• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
আমেরিকার দোষ নেই, নিষেধাজ্ঞার পেছনে সেই গোষ্ঠী : বেনজীর

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

আমেরিকার দোষ নেই, নিষেধাজ্ঞার পেছনে সেই গোষ্ঠী : বেনজীর

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় তার কী দায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, এই ঘটনায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দোষ দেখেন না, পেছনে রয়েছে একটি গোষ্ঠী, যারা লবিং করে এটি করিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই জাতিসংঘে পুলিশ সম্মেলনে যোগ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক নাগরিক সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

গত ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের পুলিশ সামিটে যোগ দিতে বাংলাদেশের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন বেনজীর। সম্মেলন শেষে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের কাছে গুলশান টেরেস মিলনায়তনে ওই সংবর্ধনায় যোগ দেন আইজিপি।

তার এই বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার পাচ্ছে। এতে দেখা যায়, নানা প্রসঙ্গের পাশাপাশি তিনি কথা বলেন তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে। বেনজীর বলেন, এখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) আমি থেকেছি, পড়েছি, চাকরি করেছি। যে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে র্যাব ৬০০ লোককে নাকি গুম করেছে। ২০০৯ সালে তো আমি ছিলাম না, আমি ১০ সালেও ছিলাম না, আমি ১১, ১২ সালেও ছিলাম না। আমি ১৩ সালে ১৪ সালেও ছিলাম না। আমি ১৫ সালে ছিলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকে এ সময় ‘ফেক স্টেটমেন্ট’ বলে ওঠেন।

আইজিপি বলেন, এখন আমাকে যদি তারা দায়ী করে যে ৬০০ লোক হারায়ে গেছে। যদি ব্যান খেতে হয়, তবে ওই লোকগুলো কারা...ব্যাপারটা কী, এরকম যে তুই করস নাই তোর বাপ-দাদা করছে নাকি, এ জন্য আমি আমেরিকান গভর্নমেন্টকেও দায়ী করব না। কারণ হচ্ছে এই, এটার পেছনে রয়েছে তিন বছরের পরিশ্রম।

একটা ওয়েবসাইট আছে এফএআরএ, দেখবেন চারটা লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক ফার্মকে ২৫ মিলিয়ন ডলার করে দেয়া হয়েছে। এদের সঙ্গে সত্যের কোনো সম্পর্ক নেই। আমেরিকান সরকার, আমেরিকান নাগরিক তারা তো এ লবিস্টদের নিয়োগ করেনি। আমেরিকানদের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।

এটা করেছে তারাই, যারা সত্তর সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকায় ভোট দেয়নি, যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। ওই গোষ্ঠী বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চারটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। সেই ভাড়াটে ফার্ম টানা তিন বছর চেষ্টা করেছে কথিত স্যাংশনের জন্য। যে ৬০০ মানুষকে নিখোঁজ বলা হচ্ছে, তাদের তালিকা কোথায়, সে প্রশ্নও করেন বেনজীর। বলেন, ‘এই ৬০০ লোক যে গুম হয়েছে বলা হচ্ছে, তাদের নাম, তালিকা, কবর আছে কোথাও? ২০১৩ সালেও এমন বলা হয়েছে শাপলা চত্বর নিয়ে।

জাতিসংঘের সামিটে যোগ দিতে পাঁচজনের সফর নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা না থাকলেও আইজিপিকে নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল এ কারণে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে র্যাব এবং এর সাত কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বেনজীর আগে র্যাবেই ছিলেন। বাহিনীটির সাবেক প্রধান হিসেবে তিনি নিষেধাজ্ঞায় পড়েন।

নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বেসরকারি সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে ছয় শতাধিক গুম এবং ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ৬০০ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। এর মধ্যে দেশটিতে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের চিফ অফ পুলিশ সামিটে (ইউএনকপ) অংশ নিতে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে বেনজীরের নাম রাখা হয়। গত ৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (পুলিশ-৩ শাখা) হারুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রধান অর্থ ও হিসাব কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। বেনজীর যুক্তরাষ্ট্র সফর নিশ্চিত করতে দেশটির সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করে। এর মধ্যে ২৫ আগস্ট বেনজীরের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বেশ কয়েকটি শর্তে এই ভিসা দেয়া হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা সেদিন জানান, ভিসার শর্তে ছিল জাতিসংঘের সফরে গিয়ে নিউ ইয়র্কের বাইরে যেতে পারবেন না। নিউইয়র্ক সিটিতেও তার কর্মকাণ্ড সীমিত থাকবে। তিনি জাতিসংঘ সম্মেলন ছাড়া সামাজিক, রাষ্ট্রীয় বা সরকারি-বেসরকারি কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না। শর্ত ভঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে তার ভিসা বাতিল হবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

নাগরিক সংবর্ধনায় গিয়েই বেনজীর প্রথম তার ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা বলেন। পাশাপাশি অভিযোগ করেন তথ্য-সন্ত্রাস চালানোর। তিনি বলেন, ২২ জন তথ্য-সন্ত্রাসী রয়েছে। এদেরকে জবাব দিতে হবে। অপপ্রচার চালাতে সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, একসময় মনে করা হয়েছিল যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাংবাদিকতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। কিন্তু বাস্তবে কী দেখছি আমরা? আশা করা হয়েছিল সমাজের তথ্যচিত্রটি সবিস্তারে উঠে আসবে। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে যত ভুয়া, আজগুবি তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। তথ্য-সন্ত্রাসীরা দেশের বিরুদ্ধে, মানবতাবিরোধী যতসব অপপ্রচারণা চালাচ্ছে।

‘নোংরা’ জিনিস ফেসবুকে দেখামাত্র এর বিরুদ্ধে প্রকৃত সত্যকে উপস্থাপনের পরামর্শ দিয়ে বেনজীর বলেন, তাহলেই মিথ্যার পরাজয় ঘটবে। ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম করে বিজয়ী হয়েছি’ উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, এখন চলছে মুক্তির লড়াই। এ লড়াই অব্যাহত রয়েছে এতেও জিততেই হবে।

মুক্তিযুদ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। এবং তার কন্যা শেখ হাসিনাও একই চেতনায় বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে এনেছেন। তার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলছে। যুক্তরাষ্ট্র নাগরিক কমিটির ব্যানারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা হিন্দাল কাদির বাপ্পা। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মুনিরুল ইসলামও ছিলেন মঞ্চে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads