• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
রেল জাদুঘরের যাত্রা শুরু আজ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

রেল জাদুঘরের যাত্রা শুরু আজ

  • রতন বালো
  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০২২

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ সোমবার। সকাল ১১ টায় গোপালগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাদুঘরের যাত্রার সুচনা করবেন রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন। এরপর সারাদেশে ঘুরবে এ জাদুঘর। চলবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে কোন কোন স্টেশনে দর্শনার্থীদের সুবিধায় একদিন আবার কোনো কোনো স্টেশনে পাঁচ দিন পর্যন্ত অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. শরিকুল আলম।

একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ বিশেষ কোচে নির্মিত অত্যাধুনিক জাদুঘর দুটি দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের ৩৫টি রেল স্টেশনে প্রদর্শিত হবে। জাদুঘরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, মিটার গেজ শুরু হবে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে আর ব্রডগেজ শুরু হবে গোপালগঞ্জ স্টেশন থেকে। পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম, ভাটিয়ারী, সীতাকুন্ড, চিনকিআস্তানা, ফেনী জংশন, গুণবতী, নাঙ্গলকোট, লাকসাম জংশন, চৌমুহুনী, মাইজদীকোর্ট, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কুমিল্লা, আখাউড়া, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া, ভৈরববাজার, নরসিংদী, টঙ্গী জংশন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা, ফতুল্লা, চাষাড়া ও নারায়ণগঞ্জ আর পশ্চিমাঞ্চলের গোপালগঞ্জ, কাসিয়ানি, ভাটিয়াপাড়া ঘাট, মধুখালী জং, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাংশা, কুমারখালী, কালুখালী জং ও কুষ্টিয়া প্রতি স্টেশনে দুই থেকে তিনদিন ধরে জাদুঘরটি অবস্থান করবে।

সাধারণ মানুষকে জাদুঘর পরিদর্শনে আমন্ত্রণ জানাতে স্টেশনে জাদুঘর পৌঁছানোর আগে প্রচারণা চালাবে রেলওয়ে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই জাদুঘর সবাই ঘুরে দেখতে পারবেন। শফিকুল আলম জানান, গত ২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর দুটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে তিনি বলেছিলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন ও অজানা তথ্য পৌঁছে দিতে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর ইতিহাস হয়ে থাকবে। অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করতে সরকার যোগাযোগব্যবস্থাকে সহজ করছে। অসাধারণ ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর নির্মাণ করায় তিনি রেলপথ বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানাতেই দেশের প্রথম ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর ‘বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। উদ্বোধনও হয়েছে। এখন শুধু প্রদর্শনীর পালা। ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ রেলকোচের ভেতরে প্রস্তুত করা হয়েছে। সারাদেশে বিস্তীর্ণ রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, জীবনাদর্শ, জাতির জন্য তার অনন্য ত্যাগ ও অবদানকে শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ। বিভিন্ন ছবি, প্রতিকৃতি, ভিডিওসহ ডিজিটাল শিল্পকর্মের মাধ্যমে জাদুঘরটি সাজানো হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তার কর্মজীবনকে মোট ১২টি ভাগে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে জাদুঘরে। জাদুঘরের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবনালেখ্য।

দেড় বছর সময় নিয়ে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর দুটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। তিনি জানান, বিশ্বমানের জাদুঘর দুটি নির্মাণে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে-জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবন, জীবন সংগ্রাম, দেশ গঠনে তার অদম্য উৎসাহ, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং কর্মময় জীবনের চর্চা।

তিনি আরো জানান, এ জাদুঘর পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশনে যাবে। সাধারণ মানুষ বিনা মূল্যে জাদুঘরে প্রবেশ করতে পারবে। শিশুদের জন্য চকলেটসহ মুখরোচক খাবার থাকবে। জাদুঘর দুটিতে প্রবেশ করলে বঙ্গবন্ধুর শৈশবের দিনগুলো, এরপর ছাত্রজীবন, সংগ্রামী জীবন, অধিকার আদায়ের আন্দোলনে কারাভোগের চিত্র ভেসে উঠবে। ’৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে দর্শনার্থীরা জানতে পারবেন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, জাদুঘর দুটিতে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এবং থিম সংসহ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গান-কবিতা প্রচার করা হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘর দুটিতে ১২টি টেবিলে বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক নিবাসের প্রতিরূপ, তার ব্যবহূত চশমা, পাইপ, মুজিব কোট, টুঙ্গিপাড়ার সমাধিস্থলসহ ১৩টি করে ঐতিহাসিক অনুকৃতি স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া স্মৃতিসৌধসহ মুক্তি সংগ্রামের দুর্লভ চিত্রগুলো।

প্রতিটি জাদুঘর প্রায় ১০০ ফুট লম্বা বিশেষ কোচে নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এর সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জাদুঘর দুটি পরিদর্শন করে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও দেশ সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারবে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জন্য জাদুঘর উম্মুক্ত থাকবে।

ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর দুটি কোন কোন স্টেশন যাবে ও কত দিন অবস্থান করবে : ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের গোপালগঞ্জ স্টেশনে ১ থেকে ৫ আগস্ট, কাশিয়ানিতে ৬-৭ আগস্ট, ভাটিয়াপাড়াঘাটে ৯-১০ আগস্ট, মধুখালী জংশনে ১২-১৩, রাজবাড়ীতে ১৫-১৭, ফরিদপুরে ১৯-২০, পাংশায় ২২-২৩, কুমারখালীতে ২৫-২৬, কুমারখালী জংশনে ২৮ থেকে ২৯, কুষ্টিয়ায় ৩০-৩১ আগস্ট পর্যন্ত অবস্থান করবে।

ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম স্টেশনে ১-৫ আগস্ট, ভাটিয়ারীতে ৫-৭, সীতাকুণ্ডে ৭-৯, চিনকিআস্তানায় ৯-১১, ফেনী জংশনে ১১-১৫, গুণবতীতে ১৪-১৭, নাঙ্গলকোটে ১৬-১৯, লাকসামে ১৮-২৩, চৌমুহনীতে ২১-২৫, মাইজদীকোর্টে ২৩-২৭, নেয়াখালীতে ২৫-২৯, লাকসামে ২৯ আগস্ট, চাঁদপুরে ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর, লাকসাম জংশনে ১ সেপ্টেম্বর, কুমিল্লায় ২ থেকে ৪, আখাউড়ায় ৫-৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৮-১০, ভৈরববাজারে ১০-১২, নরসিংদীতে ১২-১৪, টঙ্গীতে ১৪-১৬, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ১৬-১৮, কমলাপুরে ১৮-২২, ফতুল্লায় ২২-২৩, চাষাঢ়ায় ২৩-২৫ ও নারায়ণগঞ্জে ২৫-৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads