• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
তৈরি হচ্ছে দক্ষ মানবসম্পদ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

তৈরি হচ্ছে দক্ষ মানবসম্পদ

  • রতন বালো
  • প্রকাশিত ২০ জুলাই ২০২২

‘সোনার দেশ গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই’ এই স্লোগান ধারণ করে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। সোনার মানুষ তৈরির জন্য দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় প্রণীত হয় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন আইন-২০১৮। এজন্য নিরলস কাজ করছে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ হিসেবেও স্থান করে নিয়েছে।

দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর-সংস্থা, অধিদপ্তর, এনজিও পরিচালিত প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও আয়োজন করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করে। কিন্তু শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল তৈরি না হওয়ায় শিল্প খাতে স্কিলস গ্যাপ পরিলক্ষিত হয়। এই স্কিলস গ্যাপ দূর করাসহ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার মাধ্যমে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যমআয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৮ অনুযায়ী জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাজ হচ্ছে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি, কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, সংস্থা এবং বেসরকারি ও এনজিও পর্যায়ে পরিচালিত সকল দক্ষতা উন্নয়ন ব্যবস্থাকে সমন্বয় করা। সকল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের জন্য অভিন্ন প্রশিক্ষণ পাঠ্যক্রম প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন, দক্ষতা তথ্যভান্ডার প্রতিষ্ঠা করাই জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাজ।

বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস-২০২২ উপলক্ষে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, প্রতি বছর প্রায় ২২ লাখ যুবশক্তি শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। এই বড় যুবসমাজকে পেশাভিত্তিক দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। যুবকদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের পেশার চাহিদার নিরিখে দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান করে দেশে ও দেশের বাইরে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যমান ও ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি পেশা চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং কর্মে নিয়োজিতদের জন্য পুনঃদক্ষতা ও দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল জানান, দেশের বেকার যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ যাবৎ ৬৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯ জন যুবক ও যুব মহিলাকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৯৮ জন আত্মকর্মী হয়েছে এবং ২৪ হাজার ৪৩৭ জন যুবক ও যুব মহিলা উদ্যোক্তা হিসেবে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে বলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জানান।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস জানান, প্রযুক্তি পরিবর্তনের কারণে বর্তমান বিশ্বে শিল্প ও সেবা খাতে ক্রমাগত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এসব পরিবর্তনের কারণে পেশার পরিবর্তন ও বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন,  প্রযুক্তি পরিবর্তনের সাথে খাপখাইয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে দক্ষ জনবল সরবরাহের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮-এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে।

তিনি আরো জানান, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে শিল্পে অটোমেশনের কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে তিনি মনে করেন। পাশাপাশি জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন তা নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এছাড়া ক্রমবর্ধমান শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বহুমুখী শ্রমের চাহিদা পূরণ, প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের পুনঃপ্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মোপযোগী করা। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন ও ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা অপরিহার্য বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, যুবসমাজকে উপযুক্ত দক্ষতা প্রশিক্ষণ দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে দেশে ও বিদেশের শ্রমবাজারে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। দক্ষতা প্রশিক্ষণের ব্যাপক প্রচার ও সামাজিক নেতিবাচকতা দূরীকরণে জাতীয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস, ২০২২ উদযাপন ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads