• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

জয়তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

  • গোলাম কাদের
  • প্রকাশিত ০৬ জানুয়ারি ২০১৯

ব্যক্তিগত এক গল্প দিয়ে লেখাটা শুরু করি। প্রায় ২০ বছর আগের ঘটনা। এক সাংবাদিক বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠান। একই প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকতা করি। না গেলেই নয়। স্থান রাজারবাগ পুলিশ লাইনের উত্তর দিকে দ্বিতল ভবনে। চাইনিজ রেস্তোরাঁ। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে দাওয়াতে গেলাম। টেবিলে লোকে পরিপূর্ণ। দূর থেকে যাওয়া। দেরিই হয়ে গেল। কোনো রকমে একটি টেবিলে জায়গা পেলাম। মেয়ে আর আমি বসলাম। টেবিলের অন্য সদস্যরা একই পরিবারের প্রায় বেশ কয়েকজন। স্বামী-স্ত্রীসহ তাদের পোষ্যরা। সময়মতো খানা চলে এলো। খানা আসামাত্র স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বেহুঁশের মতো খাবারগুলো পরিবারের অন্য সদস্যদের প্লেটে তুলে দিতে লাগল। যতবারই খাবার আসে, তারা আগে দাঁড়িয়ে নিজেদের পোষ্যদের প্লেটে খাবার দিতে থাকে। মেয়ের কাছে লজ্জায় পড়ে গেলাম। কোনো রকমে কায়দা করে তার প্লেটে দু-এক টুকরো মাংস এবং রাইস ভেজিটেবল দিতে পারলাম। যেহেতু আমার প্লেটে খাবার নাই, মেয়েও ইতস্তত করছিল খাবার নিয়ে। আমি তাকে খাবার খেতে বলায় মৃদু হাত সঞ্চালনে সে খাচ্ছিল।

ইতোমধ্যে বুভুক্ষু ওই পরিবারের খাবার শেষ। খেয়ে শীতে তারা ঘামছিল, যেন তারা একটি যুদ্ধ জয় করে ফেলেছে। পরক্ষণেই স্বামী-স্ত্রীর বোধ উদয় হলো। তাদের খাদ্যযুদ্ধে আমরা বঞ্চিত, লজ্জায় তারা লাল হয়ে গেলেন। স্বামীপ্রবর ব্যক্তিটি ‘সরি’ বলে বললেন, আরে ওনারা তো আমাদের জন্য খেতেই পারেননি। যারা সার্ভ করছিল, তাদের হাঁকডাক দিয়ে ডেকে এনে আমাদের খাবার দিতে বললেন। শেষ মুহূর্তে কি খাবার আর তেমন থাকে! তবু তাদের তদারকিতে, জোরাজুরিতে যেটুকু জুটল খেলাম। আমি লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম মেয়ের কাছে। সভ্য মানুষ এভাবে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে কি খেতে পারে? যতই ক্ষুধার্ত থাকুক। ভব্যতা বলে কিছু তো থাকার কথা! তাও আবার একটি অনুষ্ঠানে।

আমার বন্ধুর দাওয়াত খাওয়ার এ স্মৃতিটি কেন জানি আজো নাড়া দেয় মানুষের ভব্যতার ব্যত্যয় দেখলে। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখে কেন জানি ২০ বছর আগের ওই পরিবারের সঙ্গে দাওয়াত খাওয়ার কথা মনে পড়ে গেল।

অবাক বিজয়

একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়ে গেল। আওয়ামী লীগের জয়-জয়কার। অবাক বিজয় পেয়ে নেতাকর্মীরা উৎফুল্ল। ফুরফুরে মেজাজ তাদের। প্রায় বিরোধীশূন্য এ বিজয় সারা দেশে হঠাৎ স্তব্ধতা এনে দিয়েছে। বিরোধীশূন্য এজন্যই বললাম, কেউ পেয়েছে চার লাখ ভোট, তার বিপরীতে পড়ে ৪৩ ভোট। অবাক বিজয় নিয়ে আওয়ামী লীগও ভেতরে ভেতরে অবাক বিস্ময় প্রকাশ করেছে। ’৭০-এর নির্বাচনের মতোই বাঙালি জেগে উঠেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ভাবনায়। এ বিজয়ে আনন্দ মিছিল না করার কথা বললেও কে কার কথা শোনে। কিছু অতিউৎসাহী লোক তো থাকেই— যেমন সুবর্ণচরে ঘটে গেল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে গণধর্ষণের মতো ঘটনা। দলের সাধারণ সম্পাদক বলে দিয়েছেন কাউকেই এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হবে না। এ ঘটনার পর জনমনে শঙ্কা বেড়ে গেছে। এর উপযুক্ত বিচার না করতে পারলে ক্যাডারদের উত্থান ঠেকানো যাবে না এবং এর ফলাফল ভালোর দিকে যাবে না।

মহাজোটের ২৮৮ আসন, বিএনপির ১৫২ প্রার্থীর জামানত হারানো এবং হিরো আলমের মতো স্বতন্ত্র নিরীহ গো-বেচারার ঘরবাড়ি ভাঙচুর এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ভোট ব্যবধান। এত বড় একটি নির্বাচন, সিইসির বক্তব্য সামান্য ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া সব ঠিকঠাক মতোই হয়েছে। তারা তাদের ভাষায় সাফল্যের সঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পেরে গর্বিত।

গর্বিত বর্তমান সরকারও। তারা একটি নির্বাচন সমাপ্ত করতে পেরেছেন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য শপথ নেওয়া মন্ত্রিসভা গঠন হয়ে গেলেই ইশতেহার অনুযায়ী কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া। সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হবে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবেলা করা, মেগা প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুততার সঙ্গে সমাপ্ত করে নতুন ইশতেহার অনুযায়ী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, ‘জনগণের প্রতি দায়িত্বটা আরো বেড়ে গেছে’। এ দায়িত্ববোধ শুধু প্রধানমন্ত্রী অনুভব করলেই চলবে না, দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীর ভেতর থাকতে হবে। তবেই এ বিজয় ধরে রাখতে পারবেন।

এ নিরঙ্কুশ বিজয়ে আত্মতৃপ্তির কোনো কারণ নেই। বিরোধী জোট, দল এখনো সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো বিদ্যমান, দৃশ্যমান। সবদিকে নজর রেখে জনকল্যাণে, জনসমর্থনে দেশ চালাতে হবে। কল্যাণ রাষ্ট্রের উপকরণ বিদ্যমান দেশে। তাকে দৃশ্যমান করতে হবে সবদিক দিয়ে এবং এসব কাজে মানবিকতা তো অবশ্যই থাকতে হবে। না হয় এ বিজয় ধরে রাখা যাবে না, হোঁচট খেতে হবে নানাভাবে।

দেশ, সমাজে মানবিকতার পারদ অনেকটাই নেমে গেছে। এ পারদ উপরের দিক তোলার দায়িত্ব হবে নতুন সরকারের। সমাজের নানা শঙ্কা, সন্ত্রাস, গুম, খুন, হত্যা, নারী নির্যাতন বন্ধ হবে নতুন বছরে। নতুন সরকারের উদ্যোগে এটাই আশা করে জনগণ।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারত, চীন, নেপাল, সৌদি আরব, কাতার, রাশিয়া এবং অভিনন্দনের আরো পালক উড়ে আসছে প্রধানমন্ত্রীর মুকুটে।

নতুন বছর চমক দিয়ে শুরু হয়েছে। মন্ত্রিসভায়ও চমক। জনগণের প্রতি দায়িত্ব বেড়ে গেছে— প্রধানমন্ত্রীর এ আপ্তবাক্য এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ যার যার যা দায়িত্ব গুরুত্বসহকারে পালন করতে হবে। সঠিক পন্থা অনুসরণ না করা হলে যে কোনো সময়, যে কোনো উছিলায় সুপ্ত আগ্নেয়গিরি জেগে উঠবে। তখন কাচের ঘরে বসবাসের মতো বাস হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এখন জনগণের কল্যাণের জন্য সুযোগ-সন্ধানীদের, সুবিধাবাদীদের বেশি খেয়াল রাখতে হবে। কোনো ত্রুটি, বিচ্যুতি, ভুলের জন্য যাতে বড় রকমের খেসারত দিতে না হয়। মানুষের জীবন তো ভুলে ভরা। ভুলগুলো এখন ফুল হয়ে ওঠার পালা।

জয়তু শেখ হাসিনা

এ জয়ে মোদি, পুতিন, সালমান, সোনিয়া গান্ধীসহ বিশ্বনেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন। তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী এবং নতুন ভিশন নিয়ে এগিয়ে যাওয়াকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র নিয়ে। বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশ এখন বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে দেখছে। খোদ পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে এখন মডেল হিসেবে বিবেচনা করে।

শুধু উন্নয়ন নয়, এখন গণতন্ত্রের বিকাশের ধারাও অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাধীনতার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এই ধারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাবে। ভিন্ন মতের, পথের লোককে শ্রদ্ধা করতে হবে। এই যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়ে গেল— এই উদাহরণ সঠিক পথে ধরে রাখতে হবে। শুধু উন্নয়ন, গণতন্ত্রই নয়- এ সরকারের আমলে পররাষ্ট্র বিষয়ে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের ভালো বন্ধুরা একত্রিত হয়ে আমাদের নানা বিষয়ে সমর্থন দেবে, সমর্থন আদায় করবে— যাত্রা ভালোভাবে এগোবে এবং এগুচ্ছে।

দেশের ভেতরে এবং বহির্বিশ্বে প্রধানমন্ত্রীর অকৃত্রিম বন্ধুর সংখ্যা বাড়াতে হবে। চাটুকার ও সুবিধাভোগীদের দিকে নজর রাখতে হবে, না হয় এ অবাক বিজয় ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। এ বিজয়ে প্রধানমন্ত্রীই শুধু নন, আওয়ামী লীগের মনোবল দৃঢ় হয়েছে। অত্যাচার, নির্যাতন দিয়ে কিছুই হয় না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এখন জনগণ চায় ভালোবাসা। প্রধানমন্ত্রী, আপনি কল্যাণ মিত্রকে অনুসরণ করুন। জয়তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

লেখক : সাংবাদিক ও বিশ্লেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads