• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ফোনে ভূমিসেবা নিয়েছেন তিন লাখ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ফোনে ভূমিসেবা নিয়েছেন তিন লাখ

  • রতন বালো
  • প্রকাশিত ৩০ আগস্ট ২০২২

বেশ কয়েক বছর ধরে ডিজিটালাইজেশন প্রকল্পগুলোর ওপর জোর দিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে ভূমি অফিসে না এসে সাধারণ মানুষ যাতে সহজেই ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারে সেলক্ষ্যে ডিজিটালাইজেশনের কাজ শুরু করে দিয়েছে ভূমিমন্ত্রণালয়। চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে নাগরিক ভূমিসেবা প্রকল্পের এ কার্যক্রম শুরু করে তারা।

গত ৮ মাসে প্রায় তিন লাখ নাগরিক ফোনে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কমেন্ট কিংবা মেসেজ (বার্তা) করে ভূমি বিষয়ক সেবা গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে জাতীয় ভূমিসেবা কলসেন্টার সেবাটি ‘নাগরিক ভূমিসেবা ২৪/৭’ নামে পরিচিত লাভ করেছে।

জানা গেছে, নাগরিক ভূমিসেবা ২৪/৭-এর হেল্পলাইন ১৬১২২ থেকে গত ৮ মাসে মোট ৭ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কল নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিদেশ থেকে এর লং- কোড ৮৮০ ৯৬১২-৩১৬১২২ এ প্রাপ্ত কল নিষ্পত্তি সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ৪০০। সেবা প্রার্থীদের পুনরায় ফোন করে ফলো-আপ করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কলের মাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভূমিসেবা (www.facebook.com/land.gov.bd) পেজ থেকে প্রায় ১২ হাজার মেসেজ এবং কমেন্টের জবাব দেওয়া হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভূমিসেবা হেল্পলাইন ১৬১২২ সহ অন্যান্য ডিজিটাল সেবার কারণে ভূমি অফিসে না গিয়েই ভূমি সেবা গ্রহণ করতে পারছেন দেশের নাগরিক। এতে মানুষের অর্থ-খরচ ও ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হয়েছে। অসাধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির সুযোগ হ্রাস পেয়েছে বহুলাংশে। ভূমি অফিসে না এসেই নাগরিক যেন ভূমি সেবা পান এবং একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যেন কাউকে ভূমি অফিসে আসতে না হয়-বর্তমান সরকারের ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের অন্যতম এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে ভূমি মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানান, ভূমি মন্ত্রণালয়ে আমাদের চলমান ডিজিটালাইজেশন প্রকল্পগুলোর উদ্দেশ্য মানুষ যেন ভূমি অফিসে না এসে সহজেই ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়া, আমরা ভূমি সংশ্লিষ্ট অপরাধ দমনের জন্য ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য কৃষি জমি সুরক্ষা আইন-এর খসড়া তৈরি করেছি বলে ভূমিমন্ত্রী জানান।

তিনি জানান, ‘নাগরিক ভূমিসেবা ২৪/৭’ কলসেন্টারটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাভুক্ত দপ্তর/সংস্থায় কর্মরত ভূমি আইন, ব্যবস্থাপনা ও জরিপ বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাগণ ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রাপ্ত অনুসন্ধানের উত্তর, পরামর্শ, সম্ভাব্য সমাধান প্রস্তুত ও সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছেন। কলসেন্টারটির অপারেটর ও কারিগরি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে আন্তর্জাতিক কলসেন্টার পরিচালনায় অভিজ্ঞ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে ভূমিমন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভূমি মালিকদের কাছে ‘নাগরিক ভূমিসেবা ২৪/৭’র জনপ্রিয় সেবাসমূহের মধ্যে রয়েছে, ঘরে বসেই ডাকযোগে খতিয়ান (পর্চা) ও জমির ম্যাপ প্রাপ্তি, যেকোনো স্থান থেকে খতিয়ান ও নামজারি ফি এবং ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ, নামজারি আবেদন করা, ভূমি আইন ও বিধিবিধান সংক্রান্ত জিজ্ঞাস্যের জবাব এবং বিবিধ অভিযোগ গ্রহণ ইত্যাদি।

এছাড়া, গত ২৫ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় ভূমিসেবা কলসেন্টার ‘নাগরিক ভূমিসেবা ২৪/৭’ সম্পর্কিত এক সভায় ভূমি জরিপের খসড়া প্রকাশের পর ৩০ দিনের মধ্যে বিধিমালার ৩০ ধারার আপিল যেন ভূমি অফিসে না এসেই নাগরিক ফোনযোগে করতে পারেন - সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তিনি (ভূমি সচিব) নির্দেশ দেন। এসময় তিনি জানান, পর্যায়ক্রমে ভূমিসেবা কলসেন্টারটিতে আরো সেবা বৃদ্ধি করাসহ নিয়মিত সেবা ফলো-আপ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়াও ‘নাগরিক ভূমিসেবা ২৪/৭’- তে ভূমি অধিগ্রহণ, নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর, খাস জমি বন্দোবস্ত, অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, ভূমি জরিপ ও রেকর্ডরুম, জল মহাল, বালু মহাল, চা বাগান, হাটবাজার ব্যবস্থাপনাসহ আরো বিভিন্ন ধরনের ভূমি সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান করা হয় নিয়মিত।

উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী অভিযোগ গ্রহণের পাশাপাশি সকল ধরনের ভূমিসেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে নিয়ে ‘নাগরিক ভূমিসেবা ২৪/৭’ নামে ফুলসার্ভিস কল সেন্টারটি উদ্বোধন করেন। কল সেন্টারটি ৩০ জন অপারেটর নিয়ে মিরপুরে অস্থায়ী কার্যালয়ে কাজ শুরু করে। অপারেটর সংখ্যা বৃদ্ধি করে কলসেন্টারটি তেজগাঁও ভূমি ভবনে স্থায়ী কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হবে।

এর আগে ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর ভূমিমন্ত্রী ছোটো পরিসরে ‘ভূমিসেবা হটলাইন ১৬১২২’ উদ্বোধন করেন। ৫ জন অপারেটর নিয়ে কেবল বাংলাদেশের ভেতরে থেকে অভিযোগ গ্রহণ ও অনুসন্ধানের জবাবদানের উদ্দেশ্যে ১৬১২২ হটলাইন সাচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ের একটি ছোটো কক্ষে যাত্রা শুরু করেছিল। ২০১৯ এর অক্টোবর উদ্বোধনের পর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ বছরে প্রায় ১ লক্ষ কল নিষ্পত্তি করেছিল ভূমিসেবা হটলাইন ১৬১২২।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads