• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
শিশু সুরক্ষায় সামাজিক দায়িত্ব

পারিবারিক সামাজিক রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনো শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি

ছবি : ইন্টারনেট

মতামত

শিশু সুরক্ষায় সামাজিক দায়িত্ব

  • মাহমুদুল হক আনসারী
  • প্রকাশিত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শিশুবান্ধব পরিবেশের জন্য সামাজিক দায়িত্ব-কর্তব্য বলার অপেক্ষা রাখে না। শিশু অবুঝ। ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা তার নেই। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপটে শিশুর সুরক্ষা, নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখনো শিশুবান্ধব হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। পারিবারিক সামাজিক রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনো শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে খুব বেশি পরিবারে শিশুর প্রতি স্নেহ মায়া মমতা নিশ্চিত করা যায় না। একটি শিশুকে পারিবারিক সামাজিক শিক্ষাদীক্ষায় নৈতিকতায় যেভাবে গড়ে তোলার কথা তা কিন্তু পরিবার ও সমাজ করতে পারেনি। অর্থনৈতিক সামাজিক নানা সমস্যায় রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা থাকলেও আর্থ-সামাজিক জটিলতায় তা করা সম্ভব হয়নি। ফলে শিশুরা পরিবার ও বিদ্যালয়ে সামাজিকভাবে অবহেলায় বেড়ে উঠছে। শিক্ষায় শিশুদের যেভাবে উন্নতি অগ্রগতি হওয়ার কথা, সমাজ তা দেখছে না। স্কুলে কোমলমতি শিশুদের জন্য শিক্ষার নামে যেসব বই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেসব শিশুবান্ধব বলে মনে হয় না। শিশুবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী বিশ্লেষকরা এসব শিক্ষার কঠোর সমালোচনা করছেন। একটি শিশু তার সামর্থ্যের মধ্যে সিলেবাস ও বইপুস্তক অনুযায়ী যেটুকু দেওয়ার কথা, তার চেয়েও অনেকগুণ বেশি শিক্ষার নামে তাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। এক এক বিদ্যালয় ভিন্ন ভিন্ন নীতিতে শিশুর সিলেবাস তৈরি ও বাস্তবায়ন করছে। মাতৃভাষা, বিদেশি ভাষা, ধর্মীয় শিক্ষা, আরো কত প্রকারের নানা রঙের বই দিয়ে তাদের শিক্ষার সুপ্ত প্রতিভা বিঘ্নিত করা হচ্ছে। ক্লাস-পরবর্তী কোচিংসহ একটি শিশু দিনরাত বিশ্রামহীনভাবে শিক্ষার নামে ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটায়। অভিভাবক পরিবার সমাজ শিক্ষার নামে শিশুদের অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তার প্রতিভা বিকাশবিরোধী অন্যায় চাপে রেখেছে। এ তো গেল শিক্ষার মাধ্যমে শিশুর ওপর চাপ প্রসঙ্গে। যাদের শিক্ষা গ্রহণের মতো পারিবারিক সামাজিক রাষ্ট্রীয় সুযোগ নেই এমন হাজার হাজার শিশু দেশের অজপাড়াগাঁ এবং শহরেও দেখতে পাওয়া যায়। পরিবারের অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে না পেরে তাদের অনিরাপদ ঝুঁকিপূর্ণ কায়িক শ্রম ও কাজে ব্যবহার করা হয়। অনেক শিশু পরিবার ও ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাদের জন্য শিশু মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মসূচি আছে তা যথেষ্ট নয়। তাদের নিরাপদ জীবন ও শিক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে কর্তব্য ছিল, সেভাবে দায়িত্ব পালন হচ্ছে না। সামাজিকভাবে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সারা দেশে শিশুদের জন্য কাজ করলেও সেখানেও সমাজ লাভবান হচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠান শিশুদের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গাইড অনুসরণ করে না। তাদের লেখাপড়া স্বাস্থ্য পরিবেশ কোনোটাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদর্শিক শিশু মানদণ্ডে পড়ে না। এর জন্য সমাজ ও রাষ্ট্র সমানভাবে দায়ী। আমাদের কথা অনেক হয়, পরামর্শ সিদ্ধান্ত অনেক কিছু অনেক জায়গায় হচ্ছে; কিন্তু বাস্তবে কয়টি সিদ্ধান্ত, কয়টি পরামর্শ আমরা বাস্তবায়ন করছি? অনেক সময় শিশুরা সমাজের নানা অসঙ্গতি দেখে তা তারা সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করতেও পিছপা হচ্ছে না। কিন্তু তাদের প্রতিবাদকেও আমরা অনেকেই সহ্য করতে পারি না। ভালো-মন্দ যা দেখছে তারা তা বলতে চেষ্টা করে সমাজের কাছে। কিন্তু সমাজ তা শুনতে চায় না। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে কিছু মানুষ নানাভাবে সমাজকে কলুষিত করছে। দুর্নীতি, মাদকের ব্যবহার ও বিপণন আশংকাজনক হারে বেড়ে চলেছে। নানা অভাব ও সমস্যার কারণে অনেক শিশুকে শিশুশ্রম বিনিয়োগ করে জীবন নির্বাহ করতে হয়। সকাল-বিকাল রাস্তায় বের হলে দেখা যায় অসংখ্য শিশু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অথবা পরিবহন, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, বিভিন্ন কলকারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। তাদের আয়ে তার এবং পরিবারের খরচ নির্বাহ হয়। ফলে শিশুরাই ওইসব পরিবারের উপার্জনকারী। অবশ্যই এসব শিশুর জন্য সমাজ ও রাষ্ট্র প্রণীত আইনকানুন বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা চাই শিশুদের জন্য আগামী দিন যেন আরো সুন্দর ও নিরাপদ হয়। শিক্ষার নামে তারা যেন কঠিন চাপের সম্মুখীন না হয়। হাসিখুশিতে হয় যেন তাদের শিক্ষা এবং বেড়ে ওঠা। শিক্ষার নামে সব চাপ, জবরদস্তি বন্ধ করতে হবে। শিশুশ্রমকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে করতে হবে। ঘর থেকে সবক্ষেত্রে শিশুর জীবন যেন নিরাপদ ও আশ্রয়পূর্ণ হয়, সেভাবেই সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সবধরনের মাদকাসক্তি, অপরাধ থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। অন্যায়, অপকর্ম, দুর্নীতি, ঘুষ- এ ধরনের গর্হিত কোনো কাজ যেন তাদের সামনে করা না হয়। অন্যায় অবৈধ লেনদেন ও উপার্জনের ইচ্ছা ও আগ্রহ থেকে তাদের চিন্তা-চেতনাকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। আসুন, আগামী দিনের সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যাশায় শিশুবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসি।

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads