্ষা ও বিস্তারিত ডিজাইনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য যথাক্রমে ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ২য় ভৈরব সেতু এবং ২০১৩ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর ২য় তিতাস সেতু নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে রয়েছে বলে জানান রেল কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইনের আওতায় ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয়েছে। প্রকৌশল ডিজাইন, দরপত্র প্রণয়ন ও কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কাজের পরামর্শক নিয়োগের জন্য ২০১৫ সালে ২ জুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) এর অর্থায়নে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল  রেললাইন নির্মাণ এবং রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পের  ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। পাশাপাশি এ প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালের ৪ মে ট্র্যাক নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়  এবং ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই দরপত্র উম্মুক্ত করা হয়।

দরপত্র মূল্যায়ন শেষে ২০১৬ সালের ১৮ মে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে (সিসিজিপি) প্রেরিত ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ২০১৬ সালে ১৫ জুন চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। শিগগিরই মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম শুরু হবে বলে রেলসূত্র জানায়। 

রেলসূত্র জানায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে মিটারগেজ সিংগেল লাইনের সমান্তরালে ডুয়েলগেজ নতুন একটি রেললাইন নির্মাণ করার জন্য জাপান সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।

এছাড়া তারাকান্দি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত ৩৫ কি.মি. নতুন রেললাইন স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং ২০১২ সালের ৩০ জুন থেকে এ সেকশনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ভারতীয় ঋণের আওতায় খুলনা হতে মংলা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি ও অ্যালাইনমেন্ট নির্ধারণ সম্পন্ন করা হয়েছে।

খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত ৬৪.৭৫ কি.মি. নতুন ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইন (এলওসি)-এর আওতায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের সমীক্ষা এবং বিশদ ডিজাইনের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মোট ৩৮০১.৬১  কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি ২০১৫ সালের ২৬ মে  একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।

ঈশ্বরদী থেকে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন ৭৮.৮০ কি.মি. এর মধ্যে ২২ কি.মি. রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত ৪১ কি.মি. নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য মোট ২০২৩৭২.৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। বর্তমানে কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সেকশনের কাজ চলমান রয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনধুম পর্যন্ত ১২৮ কি.মি. মিটারগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেক মোট ১৮৫২.৩৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল  অনুষ্ঠিত একনেক কর্তৃপক্ষ দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনধুম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণের লক্ষ্যে সংশোধিত ডিপিপি মোট ১৮০৩৪.৪৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করে রেললাইনও নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আগামী বছরের মধ্য সময়ে  ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানান।

এছাড়াও পদ্মা রেল সেতু সংযোগ প্রকল্পের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২০২৪ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে আমাদের গর্বের পদ্মা সেতু অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হয়েছে।  এই সেতুতে রেল সংযোগের ব্যবস্থা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প সরকারের দশটি অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। এটি ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মিত হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads