• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

আসন্ন নির্বাচন : শঙ্কা না আনন্দের

  • আ.ব.ম রবিউল ইসলাম
  • প্রকাশিত ১৭ নভেম্বর ২০১৮

আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আশা-নিরাশার দোলাচলে দিন কাটছে আমাদের। রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহে কখনো আশা জাগছে, কখনো নিরাশায় আচ্ছাদিত হতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি, কথোপকথন বন্ধ ছিল। যেটি জনগণ ভালো চোখে দেখেনি। অবশেষে খোদ গণভবনে বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারপ্রধানের সংলাপ হয়েছে, যেটি কেউই মনে হয় ভাবতে পারেননি। অনেকে অবাকই হয়েছেন। যেটি দেখে মানুষ আশায় বুক বেঁধেছে।

বলা যায় উভয় পক্ষই শান্ত মেজাজে, শান্ত পরিবেশে সংলাপ করেছে। ‘সংলাপ ব্যর্থ হয়েছে’ এমন কথা কোনো পক্ষই বলেনি। আবার এখন পর্যন্ত কঠোর কোনো কর্মসূচিতে বিরোধী দল যায়নি, সেটি ভালো খবর। সবচেয়ে যেটি উল্লেখ করার মতো, এবার বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা কোনো শর্ত ছাড়াই সংলাপ হয়েছে। সম্ভবত এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটিই প্রথম, যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সংলাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে, জ্বালাও-পোড়াও বা সহিংস রাজনীতি দিয়ে মানুষের মন জয় করা যাবে না। সাধারণ মানুষও তা চায় না। প্রতিটি দলে কিছু উগ্র নেতাকর্মী থাকে, যাদের চাপ থাকে দলের প্রধানের কাছে উগ্র কর্মসূচি দেওয়ার জন্য। শুভ দিকটা হলো, অনেক ঝগড়াঝাটি করার পর রাজনৈতিক দলগুলোর শুভ উপলব্ধি হয়েছে।

বহুল আলোচিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিরোধী দল এই নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত তেমন শক্ত কোনো মন্তব্য বা ‘তফসিল মানি না’ বলেনি। সরকারি দল ও তাদের মিত্র দল জাতীয় পার্টি ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল মেনে নিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে যাবে বলে জানিয়েছে। যদিও তাদের হাতে সময় খুব কম। আগামী নির্বাচনে যাওয়া বিএনপির জন্য যত না কঠিন, নির্বাচনে না যাওয়া তার চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে মনে হয়। কারণ তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৩ নভেম্বর। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই তাদের নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়তে হবে।

বিএনপিসহ তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশ নেবে, এখন ঘটে যাওয়া সংলাপে সরকারি দলের প্রতিশ্রুতিগুলো পালন করতে হবে। বিরোধী দলগুলোকে সমান অধিকারে সভা-সমাবেশ করতে দিতে হবে। কয়েকটি সমাবেশ করলেই সরকারের পতন হয় না, সেটি সরকারকে বুঝতে হবে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে সরকার যে আশ্বাস দিয়েছে, এটি রেকর্ড হিসেবে আছে, সরকারকে তা বুঝতে হবে। বিএনপিকেও বুঝতে হবে, সংলাপের লাভ-ক্ষতির বিষয়টি জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। আর সেটি নির্বাচন বর্জন বা প্রতিরোধ করে সম্ভব নয়; করতে হবে নির্বাচনে অংশ নিয়েই। অধিকাংশ মানুষ এবং বিএনপিরও অধিকাংশ নেতাকর্মী মনে করে গত সংসদ নির্বাচনের ট্রেনে না চড়ে তারা ভুল করেছিল।

এদেশের মানুষের কাছে নির্বাচন একটা উৎসব। পাঁচ বছর পর যে ক্ষণটি মানুষ পায়, তা জুতসই করে পালন করতে চায়। চায়ের টেবিলে ঝড় উঠবে, মিছিল-মিটিংয়ে এলাকা মুখরিত হবে। নারী-পুরুষ দল বেঁধে নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে আনন্দের মধ্যে কাজ করবে। এটিই মানুষ চায়। এদেশের সাধারণ মানুষের চাওয়া কোনোদিনই ব্যাপক ছিল না বা এখনো নেই। তারা চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটটি দেবে। একদিনের জন্য তারা স্বাধীন হতে চায়। ভোটের দিন যেন কোনো বিবাদ বা বিশৃঙ্খলা না হয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তারা যেন নিজের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোটটি দিতে পারে। এই চাওয়া নিশ্চয়ই ব্যাপক নয়।

তাছাড়া আসন্ন নির্বাচনে কয়েক লাখ জনবল নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন নির্বাচন পরিচালনার কাজে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও নির্বাচন কমিশনারকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের দিকটিও টেকসই হওয়া চাই, সেটি প্রশাসনকে বিবেচনায় আনতে হবে। মফস্বল পর্যায়ে মাত্র দু’এক ঘণ্টার যে প্রশিক্ষণ হয়, তা যথেষ্ট নয়।

সবশেষে সাহস করে যে কথাটি বলতে হয়, শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে, নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সে নির্বাচন যেন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়, শান্তিপূর্ণ হয়- সেই লক্ষ্যে আমাদের ভূমিকা রেখে যেতে হবে। আর সেই বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচনে যারাই বিজয়ী হোক না কেন, তারা যেন নির্বাচনের সময় জনগণের কাছে দেওয়া তাদের ওয়াদাবদ্ধ শপথের কথা মনে রাখেন। কারণ রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন, মানুষ পণ করে পণ ভেঙে ফেলে হাফ ছেড়ে বাঁচার জন্য, অতএব পণ না করাই ভালো। আমরা দৈনন্দিন জীবনে অহরহ পণ করছি স্বজনের কাছে, মানুষের কাছে, সৃষ্টিকর্তার কাছে। কিন্তু রক্ষা করছি কয়টিই বা? অনেক প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হয়ে নিজের পুত্র, কন্যা, ভাগ্নে— এদের ছাড়া কিছুই বোঝে না। সাধারণ মানুষকে, ত্যাগী কর্মীদের অনেকেই ভুলে যান। সেটি যেন না হয়, আমজনতার এটাই চাওয়া।

 

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads