• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
আখাউড়ার মাছ যাচ্ছে বিদেশে

সংগৃহীদত ছবি

জাতীয়

আখাউড়ার মাছ যাচ্ছে বিদেশে

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ২৬ জুলাই ২০২২

কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙালি। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মাছচাষে এক নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়াও এতে পিছিয়ে নেই। এ উপজেলায় চাষিরা নানা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে মাছচাষে বেশি লাভ হওয়ায়  এর পরিধিও দিন দিন বাড়ছে। এ উপজেলায় বছরে উৎপাদিত হচ্ছে ৪ হাজার ৭২০ মেট্রিক টন মাছ। এর মধ্যে উপজেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে ৩৫৭৫ টন। উদ্ধৃত থাকছে ১ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন মাছ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ছাড়াও দেশের বাইরে রপ্তানি হচ্ছে এ উপজেলার মাছ। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে মাছ রপ্তানি করে বছরে আয় হচ্ছে ১৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার গ্রাম রয়েছে ১৩০টি। এর মধ্যে ছোট বড় পুকুরসহ প্রজেক্ট রয়েছে ২ হাজার ৮৭টি, বিল রয়েছে ১৩টি, নদী ৩টি, খাল ৩টি, ও প্লাবন ভূমি রয়েছে ৮টি। সেই সঙ্গে ১ হাজার ৪৩০ জন নিবন্ধিত জেলে ও মাছচাষি রয়েছে ২ হাজার ১০৭ জন।

চাষ করা মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, কাতল, পাঙ্গাস, মৃগেল পুটি, স্বরপুঁটি, কার্ফ, টেংরা, শোল, টাকি, কালিবাউস, তেলাপিয়া, বোয়াল, গ্রাসকাপ, নাইলোটিকা, শিং, মাগুর, কৈ, টাকি, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এরমধ্যে বেশি মৎস্যচাষি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ চাষে তারা চমক সৃষ্টি করছেন। 

স্থানীয় মৎস্যচাষিরা জানায়, এ উপজেলায় উৎপাদিত মাছের সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় তাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকলে মাছচাষে তাদের দ্বিগুণ আয় হওয়ার সম্ভব। এ জন্য তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

মো. হারুন মিয়া, মো. শফিকুল ইসলাম, জাহার মিয়া, ইউসুফ মিয়া, আবুল কালাম, টিপু চৌধুরী, মানিক মিয়াসহ একাধিক স্থানীয় মৎস্যচাষি  জানান, এ বছরের শুরুতেই তীব্র দাবদাহ আর অনাবৃষ্টি থাকায় পুকুর, খাল বিল  ও জলাশয়ে পানি সংকট দেখা দেয়। এতে মাছের রেনু পোনা উৎপাদন ও মাছচাষে শত শত মৎস্যচাষি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করে মাছ চাষ করেন।

এছাড়া তিতাস নদী, হাওড়া নদী আর বিল, জলাশয়গুলোতে প্রাকৃতিকভাবেও মাছ হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমসহ সব সময় ওইসব জায়গাতে নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তাই জেলেসহ স্থানীয় লোকজনরা ওইসব জায়গা থেকে নিয়মিত মাছ শিকার করছেন।

উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ পুকুর, প্রজেক্ট, ও জলাশয়গুলোতে পানি থই থই করছে। রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ। মৎস্যচাষিরা  মাছ নিয়ে এক প্রকার ব্যস্ত সময় পার করছেন।

মৎস্যচাষি মো. আবুল মিয়া বলেন, গত ১০ বছর ধরে তিনি দেশীয় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন।  এ বছর ৫টি পুকুরে নানা প্রজাতির মাছের পোনা ছেড়েছেন। তিনি আরো বলেন, এক সময় মাছচাষে বৃষ্টির ওপর নির্ভর ছিল। এখন তা নেই। বৃষ্টির অপেক্ষা না করে মেশিনের মাধ্যমে পুকুরে পানি দিয়ে মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত করা হয়। এ জন্য বাড়তি অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। গত মৌসুমে তিনি ওইসব পুকুরে যাবতীয় খরচ বাদে প্রায় ৮ লাখ টাকা তার আয় হয়। এবারো আশা করছেন অন্তত আড়াই লাখ থেকে ৮-৯ লাখ টাকা আয় হবে।     

উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, মাছচাষের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সব সময় মৎস্য চাষিদেরকে  পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ উপজেলায় অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় বছরের পর বছর পড়ে আছে। এগুলো মাছচাষের আওতায় আনা গেলে এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রওনক জাহান বলেন, এ উপজেলার বেশিভাগ মানুষই অর্থনীতি উন্নয়নে মাছচাষে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছেন। মাছচাষে বেশি লাভ হওয়ায় দিনের পর দিন এ চাষের পরিধি ও বাড়ছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads