• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
লালমনিরহাটে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ট্রেনের টিকিট

ছবি: প্রতিনিধির

জাতীয়

লালমনিরহাটে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ট্রেনের টিকিট

  • এসকে সাহেদ, লালমনিরহাট
  • প্রকাশিত ২১ জুলাই ২০২২

ঢাকাগামী ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনের টিকিট এখন লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত ৪ সদস্যের সিন্ডিকেটের হাতে। কাউন্টার খোলার ১০ মিনিটেই সব টিকিট হাওয়া হয়ে যায়।

জানা গেছে, দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় ধরে লালমনিরহাট থেকে ঢাকায় নিয়মিত চলাচল করছে অন্তঃনগর ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেন। নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য এ অঞ্চলের বেশিরভাগ যাত্রী ট্রেনেই যাতায়াত করেন। কিন্তু অনলাইনে টিকিট বিক্রির পর শুরু হয় বিড়ম্বনা। সারা বছর যাত্রীরা টিকিট পেলেও বছরের দুই ঈদে ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট চলে যায় সিন্ডিকেটের কবলে। প্রতি ঈদকে টার্গেট করে টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগীয় রেলওয়ে অফিসে কর্মরত কয়েকজন জানান, ঢাকাগামী ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনের টিকিট নিয়ন্ত্রণ করেন রেলে কর্মরত ৪ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তারা প্রতিদিন অন্তঃনগর ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেন ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা পর স্টেশনে হাজির হন। পরে টিকিট কাউন্টার মাস্টার ও রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের যোগসাজশে নামের তালিকা করে রাখা হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী পরদিন সকাল ৮টায় কাউন্টার খোলার সাথে সাথে তারা টিকিট সংগ্রহ করে। কাউন্টার খোলার ৮থেকে ১০মিনিট পরেই যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহ করতে এসে না পেয়ে ফিরে যায়।

গত ১৬ জুলাই করা তালিকায় দেখা যায় রেলওয়ে ডিআরএম অফিসে কর্তরত এটিও মো. মানিক মিয়ার নামে কেবিন ১০টি বরাদ্দ। ডিটিএস-এর নামে ৪টি এসি ও ডিআরএম এর নামেও ২টি এসি টিকিট বরাদ্দ ছিল। একইদিন অপর একটি তালিকায় এটিও মো. মানিক মিয়ার নামে ৪টি শোভন টিকিট বরাদ্দ ছিল। এই তালিকায় ডিইএন-এর নামে বরাদ্দ ছিল শোভন ৪টি টিকিট। একদিকে প্রতিদিন রেলে কর্তাব্যক্তিদের সুপারিশে কিছু টিকিট বিক্রি হয়, অপরদিকে সিন্ডিকেটের সদস্যরা টিকিট কিনে কালোবাজারে বিক্রি করছে।

জানা গেছে, সিন্ডিকেট সদস্যদের কেনা এসি চেয়ার ৯৬৬টাকার টিকিট ২৫’শ থেকে ৩ হাজার টাকায় এবং শোভন ৫০৫ টাকার টিকিট ১৫’শ থেকে ১৭’শ টাকায় কালোবাজারে বিক্রি করা হয়। ঈদের পরদিন থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চলে কালোবাজারে টিকিট বিক্রি। এভাবে তারা প্রতিদিন হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। আর টিকিট কালোবাজারে বিক্রির জন্য রয়েছে তাদের নিজম্ব বাহিনী। কারো সাথে দিন হাজিরা চুক্তি আবার কারো সাথে লাভের অংশ ভাগ করে নেওয়ার শর্তে টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করে তারা।

ওই সিন্ডিকেটের বাইরে কাউন্টার মাস্টার ও রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কৌশলে নিজের আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতদের নামে প্রতিদিন টিকিট ক্রয় করে চড়া দামে বিক্রি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পদাধিকার বলে তারা পায় এ বিশেষ সুবিধা। আর সাধারণ যাত্রীরা টিকিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে কালোবাজার থেকে ৩ গুণ দামে টিকিট ক্রয় করে।

রেলওয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে কালোবাজারে টিকিট বিক্রি সিন্ডিকেট দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। সিন্ডিকেটের সদস্যদের তৈরি কালোবাজারে টিকিট বিক্রি বাহিনীর বেশিরভাগ নেশাখোর ও স্টেশনে ঘটে যাওয়া নানা অপরাধের সাথে জড়িত। ফলে তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলে না।

লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নিজাম উদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনলাইনে টিকিট কিনে কেউ বিক্রি করলো কিনা সেটা আমরা কিভাবে বুঝবো।

এ ব্যাপারে রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ জানান, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ও প্রমাণ না থাকায় কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এসময় তিনি কালোবাজারে টিকিট বিক্রি বন্ধে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads