• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
ভাড়া নিয়ন্ত্রণে মাঠে ম্যাজিস্ট্রেট

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ভাড়া নিয়ন্ত্রণে মাঠে ম্যাজিস্ট্রেট

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

রাজধানীতে বাস ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য এখনো থামেনি। অবৈধ ওয়েবিল তোলা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর ভাড়া অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় তা নির্ধারিত করে দেয় সরকার। পরে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমানো হলেও আগের মতোই চলছে সবকিছু। এ কারণে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ৬টি পয়েন্টে একযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিআরটিএ। বাসভাড়া বেশি নেওয়া, রুট পারমিটসহ নানা অপরাধে জরিমানাও করা হয়। বিশেষ করে মিরপুর রুটের এক বাসকে ৫ টাকা বেশি ভাড়া নেওয়ার কারণে ৬ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এর আগে গত বুধবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটার ৫ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। দূরপাল্লার গণপরিবহনে কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে ২ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। একদিন পেরিয়ে গেলেও রাজধানীর অধিকাংশ রুটেই কোনো প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি।

গতকাল শুক্রবার বাসচালকের সহকারী ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি সিদ্ধান্তে যাত্রীদের কোনো উপকারই হয়নি, বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। মিরপুর সাড়ে ১১ অনিক প্লাজা থেকে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। যেখানে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া আসে ৩৪ টাকা ৩০ পয়সা। তবে এই গন্তব্যে ৩৮ টাকা ৩৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন চালকের সহকারীরা।

মিরপুর সুপার লিংকের চালকের সহকারী বাপ্পী বলেন, আজিমপুর রুটে কোনো ভাড়া কমেনি, ভাড়া কমবে কেন? আজিমপুর পর্যন্ত ভাড়া আসে ৩৮ টাকা। কিন্তু যাত্রীরা ৩৫ টাকা বা ৩৬ টাকা ভাড়া দিচ্ছেন। মিরপুর সুপার লিংক বাসটি মিরপুর ১২ থেকে রোকেয়া সরণি, ধানমন্ডি ২৭ হয়ে আজিমপুরে যায়।

মিরপুর-১১, ১২ থেকে যারা উঠছেন তারা ঠিক ভাড়া দিচ্ছেন। কিন্তু যারা আগারগাঁও বা তার আগে থেকে উঠছেন তারা কম ভাড়া দিচ্ছেন। যাত্রীরা এখন ম্যাপ দেখে ভাড়া হিসাব করে দিচ্ছে বলে জানান বাপ্পী।

অনিক প্লাজা থেকে সদরঘাটের দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। সেখানে নির্ধারিত ভাড়া থেকে ৪৫ টাকা হলেও সদরঘাটের আগে যারা নামছেন তাদের কাছ থেকেও একই ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।

বিহঙ্গ পরিবহনের চালকের সহকারী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সদরঘাট পর্যন্ত ৯৫ পয়সা ভাড়া কমেছে। সেটা যাত্রীরা কীভাবে দেবে। যাত্রীরা ভাড়া কম দিতে চাচ্ছে।

তিনি বলেন, এবার ভাড়া নিয়ে একটু বেশি ঝামেলা হচ্ছে। যারা বোঝেন তারা ঠিক ভাড়া দিচ্ছেন। যারা বোঝেন না তারা ভাড়া কমেছে বলে বাসে ঝামেলা করছেন।
তার মতে, ভাড়া আরও বাড়ানো দরকার কেননা ৩৪ টাকা তেলের দাম বাড়ানোর পরে বাসভাড়া ৪-৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন আড়াই হাজার টাকার তেল বেশি লাগে। কিন্তু মালিক সারাদিনে এক হাজার টাকাও পান না।

মিরপুর থেকে উত্তরা, বাড্ডা, মহাখালীতেও বাড়তি ভাড়া নেওয়া অব্যাহত রয়েছে পরিবহনগুলোর। এক্ষেত্রে কম দূরত্বে গুনতে হচ্ছে বেশি ভাড়া।
মিরপুর-১২ থেকে মাটিকাটা ইসিবি পর্যন্ত চার কিলোমিটারে ১০ টাকা ভাড়া হয়। অথচ ওই রুটে চলাচলকারী বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে নিচ্ছেন ২৫ টাকা। ওয়েবিল নিষিদ্ধ হলেও সে অনুযায়ী ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে সরকারের বাসভাড়া সমন্বয়ের সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না যাত্রীরা। এক যাত্রী বলেন, সরকার আমাদের সঙ্গে মজা নিয়েছে। কোনো রুটেই ভাড়া কমেনি। এটা কীভাবে সমন্বয় হলো। সামান্য হলেও এতে আসলে পরিবহন মালিকদের সুবিধা হলো। যাত্রীদের কোনো উপকার হয়নি।

মতিঝিলগামী যাত্রী আসাদ রহমান বলেন, পাঁচ পয়সা কমানোর কোনো দরকার ছিল না। সময় নিয়ে আরও বড় অংকের টাকা কমানো দরকার ছিল। এই সিদ্ধান্তে গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা বাড়বে। আর বাড়ালে প্রকৃতপক্ষে কত বাড়ে এটা দেখার যেমন কেউ নাই, তেমনি কত পরিবহনগুলো কমালো সেটাও কেউ দেখছে না।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ২০১১ সালে একবার দুই পয়সা কমানো হয়েছিল বাসভাড়া। আবার ২০১৬ সালে তিন পয়সা কমানো হয়েছিল। সেটার প্রভাব সড়কে ছিল না। এবারও পাঁচ পয়সা কমানো হয়েছে। যেখানে এক টাকাই খুঁজে পাওয়া যায় না সেখানে পাঁচ পয়সা কমানো যাত্রীদের সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছু না।

এদিকে এমন অবস্থায় রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছে কিনা বিষয়টি দেখতে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ৬টি পয়েন্টে একযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এতে নেতৃত্ব দেন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তাকে সহযোগিতা করেন ২ জন করে বেঞ্চ সহকারী।

রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় বিকাশ চন্দ্র বর্মন, কলাবাগান এলাকায় ফিরোজা পারভীন, রায়েরবাগ এলাকায় তরিকুল ইসলাম, বনানী এলাকায় সাজিদ আনোয়ার, নটর ডেম কলেজের বিপরীতে খোশনুর রুবাইয়াৎ এবং সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় জুবের আলম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। তারা সবাই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার।

কলাবাগান এলাকায় বিআরটিএ পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত-৪ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভিন বলেন, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয়েছে এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে রুট পারমিট না থাকাসহ অন্যান্য অভিযোগে ৪টি মামলায় ৪টি বাস থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হয়েছে।

পাঁচ টাকা বেশি ভাড়া নেওয়ায় ৬ হাজার টাকা জরিমানা : কারওয়ান বাজার থেকে শেওড়া পর্যন্ত ২০ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা নেওয়ায় ৩ নম্বর পরিবহনের একটি বাসকে ৬ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া নতুন নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা না থাকায় ট্রাস্ট পরিবহনের একটি বাসের চালককে আট হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বনানী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এই জরিমানা করা হয়। বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার এই জরিমানা করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই রাজধানীর বনানী রেলওয়ে স্টেশনের সামনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসে। বিভিন্ন বাস থামিয়ে বাসে উঠে যাত্রীদের সঙ্গে বাস ভাড়া কমানোর বিষয়ে জানতে চান তিনি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৩ নম্বর পরিবহনের একটি বাস থামানোর নির্দেশ দিয়ে বাসটিতে উঠেন সাজিদ আনোয়ার। বাসে উঠে ম্যাজিস্ট্রেট কয়েকজন যাত্রীর কাছে বাস ভাড়ার বিষয়ে জানতে চান। এসময় আমিনুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ারের কাছে বাস ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেন। আমিনুল ইসলাম নামের ঐ যাত্রী বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে শেওড়া যাচ্ছি। সুপারভাইজার ২৫ টাকা ভাড়া নিয়েছেন।

পরে নতুন নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা মিলিয়ে এ দূরত্বে ২০ টাকা ভাড়া দেখতে পান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার বাসের সুপারভাইজারকে প্রশ্ন করলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এতে তিনি ৬ হাজার টাকা জরিমানা করেন বাসটির চালককে।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার বলেন, নতুন বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কিলোমিটারে দুই টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারিত নতুন ভাড়া পরিবহনগুলো নিচ্ছে কিনা, সেটি তদারকি করতে সকাল থেকে বনানী এলাকায় আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। যেসব বাসের বিরুদ্ধে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এবং সেটির সত্যতা মিলছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ৩ নম্বর পরিবহনের বাসটি নির্ধারিত ভাড়া থেকে যাত্রীপ্রতি পাঁচ টাকা করে বেশি ভাড়া নিচ্ছিল। সেজন্য আইন অনুযায়ী বাসটিকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এদিকে, নতুন নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করার বিষয়ে নিয়মিত তদারকি অব্যাহত থাকবে। কোনো অনিয়ম পেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads